মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশির্ব্বাদ করছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত রাজেশ দ্বৈতাপতি। ছবি তুলেছেন জয়ন্ত সাউ ।


পূর্ব নিধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেলে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পূর্ণাহুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ শুরু হয় পূর্ণাহুতির কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত রাজেশ দ্বৈতাপতি ও ইসকনের কর্মকর্তা রাধারমণ দাস।

এদিন পুজো করার সময় পুরোহিত মুখ্যমন্ত্রীর গোত্র জিজ্ঞেস করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম তো কখনও মুখে প্রচার করে হয় না, হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। তাই আমি নিজের গোত্রে পুজো করি না, মা-মাটি-মানুষের গোত্রে পজো করি। মা-মাটি-মানুষ ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকব।”

পূর্ণাহুতির পর আরতি করতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকেও। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার ভগবান জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠা এবং মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের অনুষ্ঠান হবে। যাকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকেই সৈকত শহরে বাড়ছে পুর্ণ্যার্থীদের ভিড়। মঙ্গলবার নতুন করে আরও অনেক পূণ্যার্থী এসেছেন। একদিকে মন্দিরের ভেতরে যেমন চলছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান তেমনই বিপুল জন সমাগম সামলাতে দিঘাজুড়ে পুলিশি নজরদারি চোখে পড়ার মতো।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামীকাল দুপুর আড়াইটায় মূল অনুষ্ঠান হবে। তিনটেয় মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে। তারপরই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে মন্দিরের প্রবেশদ্বার।

জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে বাকি দেবদেবীর আহ্বান পর্ব শেষ হয়েছে। হয়েছে জগন্নাথের দুধস্নানও। পুরীর মতো এখানেও সুদর্শন দেব, দেবী লক্ষ্মী, বিমলা ও সত্যভামাকে অধিষ্ঠিত করা হবে।

সূত্রের খবর, দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে হোম যজ্ঞ। রাজেশ দ্বৈতাপতির পাশাপাশি পুজোর আচার অনুষ্ঠানের জন্য পুরী থেকে দিঘায় এসেছেন আরও ৫৭ জন সেবক। এছাড়াও ইসকনের ১৭ জন সন্ন্যাসীর তত্ত্বাবধানে চলছে যজ্ঞের কাজকর্ম। মন্দিরে জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে মোট এক কোটিবার নরসিংহ মন্ত্রোচ্চারণ করছেন সেবকরা।

যজ্ঞের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা, মমতার ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে পূর্ণাহুতির পরে পুরোহিতদের হাতে শরবতের গেলাস তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রয়েছেন তৃণমূলের একঝাঁক নেতা, সাংসদ, বিধায়ক। রয়েছেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জুন মালিয়া, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মূল যজ্ঞমঞ্চের অদূরে মঞ্চে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। টলিউডের নামী প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক অরিন্দম শীল, দেবলীনা কুমার, শিল্পপতি রুদ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখকে দেখা গিয়েছে মন্দিরের কাছে তৈরি মঞ্চে।
মঙ্গলবারের হোমযজ্ঞের জন্য আনা হয়েছে ১০০ কুইন্টাল আম, বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি।
জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে বাকি দেবদেবীর আহ্বান পর্ব শেষ হয়েছে। হয়েছে জগন্নাথের দুধস্নানও। পুরীর মতো এখানেও সুদর্শন দেব, দেবী লক্ষ্মী, বিমলা ও সত্যভামাকে অধিষ্ঠিত করা হবে।

মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য় রাধারমণ দাস জানান, এদিন মূল যজ্ঞর পর সন্ধেয় ফুলে সাজানো বিছানায় শোয়ানো হবে জগন্নাথ দেবকে। পরের দিন অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার পূণ্যলগ্নে পাথরের বিগ্রহের জগন্নাথ দেব ও রাধা-কৃষ্ণর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেন, “অক্ষয় তৃতীয়ার দিন প্রথমে ভগবানকে সোনা, রুপো ও তামার তার দিয়ে বেঁধে সেই তারকে প্রধান পুরোহিতের কোমড়ে বাঁধা হবে। এরপর ঘট স্থাপন, কুণ্ড ও অবশেষে প্রতিবিম্ব।”
মন্দির সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে মহাযজ্ঞের জন্য পেঁড়া, খাজা, গজা, রসগোল্লা ইত্যাদি মিষ্টি তৈরিও করা হচ্ছে। পুরীতে যেরকম জগন্নাথের প্রসাদ হিসেবে খাজা দেওয়া হয়, তেমনই দিঘাতেও ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে পেঁড়া এবং গজা দেওয়ার কথাও আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তদারকির কাজ খতিয়ে দেখতে সোমবার দুপুরেই দিঘাতে পৌঁছেও গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছুর তদারকিও করছেন। বিকেলে ও সন্ধেতে মন্দির পরিদর্শন করেছেন। এদিন সকাল থেকে মন্দির চত্বরেই ছিলেন তিনি। বিকেলে করেন পূর্ণাহুতি।

সোমবার দিঘায় পদার্পণ করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, ‘বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে…।’ বস্তুত, ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর সফরে গিয়ে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিড পর্বে মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। তবে পরে দ্রুত গতিতে তৈরি হয়েছে ‘সম্পূরা’ আদলে মন্দির। রাজস্থান থেকে অন্তত ৮০০ কারিগর আনা হয়েছিল। কারিগরদের অনেকেই আবার অযোধ্যা রাম মন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মূল মন্দিরে থাকছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন এবং গর্ভগৃহ। আর নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে ১৬টি স্তম্ভের উপরে। সিংহাসনে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, সমুদ্রের জন্য পর্যটকরা দিঘা আসেন, এবার তার সঙ্গে জুড়ে গেল জগন্নাথের মন্দিরও। ফলে দিঘা আধ্যাত্মিকতা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হল। যা আগামী দিনে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
