দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে আজ, মঙ্গলবার পুণ্যস্নানের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে মতুয়া ধর্ম মহামেলা।
মতুয়াদের মন পেতে গেরুয়া হাইকম্যান্ডের নয়া স্ট্র্যাটেজিতে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য। একইসঙ্গে মোদীর এই পদক্ষেপে বঙ্গ বিজেপি-র প্রতিও বিশেষ বার্তা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মতুয়াদের আস্থা পেতে ক্ষুব্ধ নেতাকেও অগ্রাধিকার হাইকম্যান্ডের। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর শনিবার নিজেই জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের কর্মসূচি।একইসঙ্গে বলেন, এটা একটা বড় পাওনা।
ওই মেলা এবং পুণ্যস্নান উপলক্ষে আজ মোদী মতুয়াদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ভাষণ দেবেন। তার আগে সোমবার তিনি টুইট করেছেন, “মহান শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি সামাজিক ন্যায় ও জনকল্যাণে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা তাঁর জন্মজয়ন্তীও উদ্যাপন করব।”
মতুয়া ধর্ম মহামেলায় ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর্বে বাংলাদেশের ওরাকান্দির ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ওরাকান্দি থেকেই হরিচাঁদের সামাজিক এবং ধর্মীয় আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। বড়মার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ওরাকান্দি দর্শনের কথাও৷
এ দিন টুইটে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মোদী। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এখনও কার্যকর না হওয়ায় মতুয়া নেতৃত্ব-সহ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতেই মোদীর এই তৎপরতা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনানোর জন্য অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু আজ মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ১৫ টি জায়ান্ট স্ক্রিন বসাচ্ছেন।
এ ছাড়া, দেশ-বিদেশে থাকা মতুয়া সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন শান্তনু। তিনি বলেন, “এটা আমাদের মতুয়াদের কাছে বড় পাওনা।”
বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর অবশ্য প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দিতেই পারেন। তবে এত দিন সেটা কেন দেননি?”
বনগাঁ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পুরপ্রধান গোপাল শেঠ তাঁর ফেসবুক পেজে মতুয়া ভক্তদেরর উদ্দ্যেশ্যে বার্তা দিয়েছেন বড়মার ছবি সহ ৷ সেখানে তিনি লিখেছেন৷ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে পূর্ণব্রহ্ম ভগবান শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১তম আবির্ভাব উপলক্ষে , বড়মা স্বর্গীয় শ্রী বিনাপানী দেবীর আশীর্বাদ কে পাথেয় করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মতুয়া ধৰ্ম মহামেলা । সকল মতুয়া ভাই বোনদের জানাই প্রণাম এবং সাদর আমন্ত্রণ।
জয় হরিচাঁদ , জয় গুরুচাঁদ ৷
করোনা পরিস্থিতিতে দু’বছর বন্ধ থাকার পরে এ বার ফের হচ্ছে মতুয়া ধর্ম মহামেলা এবং পুণ্যস্নান। স্বাভাবিক ভাবেই মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ভক্তদের আসার তাগিদ অনেকটাই বেশি।
মহামেলা উপলক্ষে ইতিমধ্যে ঠাকুরনগর-সহ গাইঘাটা সেজে উঠেছে। চারিদিকে বড় বড় তোরণ লাগানো হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ছবি। কোথাও বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও আছে। কোথাও আবার মতুয়াদের বড়মা বীণাপানি ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর স্বামী তথা ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের ছবি।
সোমবার থেকেই ভক্তদের ঢল নেমেছে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে তাঁরা উপস্থিত হতে শুরু করেছেন দলবদ্ধ ভাবে৷ হাতে ডাঙ্কা-কাঁসি-নিশান নিয়ে হরিচাঁদ- গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির প্রদক্ষিণ করছেন।
গোটা এলাকা জুড়ে অসংখ্য জলসত্র খোলা হয়েছে। ঠাকুরনগরে বাসিন্দারা বাড়ির উঠোন ভক্তদের থাকার জন্য খুলে দিয়েছেন। প্রচুর দোকানপাট বসেছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ঠাকুরবাড়িতে কামনা সাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে মেলা শুরু হবে। এ বার মহামেলা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিয়ো বার্তা দেবেন।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টের সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। তা মানুষকে সরাসরি শোনানোর জন্য ঠাকুরবাড়িতে ১৫টি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া, বনগাঁ, বাগদা, চাঁদপাড়া, হরিণঘাটা, কল্যাণী, চাকদহ-সহ বিভিন্ন এলাকায় জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের লিঙ্ক দেশ-বিদেশে থাকা আমাদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
মতুয়া মহাসঙ্ঘ কর্তৃপক্ষের কথায় , এ বার মহামেলায় প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ আসবেন। তাঁদের জন্য খিচুড়ি ও তরকারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকছে যথেষ্ট শৌচালয় এবং পানীয় জলের পাউচ।
এ বার রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মতুয়া ভক্তদের আসার জন্য বিশেষ ট্রেন, এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। বাড়ানো হয়েছে লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও। দীর্ঘদিন পরে এ বার মমতা ঠাকুর এবং শান্তনু ঠাকুর এক সঙ্গে মেলার আয়োজন করছেন বলে ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘ভক্তদের যাতে ঠাকুরবাড়িতে এসে কোনও অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয়, সে জন্য থাকা-খাওয়া সহ সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ভিড় সামলাতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস জানিয়েছেন, সমিতির পক্ষ থেকে মতুয়া ভক্তদের থাকার জন্য ত্রিপল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহামেলা উপলক্ষে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ঠাকুরনগরে থাকা চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
মহামেলার দিনগুলিতে (২৯ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল) পর্যন্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রুত যাতায়াতের জন্য বিশেষ রুট থাকছে। পুলিশি সহযোগিতায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই রুটে যাতায়াত করবেন।
গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন জানান, ‘‘ঠাকুরবাড়িতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র করা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন। এ ছাড়া, ৪৫টি সংগঠনকে ওষুধপত্র দেওয়া হয়েছে।’’ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে যাতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্যও পদক্ষেপ করা হয়েছে। সুজন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলি করা হবে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা থাকছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে।’’
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘১০০ জন অফিসার এবং ৩০০ জন পুলিশকর্মী মহামেলার নিরাপত্তায় থাকবেন। এ ছাড়া, থাকছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।’’ ছবিগুলিতুলেছেন দেবানন্দ পাইন৷