ফিরল করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি। উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সোমবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়তেই দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ট্রেনটি। রাঙাপানির কাছে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় একটি মালগাড়ির। লাইনচ্যুত হয়ে যায় তিনটি কামরা। একটি কামরা দুমড়ে মুচড়ে উল্টে যায়। আরেকটি কামরা উঠে যায় ইঞ্জিনের উপরে। এই দুর্ঘটনার পরই প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল?
কুশল দাশগুপ্ত,নিউ জলপাইগুড়ি: উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনা। সোমবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পিছন থেকে ধাক্কা মারে মালগাড়ি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের আগে রাঙাপানিতে ঘটে দুর্ঘটনা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনের দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে এবং আহত অন্তত ৩০ জন । মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ দুমড়ে যাওয়া কামরার ভিতর থেকে আসছে গোঙানির শব্দ আহত বহু যাত্রী রয়েছে বলে জানা গেছে। চলছে উদ্ধারকাজ।
এই অবস্থায় পরিজনদের খবর না পেয়ে বিভিন্ন স্টেশনগুলিতে ভিড় বাড়াচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের আত্মীয়রা। তাঁদের সহায়তা করতে ইতিমধ্যে হেল্পলাইন নম্বর চালু হয়েছে বিভিন্ন স্টেশনে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনের পাশাপাশি শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশনেও চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছেড়ে রাঙাপানিতে পৌঁছতেই পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুটো বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে উল্টে যায়। দুমড়ে মুচড়ে যায় এক্সপ্রেসের কামরা। বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। প্রাথমিকভাবে এলাকাবাসীরাই উদ্ধারকাজে হাত লাগান।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মালগাড়িটি ওভারলোডেড ছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গতি ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার ছিল। মালগাড়িটিও যথেষ্ট গতি ছিল। এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ।
রেল সূত্রে খবর, সিগন্যালিং সিস্টেমে সমস্যার কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়।
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রাথমিক তদন্তে অনুমান সিগন্যালিংয়ের সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সিগন্যাল ফেল করেই মালগাড়িটি ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে।
মালগাড়ির ধাক্কায় ট্রেনের পার্সেল ভ্যান মালগাড়ির ইঞ্জিনের ছাদে উঠে যায়। পিছনের কামরাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
পুলিশের তরফে ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানালেও, রেলের তরফে এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। মৃতের সংখ্য়া আরও বাড়তে পারে। আহত বেশ কয়েকজন। ইতিমধ্য়েই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ১৫টি অ্যাম্বুল্যান্স।
রেলওয়ের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের খোঁজ-খবর পেতে তাঁদের পরিজনদের সহায়তা করতে হাওড়া, শিয়ালদহ-সহ কাটিহার, আলুবাড়ি, ডালখোলা, কিষাণগঞ্জ, সামসি, বারসোই-সহ বিভিন্ন স্টেশনে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নীচে হেল্পলাইন নম্বরগুলি দেওয়া হল –
শিয়ালদহ স্টেশন হেল্পলাইন নম্বর-
033-23508794, 033-23833326
https://x.com/AshwiniVaishnaw/status/1802568162669408307?t=wEoU1VrkREcKVRisU0r1Nw&s=19
হাওড়া স্টেশন হেল্পলাইন নম্বর-
03326413660, হাওড়া স্টেশন অনুসন্ধান অফিস নম্বর- 033-26402242, 033-26402243
নিউ বনগাইগাঁও স্টেশন এমার্জেন্সি নম্বর-
9435021417, 9287998179
আলুবাড়ি রোড এমার্জেন্সি নম্বর-
8170034235
কিষাণগঞ্জ এমার্জেন্সি নম্বর-
7542028020, 06456-226795
ডালখোলা এমার্জেন্সি নম্বর-
8170034228
বারসোই এমার্জেন্সি নম্বর-
7541806358
সামসি এমার্জেন্সি নম্বর-
03513-265690, 03513-265692
কাটিহার এমার্জেন্সি নম্বর-
09002041952, 9771441956
রেলওয়ের তরফে নির্দেশ থাকে, উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতাগামী যে ট্রেনগুলি থাকে, সেগুলিকেই মূলত গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে লাইন দিয়ে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেই লাইনে দেওয়া হয় অন্যান্য ট্রেন। আজকের দুর্ঘটনার পর প্রথম প্রশ্ন উঠছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা যাওয়ার সময় কীভাবে মালগাড়ি চলে এল? কীভাবে ওই ক্রসিং পয়েন্টে এসে মালগাড়ি ধাক্কা মারল, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সংযোগকারী রুট এটি। এই দুর্ঘটনার পর আপাতত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বন্ধ ট্রেন চলাচল। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেলের আধিকারিক ও উদ্ধারকারী দল। অ্যাম্বুল্যান্সে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সংযোগকারী রুট এটি। এই দুর্ঘটনার পর আপাতত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বন্ধ ট্রেন চলাচল। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেলের আধিকারিক ও উদ্ধারকারী দল। অ্যাম্বুল্যান্সে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।
দিল্লিতে কন্ট্রোলরুমে পৌঁছে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লিখেছেন, “এনএফআর জোনে দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। রেলওয়ে, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ মিলিতভাবে কাজ করছেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।”