টাকার বিনিময়ে পাস বিক্রির অভিযোগে সকাল থেকেই উত্তেজনা বাড়ছিল নেতাজি ইনডোরে ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের আগে তীব্র উত্তেজনা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। বৈঠকে ঢোকার গেট পাস নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা SSC-র শিক্ষকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, বৈঠকে ঢোকার জন্য পাস বিলি হয়েছে। কিন্তু সেই পাস তাঁরা পাননি। আবার অন্য একটি অংশ পাস নিয়ে পৌঁছে যান নেতাজি ইন্ডোরের সামনে। তাঁদের দাবি, তাঁরাই ‘যোগ্য’ শিক্ষক, তাই তাঁদের পাস ইস্যু করা হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নেতাজি ইন্ডোরের সামনে। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের সামনেই।
চাকরিহারাদের একাংশের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে গেট পাস বিক্রি করা হয়েছে। ‘যোগ্য’-দের বঞ্চিত করে ওই পাস দেওয়া হয়েছে ‘অযোগ্য’-দের। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে রবিবার রাত থেকে শহিদ মিনারের সামনে হাজির হন দূর-দুরান্তের চাকরিহারারা। বিনিদ্র রাত কেটেছে সকলের।রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ইন্ডোর চত্বর। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
সোমবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে সভা ডেকেছেন চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। ওই বৈঠকের পাস বিলিকে কেন্দ্র করেই সোমবার সকাল থেকে উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়। চাকরিহারাদের একাংশের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে পাসও বিক্রি করা হয়েছে। যোগ্যদের বঞ্চিত করে ওই পাস দেওয়া হয়েছে অযোগ্যদের।
প্রসঙ্গত, রবিরা শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকেও এ ব্যাপারে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন চাকরিহারাদের একাংশ । শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একজোট হয়ে রাস্তা বের করতে বললেন তাঁরা। নাহলে ২০২৬-এর নির্বাচন কেউ লড়তে পারবেন না বলে ‘সতর্ক’ করেছেন।
তাঁদের বক্তব্য, সব রাজনৈতিক দলগুলি এখন মরা-কান্না কাঁদছে! প্রত্যেকেই বলছে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায় মানতে পারছেন না। যোগ্যদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তাহলে সকলে একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুক।
চাকরিহারাদের হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের রাস্তা বের করে না দিলে বিধানসভা নির্বাচন কাউকে লড়তে দেব না। আমাদের লাশের ওপর দিয়ে নির্বাচন লড়তে হবে।’ তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের কাছে মৃত্যুদণ্ডের সমান। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যদি কেউ সমাধান না বের করতে পারে তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন তাঁদের লাশের ওপর দিয়ে হবে!
সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁরা মানতে পারছেন না কারণ শীর্ষ আদালত কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা তাঁদের বোধগম্য হয়নি। এমনটাই জানিয়েছেন চাকরিহারাদের একাংশ। এমনকী তাঁরা এও বলছেন, সিবিআই-এর তদন্ত রিপোর্ট শীর্ষ আদালত গ্রাহ্য করেনি। তাহলে কী লাভ হল সিবিআই তদন্ত করে? চাকরি বাতিলের পর এই প্রশ্ন তুলেই সরব চাকরিহারারা।
শীর্ষ আদালতের রায়কে ‘মান্যতা’ না দিয়ে তাঁদের বক্তব্য, মৃত্যুদণ্ড দিতে গেলে বছরের পর বছর বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু তাঁদের মামলায় সময় নিয়ে যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণের সময় হল না দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। অবশ্যই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হবে।
এ দিন সকাল থেকে নেতাজি ইন্ডোরের বাইরে যেভাবে পাস বিলি নিয়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে যোগ্য অযোগ্য বাছাই করে পাস বিলি করা হলো? নিজেদের ‘যোগ্য’ হিসেবে দাবি করা চাকরিহারাদের একাংশের অভিযোগ, বৈঠক বানচাল করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কোন পথে ‘যোগ্য’-‘অযোগ্য’ বাছাইয়ের পর্ব সম্পন্ন হয়, বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদের কী মানবিক বার্তা দেন, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।