দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতার শহিদ মিনারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন করল আরএসএস। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত। হঠাৎ করে কেন নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনে উৎসাহী হয়েছে আরএসএস- এই প্রশ্ন গত কয়েক দিন ধরেই ঘুরপাক খেয়েছে বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায়। তবে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালন যে আরএসএস-এর কাছে নতুন নয়, তা এদিনের সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়েছেন মোহন ভগবত। পাশাপাশি নেতাজির লক্ষ্য, সঙ্ঘের লক্ষ্য এক বলে সোমবার দাবি করেছেন তিনি। নেতাজির জন্মজয়ন্তীর মঞ্চ থেকে আরএসএস প্রধানের বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
নেতাজি প্রসঙ্গে মোহন ভগবত বলেছেন, “দেশের কথা ভুলে ব্যক্তি উন্নতির কথা ভাবলে সর্বনাশ। নেতাজি স্বাধীনতার লড়াই লড়েছেন। কারণ দেশ তখন পরাধীন ছিল। কিন্তু তার পাশাপাশি, তিনি নিজের মতো সহযোগী গড়ে তুলেছেন। সঙ্ঘ তাই করে। নেতাজি রবীন্দ্রনাথ- তাদের পথ দেখেই সঙ্ঘ চলে। স্বামী বিবেকানন্দ যা বলে গিয়েছেন তার প্রবাহমানতা নিয়েই আরএসএস চলছে।” পাশাপাশি সমষ্টি হিসাবে কাজ করার কথাও এ দিন উঠে এসেছে ভগবতের বক্তব্যে। এ প্রসঙ্গে ভগবত বলেছেন, “নেতাজি সমষ্টি জন্য ভাবতে বলেছিলেন। ব্যক্তির জন্য ভাবতে বলেননি। এটাই ভাবতে হবে আমাদের। যে যেখানেই কাজ করছেন, সংঘবদ্ধ হয়ে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। ব্যক্তির স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করাই লক্ষ্য।” মিলিত ভাবে কাজ করার বার্তা যখন মোহন ভগবত দিচ্ছেন, তখন সবায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতা। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দুর অধিকারীরা আরএসএস-এর সাদা জামা-খাঁকি প্যান্ট পরে বসেছিলেন সামনের সারিতে। দ্বন্দ্বে জীর্ণ বঙ্গ বিজেপি-কে এক জোটের বার্তা একই সঙ্গে আরএসএস প্রধান দিয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
নির্বাচনে আরএসএস-এর অংশ না নেওয়ার কথাও এ দিন উঠে এসেছে সঙ্ঘ প্রধানের কথায়। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার নির্বাচনে লড়তে আসিনি। আমাদের নামের দরকার নেই। আমরা সমাজের সকলকে কাজ করতে এসেছি। সঙ্ঘের নাম থাকার দরকার নেই, কিন্তু অভ্যাস এক হওয়া দরকার।” নেতাজির আমলের দেশের পরিস্থিতির এখন নেই। তবে এখন দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার দরকার না থাকলেও একজোট হয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন মোহন ভগবত।
শহিদ মিনারে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালন নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “তৃণমূলের জন্মের আগে থেকে আমরা নেতাজিকে নিয়ে অনুষ্ঠান করি। তৃণমূল তো সাত দিন হয়েছে। তারা কী বুঝবে। তারা দেশের সমস্ত মহাপুরুষকে অপমান করেছে। সেনাকে অপমান করেছে। তাদের থেকে কেউ জ্ঞান নিতে চায় না। নেতাজি অনেক বড়। তাঁকে নিয়ে টানাটানি করা যায় না। নেতাজিকে সারা দেশ সম্মান করে। আরএসএস দেশভক্ত সংগঠন। মহাপুরুষদের সম্মান করে। তাঁদের কাছ থেকে প্রেরণা নেয়। এর আগেও নেতাজি জয়ন্তীতে অনুষ্ঠান হয়েছে।”
নেতাজির আদর্শে একজোট হয়ে চলা, নেতাজির লক্ষ্য সঙ্ঘের লক্ষ্য বলে ভগবত দাবি করছেন। কিন্তু তাঁর এই দাবি সঙ্গে সহমত নন নেতাজির কন্যা অনিতা বসু পাফ। দিন কয়েক আগে পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতাজির ভাবধারার সঙ্গে সঙ্ঘের ভাবধারার পার্থক্য জানিয়েছিলেন তিনি। নেতাজি ও আরএসএস দুই বিপরীত মেরুর বলেও মত নেতাজি কন্যার।
এ বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, “নেতাজির মেয়ে অনিতা বসু জানিয়েছেন নেতাজি সারাজীবন ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। আরএসএসের মত একটি সংগঠনের সঙ্গে মতবাদ মিলতো না। নেতাজি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ। আরএসএস হিন্দু মতবাদে বিশ্বাসী। তাই আরএসএস আর নেতাজি মেলে না।”
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ তাদের ইউনিফর্মকে হাফ থেকে ফুলপ্যান্ট করেছে অনেকদিন হল। তবে সেই স্কুলবেলার পর শুভেন্দু অধিকারী এদিন যেন ষোলোআনা স্বয়ংসেবক ৷
সোমবার নেতাজি জয়ন্তীর সকালে শহিদ মিনারে ছিল সঙ্ঘের কর্মসূচি। উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। সেখানেই দেখা গেল, সাদা শার্ট, খাকি ফুলপ্যান্ট, মাথায় সঙ্ঘের টুপি পরে খাঁটি স্বয়ংসেবক পোশাকে হাজির হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রামের বিধায়ক অতীতে একাধিক সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছিলেন, স্কুল জীবনে কাঁথিতে সঙ্ঘের শাখায় শরীর ও চিন্তাচর্চা করতে যেতেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে তাঁকে এও প্রশ্ন করা হয়েছিল, ছোটবেলায় আরএসএস, এখন বিজেপি, অনেকে তো বলেন মাঝে কংগ্রেস ও তৃণমূলের রাজনীতিটাই আপনার জন্য বেমানান ছিল? জবাবে শুভেন্দু বলেছিলেন, “আরএসএস-এর শাখার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। সেখানে দেশ ভক্তি জাগানো হয়। শরীর ও মানসিকতা বিকাশের চর্চা হয়।”
শুভেন্দু ছোটবেলায় আরএসএস করলেও কলেজ জীবনে বাম ছাত্র রাজনীতি করতেন। শুভেন্দু আকছার বলেন, ক্লাস ইলেভেনে পড়তে কলেজের ভোটে জেতা দিয়ে তাঁর রাজনীতি শুরু। তারপর ধাপে কীভাবে কংগ্রেসের কাউন্সিলর, তৃণমূল বিধায়ক, লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে সাংসদ হওয়া থেকে মন্ত্রী হওয়া- প্রায় দিনই জনসভায় এসব বলে শুভেন্দু বোঝাতে চান, অসংখ্য সিঁড়ি ভেঙে রাজনীতিতে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। উড়ে এসে জুড়ে বসেননি।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সঙ্ঘের সঙ্গে কৈশোরের যোগের কথা হাটের মাঝে জানান শুভেন্দু। এদিন শহিদ মিনারে শুভেন্দুকে অচেনা পোশাকে দেখা গেলেও আসলে তিনি যেন নিজের স্কুল জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন। এমনিতে সঙ্ঘের কর্মসূচিতে তাঁকে যে প্রায় যে দেখা যায়, তা নয়। তবে এদিন মোহন ভাগবত ছিলেন বলেই হয়তো তাঁকে বাড়তি উৎসাহে দেখা গিয়েছে বলে মত অনেকের।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দু বিজেপিতে রাজ্যের নেতাদের খুব একটা পাত্তা না দিয়ে দিল্লির অমিত শাহদের মন জুগিয়ে চলতে চান। তেমনই হয়তো এবার তিনি নাগপুরের নজর কাড়তে চাইছেন।