
আপাতত দূরেই রয়েছে পদ্মফুল আর জোড়াফুলের রাজনৈতিক বিবাদ। বিভেদ ভুলে একসঙ্গে ঠাকুরবাড়ি। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে এক দিকে বিজেপির শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুর অন্যদিকে তৃণমূলের সাংসদ মমতা ঠাকুর। দুই পরিবারের সংঘাত দীর্ঘদিনের। বিগত বছর মতুয়া মেলার দিনে সেই সংঘাত চরমে উঠেছিল। ফলে মন ভার ছিল মতুয়া ভক্তদের। তবে এবছর উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির চিত্রটা বিগত বছর থেকে অন্যরকম।

ঠাকুরবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর ২৭ মার্চ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীর বারুণীর স্নান পড়েছে। স্নান উপলক্ষে ঠাকুরবাড়িতে বসছে মতুয়া ধর্ম মহামেলা।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ থেকে ঠাকুরনগরে শুরু হচ্ছে মতুয়াদের ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা। প্রতিবারের মতো এবারও পুণ্যস্নানের জন্য বিপুল ভক্তসমাগমের আশা করছে মেলা কমিটি। তাই মেলায় যেতে ভক্তদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন চালানোর ঘোষণা করল রেল। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য থেকে মতুয়া ভক্তরা এই মেলায় যোগ দিতে আসেন। তাঁদের কথা ভেবেই বিশেষ ট্রেনগুলি চালু করা হল বলে রেল সূত্রে খবর। মেলা চলবে সাতদিন ধরে। মেলার দিনগুলিতে সবমিলিয়ে ৮ টি লোকাল ট্রেন এবং চারটি বিশেষ মেল ট্রেন চালানোর ঘোষণা করা হয়েছে রেলের তরফে।
রেল সূত্রে খবর, বারুণী মেলা উপলক্ষে ঠাকুরনগর পর্যন্ত আটটি লোকাল ট্রেন ছাড়াও কাঠগোদাম, লামডিং, জগদলপুর ও আলিপুর দুয়ার থেকে চারটি বিশেষ মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হবে। চারটি আপ ও চারটি ডাউন লোকাল চলবে ঠাকুরনগর থেকে গেদে, লালগোল, ক্যানিং ও নামখানার মধ্যে।

সূচি অনুযায়ী, ২৬ মার্চ, বৃহস্পতিবার গেদে থেকে সকাল ৬.৪৫, লালগোলা থেকে ভোর ৪.৫০, ক্যানিং থেকে সকাল ৬.৩৫ ও নামখানা থেকে সকাল ৫ টায় বিশেষ লোকাল ট্রেনগুলি ছাড়বে ঠাকুরনগরের উদ্দেশে। ২৭ মার্চ ট্রেনগুলি ঠাকুরনগর থেকে ছাড়বে যথাক্রমে বিকেল ৪.৩৫, পৌনে চারটে, বিকেল ৫টা ও বিকেল ৪.০৫ মিনিটে।

এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্ষেত্রে ২৬ মার্চ, কাঠগোদাম থেকে সকাল ১০টা, সকাল ৮টার সময় জগদলপুর থেকে ঠাকুরনগরের উদ্দেশে ছাড়বে দু’টি বিশেষ ট্রেন। ২৭ মার্চ কেসিঙ্গা থেকে ৪.১০ মিনিটে ছাড়বে আরও দু’টি বিশেষ ট্রেন। মতুয়া মহসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জহর বিশ্বাস জানান, ”মহারাষ্ট্রের মালকানগিরি, আসরিধাম, দিল্লি, বিহার, ত্রিপুরা, অসম থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসেন ঠাকুরনগরে। তাঁদের যাতায়াতের জন্য এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা।”
ঠাকুরবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর সেই মেলা যৌথভাবে পরিচালনা করছে শান্তনু ঠাকুর এবং মমতা ঠাকুরের দুই মতুয়া মহাসংঘ। মেলা পরিচালনা করার জন্য দুই সংগঠনের সদস্যদের মিলিয়ে একটি মেলা পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরাই এই বছর মেলা পরিচালনা করবেন।

ইতিমধ্যেই বারুণী মেলা উপলক্ষে ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি সেজে উঠেছে, দূর দুরন্ত থেকে মতুয়া ভক্তরা আসতে শুরু করেছে। দুই পরিবার একত্রিতভাবে মেলা করছে শুনে খুশি মতুয়া ভক্তরা। তারা বলছেন, আমরা এটাই তো চাই। ঠাকুর বাড়িতে সমস্ত বিবাদ মিটে যাক। একত্রিত হয়ে থাকুক তারা।
এই বিষয়ে সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন ভক্তদের ইচ্ছাতে দুই পক্ষের কমিটি নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে সেই কমিটি মেলা পরিচালনা করবে । এবার আলাদাভাবে নয়, যৌথভাবেই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি মমতা ঠাকুর জানিয়েছেন আমরা প্রতিবছরই চাই যৌথভাবে মেলা পরিচালনা করতে । এবছর দুই মতুয়া মহা সংঘের পক্ষ থেকে একটি কমিটি তৈরি করে মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে । ভক্তদের সঠিক পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।
মতুয়া ভক্ত আশিষ বিশ্বাস বলেন,বারুণী মেলা উপলক্ষে ঠাকুরনগর পর্যন্ত আটটি লোকাল ট্রেন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মতুয়া ভক্তদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ট্রেনের ব্যাবস্থা করায় আমরা খুশি । কারণ কুম্ভ মেলার মতনই বারুণী মেলায় ভির করেন পুণ্যার্থীরা ।

নব্বই বছরের আরও এক মতুয়া ভক্ত রাম চন্দ্র রায়ের কথায়, পারিবারিক দ্বন্দ্ ভুলে মহামেলার আয়োজন হয়েছে এবার তাই দু’দিন আগেই মহারাষ্ট্র থেকে ট্রেনে চেপে ঠাকুরনগর পৌঁছে গেছি নিশ্চিন্তে । এবার পূণ্য পুণ্যস্নানে যোগ দিতে হাজার হাজার মতুয়া ভক্তরা ট্রেনে চেপে আসছেন মতুয়া ধামে ।