Nobel Peace Prize 2025: নোবেল কমিটির ‘ট্রাম্প-কার্ড’, ডোনাল্ডকে না দিয়ে শান্তির মেডেল ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রের আয়রন লেডিকে , কে এই মারিয়া মাচাদো ?

0
87

গত বছর ভেনেজুয়েলার নির্বাচনে ব্যাপক ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে। ওই নির্বাচনের পর থেকে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন মারিয়া। তবে তাঁকে টাইম ম্যাগাজিন ২০২৫ সালের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় রেখেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন? গত কিছুদিন ধরেই এই নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন ভেনেজুয়েলার নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

তিনি ভেনেজুয়েলার আইরন লেডি হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তিনি। ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াইকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, এমনটাই জানিয়েছে নোবেল কমিটি। গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের জন্য তাঁকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হল।

দীর্ঘ লড়াইয়ের মুখ
নিকোলাস মাদুরোর শাসনের কঠোর সমালোচক মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছেন। অহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান আন্তর্জাতিক সমাজের মনোযোগ কেড়েছে। মানবাধিকার রক্ষা, মুক্ত নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক রূপান্তরের দাবিতে তিনি দেশ-বিদেশে সমর্থন গড়ে তুলেছেন।

১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর, ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে জন্ম মারিয়ার। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী হেনরিক মাচাদো জুলোয়াগা এবং মা মনোবিজ্ঞানী কোরিনা পারিস্কা। ছোট থেকেই বাস্তববাদী চিন্তাধারার মানুষ মারিয়া। আন্দ্রেস বেলো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কারাকাসের IESA থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর করেন। এই বাস্তব ও বিশ্লেষণধর্মী শিক্ষা পরে তাঁর রাজনৈতিক ভাবনাকেও বাস্তবমুখী করে তোলে।
‘সুমাতে’ থেকে রাজনীতির ময়দানে ২০০২ সালে মাচাদো সহ-প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুমাতে’ (Súmate)—একটি নাগরিক সংস্থা, যার লক্ষ্য ছিল দেশে মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকারের সুরক্ষা। সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। দ্রুতই তিনি ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্র রক্ষার মুখ হয়ে ওঠেন।
‘ভেন্তে ভেনেজুয়েলা’ নামের একটি উদারনৈতিক রাজনৈতিক দল, যার মন্ত্র হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাজারভিত্তিক উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা।

দু’দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে মাচাদো পেয়েছেন বারবার হুমকি, নিপীড়ন, এমনকি মামলা। মাদুরো সরকারের কঠোর দমননীতি ও সেনা-নিয়ন্ত্রিত রাজনীতির মাঝেও তিনি কখনও পিছিয়ে যাননি। ২০২৪ সালে তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে উঠে আসেন। কিন্তু মাদুরো সরকার তাঁর মনোনয়নই বাতিল করে দেয়।

তবু তিনি থামেননি। আর এক বিরোধী নেতা এডমুন্ডো গঞ্জালেস উর্রুতিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি গড়ে তোলেন এক বিশাল আন্দোলন। দেশজুড়ে লাখো স্বেচ্ছাসেবীকে একত্র করে নির্বাচনের সময় ভোটরক্ষীদের সংগঠিত করেন।

যখন মাদুরো প্রশাসন বিরোধীদের সম্ভাব্য জয় স্বীকার করতে অস্বীকার করে, তখন মাচাদো প্রকাশ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাচাই করা ভোটগণনার তথ্য প্রকাশ করেন। এই সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সমাজকে নাড়া দেয়।

আজ, সেই অনমনীয় মনোভাবেরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারে। তিনি বর্তমানে গোপনে বসবাস করছেন, কারণ মাদুরো সরকার তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। কিন্তু এই লুকিয়ে থাকা অবস্থাতেও তিনি ভেনেজুয়েলার লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা।
নোবেল কমিটির ভাষায়, “মারিয়া করিনা মাচাদো লাতিন আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষার অন্যতম সাহসী কণ্ঠ। তিনি প্রমাণ করেছেন, ণতন্ত্রের লড়াই বুলেট নয়, ব্যালটে জেতা যায়।”

আজ ভেনেজুয়েলায় কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য ও দমননীতির শিকার। প্রায় আশি লক্ষ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু মাচাদোর জেদ, বিশ্বাস আর শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ তাঁদের মনে এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে—যে আলো গণতন্ত্রের পথ দেখায়।

Previous articleED ফের সক্রিয় ইডি , দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর অফিস সহ কলকাতা জুড়ে ৬ জায়গায় চলছে তল্লাশি
Next articleDhanteras 2025: এইবছর ধনতেরাসে সোনা কেনার শুভ সময় কখন? এই বছর কত তারিখ পড়েছে? ধনতেরস কীভাবে পালন করলে সংসারে সমৃদ্ধি আসে? কী বলছেন শাস্ত্রজ্ঞ বাস্তুবিদ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here