দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: আজ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস(BJP Foundation Day)। ৪৪ তম বর্ষে পা দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল। বিজেপির এই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপির কার্যালয় থেকে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ সম্প্রচার করা হবে। বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসে সকালে প্রথমে দলের প্রধান কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা(JP Nadda)। তারপরে বিজেপি-র কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী( Narendra Modi) নরেন্দ্র মোদী ৷
ঘটনাচক্রে মিলে গিয়েছে দু’টি দিন। হমুমান জয়ন্তী এবং বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস। আর সেই মেলবন্ধনকেই হাতিয়ার করলেন নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার দলের জন্মদিবসে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পবনপুত্র হনুমানের মতো কঠোর হাতে রাক্ষস দমনের আবেদন জানালেন!
সংসদের বালাযোগী প্রেক্ষাগৃহে বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার দলের সভাপতি জেপি নড্ডা-সহ সব প্রথম সারির নেতা হাজির ছিলেন। ছিল ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মোদীর বক্তৃতা শোনার বন্দোবস্ত। সেখানেই হনুমানের রামভক্তির পাশাপাশি, ‘লঙ্কাকাণ্ডের’ উদাহরণও তুলে ধরেন মোদী। বলেন, ‘‘রাক্ষসদের মোকাবিলার ক্ষেত্রে হনুমান যেমন কঠোরতা দেখিয়েছিলেন, আপনাদেরও সেই মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। ভারতমাতাকে মুক্ত করতে হবে।’’ লোকসভা ভোটের আগে তাঁর এই মন্তব্য মেরুকরণের রাজনীতির ইঙ্গিতবাহী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
বিগত বহু বছর ধরে নেতা কর্মীদের অক্লান্ত এবং নিরলস চেষ্টার জন্য দল আজ শক্তিশালী হয়েছে সেকথাও বলেন মোদী, সঙ্গেই বলেন এখানেই থেমে গেলে হবে না এগিয়ে যেতে হবে আরও অনেক পথ। তিনি জানান, বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বলেন, বিজেপি এমন একটি দল যা দেশের স্বার্থকে যে কোনও কিছুর চেয়ে বেশি মনে করে।’
আজকের বক্তব্য থেকে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসকেও। বক্তব্যে উঠে আসে ‘বাদশাহী’ মানসিকতার কথা। আজকের বক্তব্যে মোদী বলেন, ‘যখন আমি স্বচ্ছ ভারত নিয়ে কথা বলতাম, তখন এই বাদশাহী-মানসিকতার লোকেরা আমার সমালোচনা করেছিল। তারা মজা করেছিল এবং ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গে আমার ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।’ তুলে আনেন ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গ। বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিল হবে তা কখনও কল্পনা করতে পারেনি।
হাত শিবিরের দিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, তারা বছরের পর বছর ধরে যা করতে পারেনি, বিজেপি তা করে দেখিয়েছে। এবং এখন সেই কারণেই তারা শুধু মিথ্যে রটনা ছড়াচ্ছে। গেরুয়া শিবির যে শুধু নির্বাচন জেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সেকথাও আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন ‘আমাদের উচিত মানুষের মন জয় করা।’
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেই যে তাঁর এই মন্তব্য, তা স্পষ্ট করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ইতিহাস গড়েছিলেন দেশবাসী। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’’
তাঁর কথায়, ’দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও মোদীর নিশানায় ছিল ‘কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র’। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দীপ্রাচীন দলকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছাড়লেও ওদের গোলামির মানসিকতার ইতি হয়নি।’’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি ‘বাদশাহি’ মানসিকতা এবং মানুষের সমস্যা উপেক্ষা করার অভিযোগও তুলেছেন মোদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেন, এ বার মোদীর লক্ষ্য ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয়ের হ্যাটট্রিক। বৃহস্পতিবার সেই লক্ষ্যেই বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বলেছেন ‘সমমনস্ক’ দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার কথাও। যা শুনে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মনে। তবে কি লোকসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান পদ্ম শিবির?