


কলকাতা : হিন্দু পুরাণ মতে স্বয়ং মহাদেবের কৃপায় ঋষি শিলাদ এক পুত্র লাভ করেন তাঁর নাম ‘নন্দী’। ষাঁড় রূপে চিহ্নিত ঋষি শিলাদ পুত্র নন্দীই শিবের বাহন, কৈলাসের রক্ষক, দেবাদিদেব মহাদেবের পরম বন্ধু। শিবলিঙ্গের পাশে, মন্দিরের বাইরে নন্দীর উপস্থিতি মহাদেবের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ মনোযোগ শিবভক্তদের ভক্তির শক্তি প্রদান করে।

ভক্ত এবং শিবের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নন্দীকে নিয়ে হিন্দু পুরাণে অনেক গল্পও আছে। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শিল্পকলায় নন্দীর উপস্থিতি বহুযুগ ধরেই বিদ্যমান। নন্দী আনন্দ, ভক্তি, শক্তি এবং ধার্মিকতার প্রতীক। বর্তমানে নন্দীর সেই প্রতীক রূপটিই ফুটে উঠেছে শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসের ক্যানভাসে। মোহিনীর রঙ তুলির যাদুতে হিন্দু পৌরাণিক গল্পের এই প্রতীক রূপটি হয়ে উঠেছে আরও অনন্য। উজ্জ্বল রঙের বৈচিত্রে, তুলির নকশা টানে আরও প্রকট হয়েছে নন্দীর প্রাণবন্ত রূপ। যেখানে প্রকাশ পেয়েছে শিল্পী এবং তার সৃষ্টির নান্দনিকতার দিকটি।

সম্প্রতি কলকাতার হোটেল তাজ বেঙ্গলের লাউঞ্জে শুরু হয়েছে শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসের চিত্র প্রদর্শনী নন্দী। প্রায় ১৪ – ১৫ টি ৩০ ইঞ্চি – ৩০ ইঞ্চি, ৩৫ ইঞ্চি – ২৯ ইঞ্চি, ৪০ ইঞ্চি – ২৮ ইঞ্চি ইত্যাদি সাইজের অ্যাক্রলিক ক্যানভাসে শিল্পী তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতীয় এই পৌরাণিক চরিত্রটির বিভিন্ন রূপ। শিল্পীর প্রতিটি চিত্রে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার দর্শকের মনের মধ্যে প্রথমেই এক ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার করে। দেখুন ভিডিও
শিল্পী মোহিনীর ক্যানভাসে নন্দী স্থির নয় গতিময়। আবার কোথাও মহাদেবের সান্নিধ্যে এসে নন্দীর সেই গতিই সম্পূর্ণতা পেয়েছে; মোহিনীর নন্দী সেখানে ধীর, স্থির ভক্তের প্রতিরূপ। শিল্পীর ভাবনায় নন্দীর গায়ে ফুটে ওঠা বিচিত্র নকশা, উজ্জ্বল অলংকার এক স্বর্গীয় নান্দনিকতার রূপ বহন করে।

দেশের সময়কে শিল্পী জানালেন তিনি নিজে একজন শিব ভক্ত। মূলত ভারতীয় পৌরাণিক চরিত্র, হিন্দু দেবদেবীদের নিয়েই ছবি আঁকেন মোহিনী। দীর্ঘ তিন চার বছর ধরে নন্দীর উপর এই কাজ তিনি করেছেন। এর আগে দেবী দুর্গা এবং দেবী স্বরস্বতীকে নিয়ে তার শিল্প মানুষের মন কাড়ে। মোহিনী আরও বলেন, “একজন শিল্পী যখন কোনও কিছু সৃষ্টি করে তখন তিনি তার সেই সৃষ্টির মধ্যেই মগ্ন থাকেন, নিজেকে সেই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম করে ফেলেন”; তার নিজের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে।
মোহিনীর ছোটোবেলা থেকেই রঙ তুলির প্রতি টান, নিজের অজান্তেই কখন যেন তার স্কুল কলেজের সাদা পাতাও হয়ে উঠত রঙিন। জীবনের বহু ঘাত প্রতিঘাত কখনই মোহিনীর রঙ তুলির ভালোবাসাকে ফিকে হতে দেয়নি। কলকাতার বিভিন্ন গ্যালারীতে তার আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী হয়েছে।

ব্যবসায়ী সুমন রায় দেশের সময়কে জানালেন, মোহিনীর আঁকা ছবি দেখে তিনি মুগ্ধ এবং তিনি যথেষ্ট গর্ব অনুভব করেন যে একজন গ্রাম্য মেয়ে ছোটোবেলা থেকে কোনও প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র ছবি আঁকার প্রতি ভালোবাসায় জীবনের বিভিন্ন বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে আজ এতদূর এগিয়েছেন।

শিল্পী মোহিনী বিশ্বাসের এই প্রদর্শনীটি হোটেল তাজ বেঙ্গলের লাউঞ্জে শুরু হয়েছে ৫ ই মে, এটি চলবে ১২ মে ২০২৫ পর্যন্ত। প্রদর্শনীর সময় প্রতিদিন দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যে ৬টা।






