দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। আর এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদের দায়িত্বে মহম্মদ ইউনুস। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বর্তমানের বাংলাদেশের পরিস্থিতিও খুব একটা সুখকর নয়। এরই মধ্যে ইউনুসকে নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মহম্মদ ইউনুসের উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এই শুভেচ্ছাবার্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোদীর তরফে ইউনুসকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘নতুন বছরের জন্য শুভ কামনা রইল…’। হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার তিনদিনের মধ্যে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মহম্মদ ইউনুস। টালমাটাল সেই পরিস্থিতির মধ্যে নরেন্দ্র মোদীই ছিলেন বিশ্বের রাষ্ট্রনেতারদের মধ্যে প্রথম যিনি তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে ইউনুসকে তাঁর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে একদিকে যেমন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জেরবার হয়েছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে অবনতি হয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের। সরকারি স্তরে সম্পর্কের অবনতিতে দু’দেশের নাগরিকেরা জড়িয়ে যায় বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হাসিনার ভারতে থাকা নিয়েও বাংলাদেশ আপত্তি জানিয়েছে একাধিকবার। তবে নতুন বছরের শুরুতে মহম্মদ ইউনুসের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দুই দেশের সম্পর্কের মোড় ঘোরাতে পারে বলে অনুমান করছেন অনেকে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় বহু চর্চা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার পর যখন ইউনুস মোদীর থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছিলেন তখন তাঁর মাধ্যমেই তিনি স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন যে, ভারতীয় মিডিয়া কার্যত মিথ্যাচার করছে। যে পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে তা আদৌ নয়। হিংসার ঘটনা হলেও তা আগের থেকে অনেক কমেছে। ইউনুস এও জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বর মাসে ঢাকা সফরে যাওয়া ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি তাঁকে বলেছিলেন, হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া আর ভারত সরকারের বক্তব্য এক নয়।
এখন নতুন বছরে নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে মহম্মদ ইউনুস তথা তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তার দিকে তাকিয়ে ভারত-বাংলাদেশ দুই পক্ষই।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার কুর্সিতে বসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রথমবার ফোনে কথা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁদের দু’জনের এই ফোনালাপ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মনে করা হচ্ছে এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক এবং ভারত-মার্কিন সহযোগিতার পথ আরও সুদৃঢ় হবে।
সোমবার হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে মোদীর আমেরিকা সফরের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার দু’জনের মধ্যে প্রথমবার ফোনে কথা হয়। শপথ নেওয়ার পর বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমার প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে আনন্দিত। তাঁর ঐতিহাসিক দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য অভিনন্দন জানাই। পারস্পরিক উন্নয়ন এবং বিশ্বস্ত অংশীদারিত্বের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের জনগণের কল্যাণে এবং বিশ্বে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য একযোগে কাজ করব আমরা।”
https://x.com/narendramodi/status/1883882348439089490?t=LUjHBJkF7ZntVI-9yh4B1g&s=19
ট্রাম্প ও মোদীর ফোনালাপ সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোনালাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। দুই রাষ্ট্রনেতা পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর ও সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমেরিকায় তৈরি নিরাপত্তা সরঞ্জাম ক্রয় বৃদ্ধির জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও গুরুত্ব দিয়েছেন।”
শুধু তাই নয়, ট্রাম্প-মোদীর মধ্যে নাকি ইন্দো-প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতেই মার্কিন সফরে যেতে পারেন মোদী।