ছাব্বিশ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হবে বলে একটা আলোচনা অনেক দিন ধরেই রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই আলোচনাও রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতান্তরের কারণে তা আপাতত ঝুলে রয়েছে।
কিন্তু সোমবার দিদিই রদবদলের ইঙ্গিত দিলেন। এদিন বিধানসভা ভবনে তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে তিনি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, অঞ্চল ও ব্লক স্তরে সভাপতি পদে বদলের দরকার রয়েছে বলে যদি মনে করেন, তাহলে তিন জন করে নাম পাঠান। ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অরূপ বিশ্বাসের কাছে ওই নামের তালিকা পাঠাতে হবে।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/IMG-20241227-WA0006.jpg)
এছাড়াও দিদি এদিনও বলেন, দলের রাশ এখন আমার হাতে। যেভাবে আলোচনার মাধ্যমে এখন দল চলছে, সেভাবেই চলবে। কোনও সমস্যা হলে আমি রয়েছি, আমাকে বলবেন। আর বক্সীদা তো আছেনই।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, এই নির্দেশ ও বার্তার উদ্দেশ্য ও বিধেয় পরিষ্কার। এক, তৃণমূল স্তর থেকে সাংগঠনিক রদবদল হবে। কিছু জেলায় জেলা সভাপতি পদে বদল অনিবার্য। সেই সঙ্গে অঞ্চল ও ব্লকের সভাপতিও অনেক জায়গায় বদল করবেন তিনি।
দুই, ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তালিকা জমা করতে বলা হয়েছে। তার মানে এ মাসে রদবদলের সম্ভাবনা ক্ষীণ। মার্চ মাসের আগে কিছু হবে না। এবং তিন, নেতাজি ইনডোরে একটা কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। যা এ মাসে হবে না। কারণ, বিধানসভা অধিবেশন তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। তার পর আবার শিবরাত্রির তিথি রয়েছে। তা নিয়ে অনেক জেলা পূজার্চনায় ব্যস্ত থাকেন মহিলানেত্রীরা। তাই সম্ভবত সেই কর্মিসভা হবে মার্চে। হতে পারে সেই সভাতেই বা তার পর সাংগঠনিক রদবদলের ঘোষণা হবে।
চার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেরকম ধারাবাহিক ভাবে বলছেন যে দলের রাশ তাঁর হাতে, তার মানে সাংগঠনিক রদবদলে ক্যামাক স্ট্রিট বা আই প্যাকের ভূমিকা হয়তো কমই থাকবে। দলের মধ্যে থেকেই রিপোর্ট নিয়ে রদবদল করবেন দিদি।
ছাব্বিশ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পুরসভা স্তরে বড় পরিবর্তন হবে বলে গত বছর একুশ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি এও ধারণা করা হচ্ছিল যে অন্তত একশটি পুরসভায় বদল হবে। তবে সেই প্রস্তাব আপাতত ঠাণ্ডা ঘরে চলে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বছর ঘুরলেই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে দলের সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘একবার ভুল করলে ক্ষমা করা যায়, বার বার নয়।’
বিধানসভায় সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। বুধবার পেশ হবে রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। অধিবেশন বসার আগে তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সব বিধায়ককে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দলীয় তরফে, সূত্রের খবর এমনটাই।
এ দিনের বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বিধায়কদের উদ্দেশে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, কোনও বিধায়ক যাতে বার বার ভুল না করেন। মদন মিত্র ভুল করলেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, তা-ও জানান মমতা।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের কথায়, গত দু’মাসের মধ্যে দলের একাধিক বিধায়কের মন্তব্য এবং আচরণ নিয়ে বিস্তর অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে দলকে। এই তালিকায় ছিলেন মদন মিত্র, নারায়ণ গোস্বামী, বিবেক গুপ্ত, হুমায়ুন কবীর। কিন্তু পরে অবশ্য তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে চিঠি লিখে ক্ষমা প্রার্থনা করেন মদন। তৃণমূলের একাংশের পর্যবেক্ষণ তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ, বিবেক, হুমায়ুনের (ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক) উদ্দেশেই ঘুরিয়ে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই একটি অশোকনগরের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে কিছু অসংলগ্ন মন্তব্য করতে শোনা যায় নারায়ণ গোস্বামীকে। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। যদিও তার সত্যতা ‘এই সময় অনলাইন’ যাচাই করে দেখেনি। অন্যদিকে, সম্প্রতি উত্তর কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ থেকে জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্তকে সরিয়ে শশী পাঁজাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর হুমায়ুনের ‘ঠোঁট কাঁটা’ মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন নয়। সেই জায়গা থেকে এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীদের কোর্টে কোনও লুজ় বল দিতে নারাজ তৃণমূল। সেই জায়গা থেকে দলনেত্রীর এই বার্তা অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। একইসঙ্গে দলের সকলকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে, বার্তা দলনেত্রীর।