পহেলগাম সন্ত্রাসের পর নয়াদিল্লি কড়া দাওয়াই। সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাত শুরু হতেই উত্তপ্ত নিয়ন্ত্রণরেখা। সূত্রের খবর, রাত বাড়তেই নিয়ন্ত্রণরেখায় শুরু হেভি শেলিং। সীমান্তের ওপার থেকে শুরু গুলি বর্ষণ। তৎক্ষণাৎ জবাব ভারতীয় সেনা বাহিনীর। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রণরেখায় চলছে ভারত-পাক জোরদার গুলির লড়াই।
কোনওভাবেই এই সন্ত্রাস বরদাস্ত নয়। সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগের পাকিস্তানকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লির। এদেশে আসা পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ কৃটনীতিবিদদের দেশে ফেরত যাওয়ার নোটিস জারি করা হয়। পহেলগামে হামলার প্রতিবাদে জবাব দেওয়া শুরু হতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় শুরু হয়ে যায় সিজ় ফায়ার বলে খবর মেলে। তৎক্ষণাৎ জবাব দেয় নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন ভারতীয় সেনাও।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার।
কড়া হাতে জঙ্গি নিধনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। এবার পহেলগামের ঘটনায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টায় এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর পাশাপাশি সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সব মহলে।
এর আগে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ঘটিয়েছিল মোদী সরকার। তবে সে সময় কোনও সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়নি। বরং চুপিসারে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে খতম করেছিল জঙ্গিদের। যা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখেও পড়েছিল মোদী সরকার।
তবে এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন। পহেলগামে যেভাবে জঙ্গিরা হত্যালীলা চালিয়েছে, ২৬ জনকে (বেশিরভাগই পর্যটক) খুন করেছে, তাতে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। সব মহল থেকেই জঙ্গিদের কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠছে।
সেক্ষেত্রে সর্বদল বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিলে বিতর্কের অবকাশও থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এবারে জঙ্গি নিধনে কোনও বিতর্কের অবকাশ রাখতে চাইছে না সরকার। বরং জঙ্গি নিধনে সর্বদল বৈঠক থেকে দেশের একতা দেখানোরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ইতিমধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের পাশাপাশি আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।
যদিও জঙ্গি হামলার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। কিন্তু পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন এই হামলার পিছনে রয়েছে বলে ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে। গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে পাক সেনা ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই রয়েছে বলেও দাবি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জঙ্গি হামলার ঘটনায় সর্বদল বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সব মহলে।
অন্যদিকে ভারতের পদক্ষেপের জেরে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শেহবাজ শরিফ। ফলে ওই বৈঠকের দিকেও নজর থাকছে সব মহলের।
ভারতের পাকিস্তানকে বয়কট করার খবর ছড়াতেই প্রভাব পড়েছে সে দেশের অর্থনীতিতে বলে দাবি। ধস নেমেছে সে দেশের শেয়ার মার্কেটে। কূটনৈতিক উপায়ে পাকিস্তানকে মোক্ষম দাওয়াইয়ের পথেই হাঁটল কেন্দ্র। সিন্ধু জল-চুক্তি রদ-সহ পাঁচ দফা নির্দেশের পরই এ দেশে পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিবিদ সাদ আহমেদতে তলব করে কেন্দ্র। পাকিস্তানের চার্জে থাকা ডি অ্যাফেয়ার্স-র হাতে ইতিমধ্যেই ভারত ছাড়ার নোটিশ ধরিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, পহেলগামে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার বলি ২৬টি তরতাজা প্রাণ। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল পড়শি পাকিস্তানের দিকে। এই ঘটনায় সমস্ত দেশ নিন্দা করলেও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা আসিফ পাক যোগের তত্ত্ব খারিজ করেই হাত ঝেড়ে ফেলেছেন। এসব দেখেই এ বার চরম পদক্ষেপ নর্থ ব্লকের।