অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: গত কয়েক দশকে রাজ্যের নানা প্রান্তে হারিয়ে গিয়েছে প্রায় ৬৮টি নদী। সুবর্ণমতী, সোনাই, চৈতি, চালুন্দিয়া, কোদালিয়া,পাগলা চণ্ডী, অঞ্জনা, সুরধনি, ব্রাহ্মণী, ডুমনি, চালতা, পাগলা, সরস্বতী, গাঙুর, নুনিয়া, ঘরঘরিয়া, যমুনেশ্বরীর মতো নদীগুলি হয় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত, না-হয় বিলুপ্তির পথে। তেমনই একটি নদী উত্তর২৪ পরগনার বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার নাওভাঙা৷
এক সময় এই নদীতে স্রোতে প্রায়ই নৌকা ভাঙতো মাঝিদের৷ তাই অচিরেই নদীর নাম হয়ে ওঠে নাওভাঙা৷
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছয়ঘরিয়ার মধ্যে প্রায় ১৪ কিলোমিটার লম্বা এই নাওভাঙা নদীতে এক সময় সারা বছরই জল থাকত। মাছ ধরে রুটি রুজি জোগাতেন মৎস্যজীবিরা। সে সব এখন অতীত। দেখুন ভিডিও :
পশ্চিমবঙ্গে বনগাঁর ভিড়ে গ্রামের কাঁটাখাল থেকে শুরু হয়েছে এই নদী। তারপর স্থানীয় হরিদাসপুর, নরহরিপুর, খলিতপুর, ছয়ঘরিয়ার মধ্যে দিয়ে পিরোজপুর-পেট্রাপোল বাঁওরে গিয়ে পড়েছে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা বালির খালের মাধ্যমে নাওভাঙা মিশেছে ইছামতী নদীর সঙ্গে।
এখন এই নদীর গভীরতা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই জমা জল বেরিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা উল্টে নদীর জল উপচে ঢুকে পড়ে চাষের জমিতে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, ‘‘শুধু প্রশাসনিক কর্তারা নন, রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও বহুবার নদী সংস্কারের তদ্বির করা হয়েছে। কিন্তু কারও নজর নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সে কাজ সম্পূর্ণ এগোয়নি। .
নদীর বেহাল দশায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। প্রতি বছর নিয়ম করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জলে ডুবে যায় হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি। জমা জল নামতে নামতে কেটে যায় আরও আড়াই-তিন মাস। সেই জমি চাষের উপযোগী হতে সময় লাগে আরও বেশ কিছু দিন। শুধু তাই নয়। বছরের পর বছর এই নিয়মে চলতে চলতে দু’ফসলি বা তিন ফসলি বহু জমিই এখন এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের।
বছর পঁচিশ আগেও নদীতে ঢেউ খেলত। জোয়ার-ভাটা বোঝা যেত। মৎস্যজীবীরা সেই জলে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। চাষিরা নদীর জল সেচের কাজে লাগাতেন। সন্ধ্যায় দূর থেকে ভেসে আসত মাঝিদের ভাটিয়ালি গানের সুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতেরও অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীটি। স্থানীয় মৎসজীবী প্রেম চাঁদ হালদার বলেন নদীর পূর্ণ সংস্কার করতে হবে এটাই আমাদের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে আমাদের দাবি৷
আজও বিজয়াদশমীতে আকাশে সন্ধ্যা তারা দেখা গেলেই উমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাওভাঙা নদীতে৷ শুরু হয় দেবীকে বিসর্জন দেওয়ার তোরজোড়৷
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং এক সদস্য পরিতোষ বিশ্বাস জানান দ্রুত নদী সংস্কার করা হবে সেই সঙ্গে নদীর তীরে গড়ে তোলা হবে এই নদীর কচুরিপানা দিয়ে ঠহস্ত শিল্প৷ যা আরও সমৃদ্ধ করবে বিভিন্ন স্বরনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরকে৷
প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আশায় আলো দেখছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী, চাষি থেকে স্থানীয় মানুষ ৷ এলাকার মানুষেরও বহু আবেগ জড়িয়ে এই নদীর সঙ্গে। খুশি তাঁরাও। সকলেই চাইছেন, নদী ফের স্রোতস্বিনী হয়ে উঠুক।