দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতায় পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে বৃহস্পতিবারই। এবার রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী ঘোষণার পালা। সূত্রের খবর, শুক্রবারই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। অন্যদিকে এদিনই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বামফ্রন্টও। কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন থেকে এই তালিকা প্রকাশ করবে।
এবার পালা ছোট লালবাড়ি দখলের লক্ষ্যে লড়াই শুরুর। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন? শাসক দলের সেই প্রার্থী তালিকা আজ ঘোষণা হতে পারে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। তবে কিছুক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে।
এর পাশাপাশি নজর দেওয়া হবে যুব ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের। একাধিক ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল হতে পারে। একাধিক প্রার্থীকে দল টিকিট না’ও দিতে পারে। একই পরিবারের একাধিক জন ব্যক্তি টিকিট নাও পেতে পারেন৷ এর পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টকেও।
কলকাতা পুরসভা ১৪৪টি ওয়ার্ডে ভোট। সূত্রের খবর, বামেদের প্রার্থী ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সিপিএমের হাতে থাকতে পারে ৮০ থেকে ৮৫টি ওয়ার্ড। এরপরই ফরওয়ার্ড ব্লকের নাম রয়েছে। ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারে ফব। সিপিআই ৮ থেকে ১১টি ওয়ার্ডে তাদের সংগঠনের মুখকে তুলে ধরতে পারে। আরএসপি দিতে পারে ৯ থেকে ১১টি জায়গায়।
দলীয় সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে সংরক্ষণের আওতায় পড়ে নিজের ৩০ ওয়ার্ড ছেড়ে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। এ বার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষণের আওতায় পড়ে গিয়েছে। তাই তাঁকে পাঠানো হতে পারে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন প্রভাবশালী কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। পূর্ব কলকাতার দীর্ঘ দিনের এক বিধায়ক পুরভোটে প্রার্থী হতে আগ্রহী। কিন্তু ২০১৫ সালেও প্রার্থী হয়ে একটি ওয়ার্ডে পরাজিত হওয়ার কারণে এ বার আর তাঁকে প্রার্থী করবে না দল। এ বারই প্রথম বিধায়ক হওয়ায় কলকাতার তিন কাউন্সিলর অতীন ঘোষ, দেবাশিষ কুমার ও দেবব্রত মজুমদারকে ফের প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনায় রয়েছে দল। কারণ এই ক্ষেত্রে দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ নীতি’ রক্ষিত হচ্ছে না একার্থে।
বর্তমান পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য রতন দে-র ওয়ার্ড বদলের সম্ভাবনা প্রবল। তিনি বর্তমানে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর। ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার কারণে তাঁকে পাঠানো হতে পারে ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমতা মজুমদারকে টিকিট না-ও দেওয়া হতে পারে। ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তথা পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানো হতে পারে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি-র কারণে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তথা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়কে দল সম্ভবত প্রার্থী করবে না। একই ভাবে নজরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য সুশান্ত ঘোষ এর ১০৭ নম্বর ওয়ার্ড এ বার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। তাই পাশের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন তিনি।৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস নিজের ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারছেন না। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষণের কারণে তাঁকেও পাশের কোনও ওয়ার্ডে পাঠানো হতে পারে।
কলকাতা বন্দরের ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর নিজামুদ্দিন শামসকে পাঠানো হতে পারে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে। দলের অন্যতম মুখপত্র ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা যুবনেতা অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি প্রার্থী হতে পারেন ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে। মহিলা সংরক্ষণের কারণে ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর ঘনশ্রী বাগকে ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আনা হতে পারে। ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে পারেন জাভেদ খান-পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান।৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুত্র সৌরভ বসু। ১২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন অভিনেতা তথা তৃণমূলে যুবনেতা অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ৭৩ ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান কাউন্সিলর রতন মালাকার।
বর্তমানে ১১৬, ১১৭ ও ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর রয়েছেন একই পরিবারের পিতা-পুত্র-কন্যা। এখানেও প্রার্থী তালিকায় কাটছাঁট হতে পারেন।তবে সকলের নজরে রয়েছে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। এবার কি সেখানে প্রার্থী হবেন ফিরহাদ হাকিম? না হলে আগামী কলকাতার পুর প্রশাসক কে হতে চলেছেন।।
এখনও অবধি যা খবর, শুক্রবার সবক’টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে না বামেরা। এদিন ১২০টির মতো ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম জানাবে তারা। বাকি আরও ৭-৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম পরে জানানো হতে পারে। অন্যদিকে অবশিষ্ট যে আসন থাকবে তাতে কংগ্রেস বা বাম মনোভাবাপন্নদের জন্য ছাড়া হতে পারে।
গতবার পুরভোটে জেতা কাউন্সিলরদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে টিকিট দেওয়া হবে বলে বামফ্রন্ট সূত্রে খবর। প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ আসতে পারে ৫৫ শতাংশ। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একুশের বিধানসভা ভোটের মতোই প্রাধান্য দেওয়া হবে তরুণ মুখকে।
ছাত্র-যুবরা প্রাধান্য পাবে কলকাতা পুরসভার ভোটে। মূলত এলাকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে, জনসংযোগ জোরাল, কাজের ক্ষেত্রে তৎপর এরকম মুখই তুলে আনতে চাইছে তারা। লড়াকু মানসিকতার সঙ্গে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মিশেলই এবার বাম প্রার্থী তালিকার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বলে সূত্রের খবর। এই সমস্ত গুণাবলী থাকা নেতা-কর্মীদের উপরেই আস্থা রাখা হচ্ছে বামেদের তরফে।
বৃহস্পতিবার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখনও কোনও রাজনৈতিক দলই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। শুক্রবারই প্রার্থীর নাম ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে তৃণমূলের। সূত্রের খবর, একাধিক নতুন মুখ এবার উঠে আসতে পারে পুরভোটের হাত ধরে। অন্যদিকে দলের চার বিধায়ক টিকিট পাবেন কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে জল্পনা।
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক হিসেবে রয়েছেন রাজ্যের বিধায়ক তথা পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ ছাড়া প্রশাসক মণ্ডলীতে রয়েছেন আরও তিন বিধায়ক অতীন ঘোষ, দেবব্রত মজুমদার ও দেবাশিস কুমার। তাঁরা প্রত্যেকেই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। পুরসভায় তাঁরা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূল এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি কার্যকর করেছে। আর এই চার বিধায়ক ফের কাউন্সিলর হলে দুটি পদের অধিকারী হতে পারবেন।
তৃণমূলের তরফে এদের সেই অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সেটাই বিবেচনা করা হবে। এই বিষয়ে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় এবার এলাকার স্থানীয় লোক, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বিজেপির কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, এমন ব্যক্তিদের অগ্ৰাধিকার দেওয়া হবে। জনপ্রিয় কোনও নেতা খুব বেশি থাকছেন না প্রার্থী তালিকায়। তবে সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিদের রাখার চেষ্টা করা হবে। পুরনো আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যদেরও প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে বিজেপির।