দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী জানান, ইডির বাজেয়াপ্ত করা অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণের চেষ্টা করবেন।
লোকসভা ভোটের আগে বাংলার উদ্দেশে বড় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তিনি আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। বাংলায় বিবিধ দুর্নীতি কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এই টাকা সাধারণ মানুষের টাকা।
কৃষ্ণনগরের রাজমাতা অমৃতাকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, বাংলায় ইডি যে অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছে, সেটা যাতে গরিবদের কাছে যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করছেন। এ জন্য আইনি বিকল্পগুলি কী কী রয়েছে, তা দেখছেন। বিজেপি প্রার্থীকে ফোনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক দিকে বিজেপি দেশে দুর্নীতিকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অন্য দিকে, সমস্ত দুর্নীতিবাজ একে অপরকে বাঁচাতে এক হয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রী ‘আস্থা’ প্রকাশ করে বিজেপি প্রার্থীকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেবে।’’ তিনি অমৃতার ভোটপ্রচার কেমন চলছে জানতে চান। তার পর অমৃতাকে বলেন, ‘‘আপনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এবং রাজপরিবারের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’’ তখন অমৃতা অনুযোগ করে বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগর রাজপরিবারকে নিয়েও অপপ্রচার করছে ওরা। আমাদের ‘গদ্দার’ ভাবা হচ্ছে। আমরা এত দানধ্যান করেছি। সনাতন হিন্দু ধর্ম রক্ষা করার চেষ্টা করেছি…।’’ তখন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মোদী বলেন, ‘‘আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। এই যে তিন হাজার কোটি টাকা যা বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলো আমি গরিব এবং বঞ্চিতদের মধ্যেই বিতরণ করতে চাই।’’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন যাতে এই টাকা গরিব মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
বুধবার সকালে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী রাজমাতা অমৃতা রায়কে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে বাংলায় দুর্নীতির বিষয়টি উত্থাপন করেন রাজমাতা। স্কুলে ভর্তি থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে তা তুলে ধরেন।
এ কথা শুনেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অমৃতাজি আমি আপনাকে একটা কথা বলি। আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। বাংলায় ইডির লোকেরা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। আর এই টাকা গরিব মানুষের টাকা। কেউ স্কুল শিক্ষক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন, কেউ ক্লার্ক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন”। প্রধানমন্ত্রীর কথার মধ্যেই রাজমাতা বলেন, হ্যাঁ এ সব আমরা জানি। এখানে তৃণমূলের উপর অনেকেই অখুশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ তাই আমি যে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি… আমার ইচ্ছা হল, নতুন সরকার তৈরি হওয়ার পরই একটা আইনি ব্যবস্থা করতে হবে বা নিয়ম বানাতে হবে, যাতে গরিব মানুষ যে টাকা ঘুষ হিসাবে দিয়েছে, বা তাদের লুঠ করা হয়েছে তা তাদের ফেরত দিয়ে দেব”।
রাজমাতাকে মোদী বলেন, আপনি এটা বাংলায় প্রচার করুন। বলুন ইডি যে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে তা গরিবের টাকা। এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী কোনও না কোনও রাস্তা বের করবেন।
কৃষ্ণনগর থেকে বিজেপি অমৃতাকে প্রার্থী করার পর কটাক্ষ করে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘পরাধীন ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার। নবাব সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের লড়াইয়ের সময়ে ইংরেজদের সাহায্য করেছিল কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার।’’ ওই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন অমৃতা। কৃষ্ণনগরের ‘রানিমা’ অভিযোগ করেন রাজপরিবারের ইতিহাস বিকৃত ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। তাঁর দাবি, বিভিন্ন সময়ে ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল রাজপরিবারকে। রাজনীতি করার জন্য তা এখন বিকৃত করা হচ্ছে।
বিজেপি প্রার্থীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনি জিতে আসুন। দেখা হবে। জেতার পর প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে কৃষ্ণনগরে কী করতে হবে, সেটা তৈরি করে রাখুন। আমরা সাহায্য করব। যে কাজ ভারত সরকারকে করতে হবে, তা দ্রুত শেষ করার জন্য চেষ্টা করব।’’