সঙ্গীতা চৌধুরী , কলকাতা : স্টার থিয়েটার ও গিরিশ চন্দ্র ঘোষের কথা উঠলেই চলে আসে আরও একটি নাম। মঞ্চে তখন তাঁর অভিনয় দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে বিনোদিনী দাসীকে নিয়ে। মঞ্চে তিনি পরিচিত নটী বিনোদিনী নামে।
‘বিনোদিনী : একটি নটীর উপাখ্যান’ এবার বড়পর্দায় আসছে। দীর্ঘ টানাপোড়েন কাটিয়ে ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে নতুন বছরে। বছরের প্রথম দিন ছবির একটি বিশেষ পোস্টার মুক্তি পায় হাতিবাগানের বিনোদিনী থিয়েটারে। বিনোদিনী রূপে ছবিতে ধরা দিতে চলেছেন অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র।
পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে এই ছবি তৈরির পরিকল্পনা প্রথম শুরু হয়। কিন্তু ছবির বাজেট বেশি হওয়ার কারণে বারে বারে হোঁচট খেতে হয়। নারীকেন্দ্রিক ছবিতে এত টাকা বিনিয়োগ করতে কেউ সহজে রাজী হতে চাইছিলেন না। ছবিটি ফ্লোরে আসার আগে কয়েকবার হাত বদলও হয়। শেষে দেব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অবশেষে দেব ও প্রতীক চক্রবর্তীর যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে। সেদিন রুক্মিনীর হাত ধরেই প্রকাশ্যে এল ধ্যানে বসা রামকৃষ্ণের ছবির পোস্টার। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন চন্দন রায় সান্যাল।
৩০ ডিসেম্বর স্টার থিয়েটারের নতুন নামকরণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন নাম হয়েছে বিনোদিনী থিয়েটার। প্রায় ১৪০ বছর আগে বিনোদিনীকে তাঁর প্রাপ্য সন্মান দেওয়া হয় নি, সেটাই আজ ফিরিয়ে দেওয়ায় আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন রামকমলের বিনোদিনী। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, ‘স্টার থিয়েটার তৈরির জন্য সে সময় ৫০,০০০টাকার বিনিময়ে গুরমুখ রায়ের কাছে বিনোদনী নিজেকে সমর্পণ করেন। কারণ তাঁর কাছে কোন পুঁজি ছিল না। তাঁকে কথা দেওয়া হয়েছিল নতুন থিয়েটারের নাম বি- থিয়েটার হবে। কিন্তু থিয়েটার তৈরির পর তাঁর গুরুদেব গিরিশচন্দ্র ঘোষসহ অনেকেই সে সময় বেঁকে বসেন। ছলনার আশ্রয় নেন। আজ এত বছর পর বিনোদিনীর সেই ইচ্ছে পূরণ হলো। এটা আসলে বাংলার নারীর জয়।’
ছবিতে গিরিশচন্দ্রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশিক গাঙ্গুলি। এই ছবিতে গিরীশ ঘোষকে বিনোদিনীর চোখ দিয়ে দেখানো হবে। রাঙাবাবুর চরিত্রে আছেন রাহুল বোস। আর বিনোদিনীর প্রেমিক কুমার বাহাদুরের চরিত্রে দেখা যাবে ওম সাহানিকে। গুরমুখ রায়ের চরিত্রে মীর। ছবির পরিচালক রামকমল বলেন, ‘ আমরা এই ছবির জন্য অনেক রিসার্চ করেছি। বিনোদিনীর জীবনের পুরোটাই ধরার চেষ্টা হয়েছে। সে সময়কার কিছু তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে আমরা যতটা সম্ভব দেখানোর চেষ্টা করেছি। এটাই আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের বাংলা ছবি।’ পরিচালকের দাবি, এই ঐতিহাসিক ছবিতে সৌরেন্দ্র- সৌম্যজিত দারুণভাবে পুরোনো ও সমসাময়িক সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই তাঁদের প্রথম কাজ।
নটী বিনোদিনী মানেই মনে পড়ে যায় ‘চৈতন্যলীলা’র কথা। চৈতন্য তথা নিমাইয়ের ভূমিকায় এক ও অদ্বিতীয় নটী বিনোদিনী। সালটা ১৮৮৪। ২ অগস্ট স্টার থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হল এই নাটক। নটী বিনোদিনীর অপূর্ব অভিনয় সেই সময় সকল দর্শককে মাতিয়ে দিয়েছিল। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত স্টার থিয়েটার মানেই ছিল চৈতন্যলীলা’ পালা। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ এসে ভিড় করত এই পালা দেখতে। এবার এই পালার পিছনের কাহিনিই ফুটে উঠবে বড়পর্দায়। এখন দেখার অপেক্ষা বিনোদিনীরূপে রুক্মিণী বড় পর্দায় কতটা দর্শকদের মন জয় করতে পারে !