দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বেড়েই চলেছে দেশের কোভিড গ্রাফ। ফের দৈনিক কোভিড সংক্রমণে লম্বা লাফ। একদিনে ২১ শতাংশ বাড়ল দৈনিক করোনা সংক্রমণ। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৫৫৩ জন। একদিনে দেশে মৃত্যু হয়েছে ২৮৪ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯২৪৯ জন। এই মুহূর্তে দেশে অ্যাক্টিভ করোনা কেস এক লাখ ছাপিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৮০১ জন।
COVID19 | India reports 27,553 fresh infections, 284 deaths and 9,249 discharges in the last 24 hours; Active caseload stands at 1,22,801
— ANI (@ANI) January 2, 2022
Omicron case tally rises to 1,525 pic.twitter.com/KH605GBwDA
অন্যদিকে, ক্রমশই চওড়া হচ্ছে ওমিক্রনের থাবা। এই মুহূর্তে দেশের ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই নয়া স্ট্রেন। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ১৫২৫। ওমিক্রনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের হদিশ মিলেছে মহারাষ্ট্রে। এখনও পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত ৪৬০ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮০ জন।
ফের একবার রাজধানীর কোভিড পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মহারাষ্ট্রের পর ওমিক্রন আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি। তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণও। ৫০ শতাংশ দৈনিক করোনা সংক্রমণ বেড়েছে রাজ্যে। শনিবার নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ২৭১৬ জন দিল্লিবাসী। এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিক সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রবিবার তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কী ঘোষণা করেন, সেদিকেই তাকিয়ে দেশ। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ফের একবার লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে রাজধানী।
কোভিডের প্রথম ঢেউ ও কড়া লকডাউনের ধাক্কায় দেশের অর্থনীতির ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের মরণকামড়ের সময় অর্থনীতির কথা ভেবেই দেশ জুড়ে লকডাউনের পথে হাঁটেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মুখে আজ নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, “করোনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু করোনা ভারতের গতি রুখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরে সরকারের ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তৃতীয় ঢেউ এলেও যে ফের পুরোপুরি লকডাউন হবে না, বছরের প্রথম দিনে তারই ইঙ্গিত মিলল। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “ভারত সব রকম সাবধানতা বজায় রেখে, সব রকম সতর্কতার সঙ্গে করোনার সঙ্গে লড়বে এবং নিজের জাতীয় স্বার্থও পূর্ণ করবে।” তাঁর বক্তব্য, ২০২২-এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গতি আরও বাড়াতে হবে।
কোভিডের প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। তার পর জুলাই-সেপ্টেম্বরেও সেই সঙ্কোচন বজায় ছিল। তার পর থেকে ফের সামান্য পরিমাণে আর্থিক বৃদ্ধি শুরু হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই ইতিবাচক বৃদ্ধির হার বজায় রয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। তবে তা অনেকটাই গত বছর ওই সময় জিডিপি-র পরিমাণ কম ছিল বলে।
অর্থনীতি নিয়ে আশ্বস্ত করতেই প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “আজ অর্থনীতির অনেক মাপকাঠিই প্রাক্-করোনার সময়ের থেকেও ভাল জায়গায় রয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি। ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি লগ্নি এসেছে। বিদেশি মুদ্রা রেকর্ড স্তরে রয়েছে। জিএসটি থেকে আয় পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। রফতানি, বিশেষত কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা নতুন মাইলফলক তৈরি করছি।”
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের মধ্যে রুটিরুজি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে তার ছাপ বাজারের চাহিদা থেকে নতুন লগ্নির উপরেও পড়বে। সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করতে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়াতে অনেক কাজ হয়েছে। নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার নতুন ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে। হাসপাতাল, টেস্টিং ল্যাবের আধুনিকীকরণ হয়েছে।
রাজ্যগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে যা নির্দেশ পাঠাল কেন্দ্র…
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত ভাবে রাজ্যগুলিতে সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে এবং কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, তার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিল্লি, কলকাতা-সহ বড় শহর ও একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যেই শপিং মল-সহ নানা ক্ষেত্রে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই খেটে খাওয়া মানুষের রুজিরোজগার নিয়ে চিন্তা বেড়েছে। কারণ গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ মানেই রোজগারে টান। এর পর লকডাউনের মতো অবস্থার অর্থ, রোজগার বন্ধ।
নয়াদিল্লি: ফের বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ । ৭০ দিনের আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে বছর শেষের দিনে। সারা দেশের পাশাপাশি মাত্র চারদিনে দ্বিগুণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসক থেকে প্রশাসনের কপালে। WHO প্রধানের সাফ ইঙ্গিত, অচিরেই দেশের দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে যাবে ৩০-৩৫ হাজারের দোরগোড়ায়। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই যেভাবে চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছিল। প্রায় একইরকমভাবে হাসপাতালে হাসপাতালে উপচে পড়বে রোগী। এখন লক্ষ্য চিকিৎসা পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং সংক্রমণে রাশ টানা।
Union Health Secretary Rajesh Bhushan writes to chief secretaries of all States/UTs on measures to deal with a possible surge in COVID cases; advises them to initiate process of setting up makeshift hospitals & constitute special teams to monitor patients in home isolation pic.twitter.com/NNWJiLsmon
— ANI (@ANI) January 1, 2022
এরপরেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। কোনওসময় নষ্ট না করে শনিবার নতুন বছরের প্রথম দিনেই রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ । চিঠিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, সংক্রমণ যে লাগাম ছাড়া গতিতে বাড়ছে, তাতে আর দেরি করার সময় নেই। অস্থায়ী হাসপাতাল বানানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে রাজ্যগুলিতে। কন্ট্রোলরুম খুলে রাজ্যের পরিস্থিতির ওপরে কড়া নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে জেলা, মহকুমা স্তরেও কন্ট্রোলরুম খোলা হোক। সেই সমস্ত স্তরেও কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে হবে। অক্সিজেন এবং ওষুধের জোগানে যেন ঘাটতি না থাকে। প্রয়োজনে হোটেলের বা এরকম ধরনের ঘর ব্যবহার করতে হবে মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীদের আইসোলেশনের জন্য।
এ দিকে, কেন্দ্রের নির্দেশ আসার আগে বা সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক রাজ্য প্রশাসনও নয়া বিধিনিষেধ আরোপের পথে হাঁটছে। দিল্লিতে আগে থেকেই নিয়মবিধি কঠোর করা হয়েছিল। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে হরিয়ানাও। পশ্চিমবঙ্গেও সোমবার ৩ জানুয়ারি প্রশাসনিক বৈঠকের পরে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজনে ফের কমানো হতে পারে লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও। প্রয়োজন হলে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে সিনেমা হল, বার, রেস্তোরাঁ, জিম, স্কুল-কলেজ।
প্রসঙ্গত, ৩১ ডিসেম্বর ৭০ দিনের করোনা আক্রান্তের রেকর্ড ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সংক্রামিত হয়েছেন ১৬,৭৬৪ জন। পশ্চিমবঙ্গে শেষ ২৪ ঘণ্টার থেকে আরও এক হাজার বেড়েছে দৈনিক করোনা সংক্রমমিতের সংখ্যা। শুক্রবার ২৪ ঘণ্টার রাজ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৫১, শনিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে দেখা গিয়েছে সেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫১২।
COVID19 | India reports 27,553 fresh infections, 284 deaths and 9,249 discharges in the last 24 hours; Active caseload stands at 1,22,801
— ANI (@ANI) January 2, 2022
Omicron case tally rises to 1,525 pic.twitter.com/KH605GBwDA