পেট্রাপোল: বাংলাদেশে অশান্তির আবহে বন্ধ হয়েছিল বাণিজ্যিক আদান-প্রদান। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য থমকে গিয়েছিল সোমবারই। বুধবারও তা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বুধবারও পণ্য পরিবহণ হল না। আটকে থাকা ট্রাকগুলিকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে ৭২৪টি ভারতীয় ট্রাক আটকে আছে। যে ট্রাকগুলি আটকে আছে সেগুলিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এদিন। তবে, নতুন করে পণ্য পরিবহণ শুরু হয়নি। আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে পণ্য পরিবহণ শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা এবং মালদার মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু হল পণ্য পরিবহণ।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের গেট এ দিনও পণ্য পরিবহণের জন্য বন্ধই রইল। সমস্যায় পড়েছেন মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অটো চালক, বেসরকারি বাস কর্মচারী, কুলি থেকে শুরু করে পেট্রাপোলের দিনমজুর শ্রমিকরা। প্রায় বন্ধ বলা চলে যাত্রী পারাপারও। আগে বাংলাদেশের টাকার মূল্য ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে সেটি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এক মুদ্রা বিনিময়ে ব্যবসায়ী বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘সারা বছর আমাদের বাংলাদেশে যাত্রীদের উপর নির্ভর করতে হয়। সেদিকে তাকিয়ে যাত্রী নেই বলাই চলে। কাউন্টার খুলে বসে আছি।’
এক বেসরকারি আন্তর্জাতিক বাসের কর্মী প্রদীপ হালদার জানিয়েছেন, যেহেতু যাত্রীরা আসছেন না বাস পরিষেবা বন্ধের মুখে। গতকাল কয়েকটি যাত্রী নিয়ে বাস চললেও আজ কোনও বাসের চাকা গড়ায়নি। একইসঙ্গে ভোগান্তিতে কুলিরাও। তাঁদের বক্তব্য, অভাবের সংসার তার মধ্যে এই অবস্থা। ১৫দিন ধরে বসে আছি। আমাদের সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক যাত্রীদের উপর।
অন্যদিকে, মালদা জেলার মহদিপুর সীমান্তে মঙ্গলবার রাত অবধি ৬৪টা গাড়ি বাংলাদেশে খালি হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। এখনও ১৬৫টি গাড়ি বাংলাদেশে রয়েছে। তবে বুধবার দিনও কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ছিল মহদিপুর স্থলবন্দর। বিএসএফের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ রয়েছে। এদিন বেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহদিপুরের জিরো পয়েন্টে দু’দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরেই আমদানি-রপ্তানি শুরু করা হয় বলে জানান মহদিপুর কাস্টম আধিকারিক দেশদুলাল চট্টোপাধ্যায়।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। দু’দিন বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হয়। বুধবার পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রওনা দেয়। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকেও বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে ঢুকতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র চ্যাংড়াবান্ধায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।