দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মনে পড়ে,ক্যালেন্ডারে সেটা ছিল ২০০৮ সাল। মুম্বই উপকূলে নৌকায় ভেসে এসেছিলেন আমির আজমল কসাভ-সহ ১০ পাকিস্তানী জঙ্গি। তার পর যে ধ্বংসলীলা আর অনর্থক রক্তপাত দেখেছিল বলিউডের শহর, তাকে বেনজির বললেও কম বলা হয়। তার পর কেটে গিয়েছে দেড় দশক।
মুম্বই উপকূলে আবার ভেসে এসেছে একটি ভিন্দেশি নৌকা। যা পুলিশকর্তাদের এক লহমায় নিয়ে গিয়েছে ১৫ বছর পিছনে।
মুম্বই পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা একটি নৌকা আটক করেছেন। ‘আবদুল্লা শরিফ’ নামের নৌকাটি আদতে কুয়েতের। তাহলে কী করে তা মুম্বই পৌঁছল? নৌকা থেকে আটক করা হয়েছে তিন রহস্যময় ব্যক্তিকেও। সব মিলিয়ে ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’র সামনে আবার রহস্যময় নৌকার আবির্ভাব একলাফে বাণিজ্যনগরীর রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটাই।
মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, নৌকাটি গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার কাছে সমুদ্রে এদিক ওদিক ঘুরছিল। নৌকায় তিনজন ছিলেন। তাদের আটক করা হয়। যাত্রীরা জানায়, নৌকাটি কুয়েতের। নৌকার গায়ে বড়বড় করে লেখা ছিল ‘আবদুল্লা শরিফ’। এরপরেই আতঙ্ক ছড়ায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের বিশাল বাহিনী। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তিন ব্যক্তি একটি মৎস্য সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু সেখানে কাজের পরিবেশ ছিল খুবই খারাপ। কিছু বলতে গেলেই জুটত মালিকের মারধর। তার উপর বেতন হত না নিয়মিত। ফলে অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন ভারত থেকে সেখানে কাজ করতে যাওয়া তিন মৎস্যজীবী। কর্মীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য মৎস্য সংস্থাটি সকলের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিল। ছিল না টাকাপয়সাও। ফলে সাধ থাকলেও সাধ্য বিশেষ ছিল না তিন ব্যক্তির।
অনেক ভেবে তাঁরা ঠিক করেন, মালিকের নৌকা নিয়েই পালাবেন দেশের দিকে। সেই অনুযায়ী, মালিকের খারাপ ব্যবহার থেকে নিস্তার পেতে কুয়েতের সংস্থা থেকে নৌকা চুরি করে তাঁরা ভেসে পড়েন পারস্য উপসাগরে, তার পর ভাসতে ভাসতে আরব সাগর। একটানা ১২ দিন আরব সাগরে ভেসে তাঁরা পৌঁছন মুম্বই উপকূলে। সেখানেই পুলিশ তাঁদের আটক করে। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শেষ চার দিন কিছুই খাবার জোটেনি। কারণ পানীয় জল এবং রেশন শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ তিন জনকেই আটক করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এ মামলায় কোনও এফআইআর দায়ের করেনি পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কুয়েতের নৌকাটিকে পুলিশ কোলাবায় তাজ হোটেলের কাছে আটকে রেখেছে।
যদিও এই ঘটনায় বিপদঘণ্টি শুনছেন অনেকেই। তাঁদের মনে পড়ে যাচ্ছে, মুম্বই উপকূলে ঢিলেঢালা নিরাপত্তার ফাঁক গলেই ২০০৮ সালে একই ভাবে নৌকায় ভেসে মুম্বই শহরে ঢুকে পড়েছিল কসাভের মতো জঙ্গিরা। এ বারও কি তেমন কিছুই হতে পারত? এমন নয় তো যে, ইতিমধ্যেই কুয়েতের নৌকা থেকে কয়েক জন নেমে মিশে গিয়েছেন বলিউডের শহরের জনারণ্যে? ঘরপোড়া মুম্বইবাসীর চিন্তা এখন সেটাই।