Petrapoleপ্রাণ বাঁচাতে হোটেলের ৪ তলা থেকে ঝাঁপ ভারতীয় যুবকের, দুটি ভাঙা পা নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে পোঁছাল দুই ভাই: দেখুন ভিডিও

0
301

 

পার্থ সারথি নন্দী, অর্পিতা বনিক

পেট্রাপোল: ব্যবসার কাজে  বাংলাদেশ গিয়েছিলেন অসমের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই শাহিদ আলি। তখনও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটা তপ্ত হয়নি। দুজনে যশোরের একটি হোটেলে উঠেছিলেন। সোমবার বিকেলে তাঁদের হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন শাহিদ। মঙ্গলবার দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে  দেশে ফেরেন তাঁরা। দুটি পা ভেঙেছে শাহিদের। দেখুন ভিডিও

তাঁরা জানাচ্ছেন, যশোরের একটি হোটেলের ১২ তলায় তাঁরা ছিলেন। সোমবার দুপুরে তাঁরা হোটেলের বাইরে কিছু আওয়াজ শুনতে পান। সেই সময় তাঁরা জানালা খুলে দেখেন আন্দোলনকারীরা গোটা হোটেল ঘিরে ফেলেছেন। এরপর প্রাণের ভয়ে তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে যান। কিন্তু, বুঝতে পারেন হোটেলের নীচে আগুন ধরানো হয়েছে। এরপর চারতলা থেকে পার্শ্ববর্তী একটি বিল্ডিংয়ে গিয়ে নীচে ঝাঁপ দেয় দুই ভাই। শাহিদের দুই পা ভেঙেছে। আঘাত লেগেছে তাঁর পিঠেও। অন্যদিকে, রবিউলের দেহেও রয়েছে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন।

মঙ্গলবার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেশে ফেরেন তাঁরা। ভারতে পা রেখেও ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না এই দুই ভাই। রবিউল বলেন, ‘জীবনে এই ধরনের কোনও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, তা ভাবতেও পারিনি। এখনও হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমার শরীরের একাধিক অংশ পুড়ে গিয়েছে।’ অন্যদিকে, শাহিদের দুটি পা ভেঙে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকা ছাড়েন তিনি। তারপর থেকেই দফায় দফায় তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশ। একাধিক হোটেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে খবর। বেসরকারি সূত্রে খবর, রাত পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১০৯ জনের। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জানিয়েছিলেন, সেখানে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গড়া হবে। তার রূপরেখা কী হতে চলেছে তা নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধান বৈঠক করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সদস্যের একটি দল। এ দিনের বৈঠকের পরেই অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের রূপরেখা অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ। অবাধে চলছে খুন-লুঠতরাজ। এই পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় ‘নাইট ভিশন’ ক্যামেরা নিয়ে সোমবার সারা রাত পাহারারত বিএসএফ। সোমবার দুপুরের পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সতর্ক রয়েছে বিএসএফ। মঙ্গলবার, উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত পরিদর্শনে আসেন বিএসএফ-এর ডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরী। সূত্রের খবর, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন ডিজি।

চোখে জল,মনে আতঙ্ক নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের কচুয়াবাগেরহাট এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সাহা! তিনি জানান,সে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে । তাই প্রাণের ভয়ে ভারতে কয়েক দিনের ভিসা নিয়ে চলে এসেছেন ভারতে । ভিসা -র মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও ফিরতে চান না দেশে । প্রয়োজনে ভারতের জেলে থাকতেও রাজি বলে জানান তিনি I

এদিকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া। তবে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ভারত থেকে পিঁয়াজ, লঙ্কা সহ খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশে রপ্তানি করা হলেও, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আমদানি করা হয় চট, জামা-কাপড়, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিকের আইটেম, রান্নার তেল, ঝাড়ু। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে যায় পণ্য আদান-প্রদান।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা পণ্যের ক্ষেত্রে তেমনভাবে প্রভাব না পড়লেও, ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে বলেই আশঙ্কা করছেন পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং বিভাগের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী। ওপার বাংলায় অস্থির পরিস্থিতির কারণে এপার বাংলার সীমান্ত এলাকায় ব্যবসাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ইতিমধ্যে । যাত্রী পরিবহণ বন্ধ থাকায় অটো ও ছোট গাড়িগুলিতে কোনও ভাড়া হচ্ছে না। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলিও প্রায় জনশূন্য। বাংলাদেশে এখনও আটকে বহু ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও খালাসিরা। পেট্রাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ৩৫৬ জন ভারতীয় ট্রাক চালক ও খালাসি বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে । সীমান্ত জারি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টহল দিচ্ছে বিএসএফ জওয়ান ।

বিধ্বংসী আন্দোলনের মুখে সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তারপরেও জ্বলছে বাংলাদেশ। ১৩টি থানা ও দুটি কারাগারে হামলা চালিয়ে একাধিক বন্দিকে মুক্ত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এদের মধ্যে রয়েছে জামাতের সদস্য থেকে ইসলামিক ছাত্র শিবিরের সদস্যরা। এতেই আশঙ্কার প্রহর গুনছে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। কারণ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে জামাত ও ইসলামিক ছাত্র শিবিরের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা আবার মুক্তি পেয়ে একই কাজে লিপ্ত হতে পারে বলে বিএসএফের আশঙ্কা।

তাই বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্তে চলছে কড়া নজরদারি। বিশেষ করে যে এলাকায় কাঁটাতার নেই, সেই অংশে নাইট ভিশন ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বিএসএফ জওয়ানরা।

দক্ষিণবঙ্গের ঘোজাডাঙা, বনগাঁর পেট্রাপোলের পাশাপাশি উত্তরের মহদিপুর, হিলি, ফুলবাড়ি, চ্যাঙরাবান্ধায় বিশেষ নজরদারি চলছে।  দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থল সীমান্ত রয়েছে ৯১৩.৩২৪ কিমি এবং জলসীমান্ত রয়েছে ৩৬৩.৯৩০ কিমি। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থলসীমান্ত রয়েছে ৯৩৬.৭০৩ কিমি। দক্ষিণবঙ্গে প্রায় ৫৩৮ কিমি এবং উত্তরবঙ্গে ৩৭৫ কিমি অংশে কোনও কাঁটাতার নেই। এই অংশটি নিয়েই চিন্তিত বিএসএফ।

Previous articleKhuti Puja:শিলিন্দা বিবেকানন্দ সংঘ ও পাঠাগার এর কালীপুজো থিম প্রকাশিত হল খুঁটি পুজোয়
Next articleBangladesh News:নোবেলজয়ী ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার প্রস্তাবে সায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির,অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ আজই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here