দেশের সময় : জমির দাবিতে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলনে উত্তাল সন্দেশখালি। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বের রাশ প্রথম থেকেই গেরুয়া শিবিরের হাতে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেত্রী বৃন্দা কারাত পৌঁছলেও সাড়া মেলেনি তেমন। সেদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও গেছিলেন সন্দেশখালি। প্রচারের সব আলো সেদিন ছিল শুভেন্দুর মুখেই।
সেই সন্দেশখালিতেই আন্দোলন শুরুর পাক্কা ২০ দিন পর পৌঁছলেন ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। পলাশ দাশ আর ধ্রুবজ্যোতি সাহাকে সঙ্গে নিয়ে। একের পর এক গ্রাম ঘুরে কথা বলেন নির্যাতিতা মহিলাদের সঙ্গে। কথা বলেন ভূমিহীন কৃষক ও খেতমজুরদের সঙ্গেও যাদের জমি-ভেড়ি দখল নিয়েছে শেখ শাহজাহান বাহিনীরা। মীনাক্ষীর সন্দেশখালি পৌঁছনোর কোনও আগাম খবর ছিল না বসিরহাট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে।
পুলিশের নজরে আসার আগে বিনা বাধাতেই বেশ কিছুটা ঘুরে ফেলেন তিনি। কাছারি এলাকায় প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক, সন্দেশখালি কাণ্ডে ধৃত নিরাপদ সর্দারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরেই পুলিশ আটকে দেয় মীনাক্ষীকে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। গ্রাম ঘোরার সেখানেই ইতি হলেও এদিন মীনাক্ষীকে দেখে সন্দেশখালিতে পালে যেন হাওয়া পেল সিপিআইএমের ডুবন্ত নৌকার যাত্রীরা। সন্দেশখালিতে তাঁর উপস্থিতি রীতিমতো চমকে দিয়েছে বসিরহাট জেলা পুলিশকেও।
মিনাক্ষী যেহেতু পরিচিত মুখ, তাই তাঁকে পুলিশ চিনে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সেলিমদের। সিপিএম সূত্রে, জানা গেছে সে কথা মাথায় রেখেই বলা হয়, শাড়ি পরে, মাথায় হিজাব টেনে যেতে। তাই করেন মিনাক্ষী। শনিবার সন্দেশখালির গ্রামের রাস্তাতেও মিনাক্ষী যখন হেঁটেছেন, দেখা গিয়েছে হিজাব শুধু মাথা নয়, মুখও ঢেকেছে তাঁর। ধ্রুব সাধারণত পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন। শনিবার তাঁকে দেখা গিয়েছে ট্রাউজার্স-টি শার্টে।
বিয়েবাড়ি, বইমেলা, দুর্গাপুজো হলে মিনাক্ষী শাড়ি পরেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মিনাক্ষীর পোশাক মানে চুড়িদার। ‘পালাজো’ ধরনের। গলায় ওড়না। পায়ে ফিতে-বাঁধা জুতো। কিন্তু ছদ্মবেশ ধরতেই শাড়ি পরে শনিবার সন্দেশখালি গেলেন মিনাক্ষী। ঘুরলেন গ্রামে গ্রামে।
সূত্রের খবর, দুর্বল হলেও সন্দেশখালির উত্তপ্ত এলাকায় এখনও অনেক সিপিএমের পার্টি সদস্য রয়েছেন। তাঁরাও চেয়েছিলেন মিনাক্ষী যাতে গ্রামে পৌঁছন। বস্তুত, সিপিএমও হয়তো বুঝতে পারছে, সরকার বিরোধী যে ‘আখ্যান’ তৈরি হচ্ছে সন্দেশখালিতে, তাতে বিরোধী পরিসরে ধারাবাহিক ভাবে দাগ কেটে যাচ্ছে বিজেপিই। বামেরা সেখানে খুব একটা ‘উজ্জ্বল’ নয়। অনেকের মতে, সিপিএম হয়তো এ-ও বুঝতে পারছে, বৃন্দা কারাটদের সন্দেশখালিতে পাঠিয়ে ‘ঔপচারিকতা’ হতে পারে, কিন্তু আশু উদ্দেশ্য সফল হবে না। সে কারণেই মিনাক্ষীদের পাঠাতে চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। শনিবার কালিন্দী পার করে সন্দেশখালির গ্রামে পৌঁছে যান মীনাক্ষী , পলাশ , ধ্রুবজ্যোতিরা।