দেশের সময় ,কলকাতা: ওডিশার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের পরিবারবর্গের হাতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুধবার আর্থিক সহায়তা তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চ থেকে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ও তাদের পরিবারের জন্য কর্মসংস্থান সহ বিশেষ আর্থিক সহায়তার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছবিগুলিতুলেছেন দেবাশিস রায় ৷

ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন আহত ও মৃতদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ডে চাকরি দেওয়ার ঘোষণাও করেন। সেই সঙ্গেই আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদি পড়তে চায়. তাহলে সেই ব্যবস্থাও করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির জেলাশাসকদের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা করবে রাজ্য শিক্ষা দফতর।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়া বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ৫০ জন ছাত্র ও ৫০ জন ছাত্রীকে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনে অ্যাডমিশন দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। যে যেখানে থাকেন, তার কাছাকাছি রামকৃষ্ণ মিশনেই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তাছাড়া পড়ুয়াদের প্রয়োজন অনুযায়ী পড়াশোনায় যাবতীয় সাহায্য করবে রাজ্য সরকার, দেওয়া হবে স্কলারশিপও।

শুক্রবার করমণ্ডল বিপর্যয়ের পরের দিনই বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বালেশ্বরে দাঁড়িয়েই বাংলার মৃতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিদেবী জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জেলাশাসকদের বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দ্রুত পাঠাতে বলেন। ওই তালিকা অনুযায়ী আজ নেতাজি ইন্ডোরে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর আহতদের দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ করে। অল্প আহতদের ২৫ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ মাস তাঁদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, এই ঘটনায় যাঁরা সামান্য আহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের পাশে যেমন রাজ্য সরকার থাকবে, তেমনই যাঁরা এই ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁরা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মানসিক অবস্থা ভাল নয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কয়েক মাস সময় লাগবে। সরকার আগামী ৩ মাস তাঁদেরও পাশে থেকে সাহায্য করবে। আপাতত তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তার পর ৩ মাস তাঁদের ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, যাঁরা কাজ চাইবেন, প্রয়োজনে তাঁদের ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। মৃতদের পরিবারের একজনকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”এই ট্রেনে করে বাইরে যারা কাজের খোঁজে যাচ্ছিলেন। পুলিশকে বলব তাদের মধ্যে কেউ এরাজ্যে কাজ করতে চান। তাহলে পুলিশের যে সিস্টেম আছে এলাকায় এলাকায় নিজের লোক রাখা সেই কাজে যদি লাগানো যায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই কাজে যতজন লাগবে ততজনকে যদি রাখা যায়। এতে মাইনে খুব কম। কিন্তু বাড়ির পাশেই কাজ। বাইরে গিয়ে থাকা খাওয়ায় যে খরচ হল তা বেঁচে যাবে।” মেয়েদের ক্ষেত্রে আশা অথবা আইসিডিএস-এ যদি তাদের কাজ দেওয়া যায়, সেটা দেখার দায়িত্ব মন্ত্রী শশী পাঁজা ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে মুখ্যমন্ত্রী
জানান, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এরাজ্যের ১০৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এখনও পর্যন্ত ফেরানো হয়েছে ৮৬টি দেহ। এখনও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী।

এই বিপর্যয়ে দুর্গত পরিবারের উদ্দেশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত কর্মী, পুলিশ কর্মীদেরও ধন্যবাদ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here