লোকসভা নির্বাচনের আগেই উত্তর ২৪ পরগনা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন জেলায় তাঁর কর্মিসভার বৈঠক ছিল। এদিনের সভা থেকে দলের নেতাদের উদ্দেশে বিরাট বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কারা কারা স্থান পেল কমিটিতে?
দেশের সময় : একসময় উত্তর ২৪ পরগনা মানেই ছিল বালুর দাপট। বর্তমানে জেলবন্দি রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একটা বড় ভূমিকা ছিল জেলার রাজনীতিতে। আপাতত তাঁকে বাদ দিয়েই লোকসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতে হচ্ছে তৃণমূলকে।
উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলা, যেখানে পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্র আছে, সেখানে এবার মমতা নিজে তৈরি করে দিলেন কোর কমিটি। পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকে মাথায় রেখে তৈরি করা হল বিশেষ কমিটি। জেলায় গুরুদায়িত্ব দেওয়া হল বিধাননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুকে। তিনি নিজে কমিটির রিপোর্ট নেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনায় ছিল তৃণমূলের কর্মিসভা। সেখানে গিয়ে মমতা জানিয়েছেন, কোর কমিটির চেয়ারম্যান করা হচ্ছে নির্মল ঘোষকে। সাংসদদের ওই কমিটিতে রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। কারণ সামনেই লোকসভা নির্বাচন, তাই নিজেদের কেন্দ্রগুলোতে নজর দেবেন সাংসদেরা।
কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকছেন ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু, তাপস রায়, নারায়ণ গোস্বামী, বীণা মণ্ডল, নুরুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দাস, মমতাবালা ঠাকুর, গোপাল শেঠ, সুরজিখ বিশ্বাস, সুকুমার মাহাতো, রফিকুল ইসমাল মণ্ডল, তাপস দাসগুপ্ত, রফিকার রহমান,গোবিন্দ দাস।
অন্যান্য সাংসদ ও বিধায়কদেরও এই কমিটি আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। কমিটির কাছে রিপোর্টও পেশ করতে হবে তাঁদের। আর সরাসরি তাঁর কাছে রিপোর্ট পেশ করার জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪ জনের একটি টিম তৈরি করে দিয়েছেন।
নির্মল ঘোষ ছাড়াও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী সুজিত বসুকে। মমতা জানিয়েছেন, সুজিত বসুর দায়িত্ব থাকবে দমদমের দিকে ও বসিরহাটে। পার্থ ভৌমিক থাকবেন ব্যারাকপুর অঞ্চলের দায়িত্বে আর হাবড়ার দিকটা দেখবেন নারায়ণ গোস্বামী। বিধায়ক নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা উঠলেও তা পছন্দ হয়নি মমতার। মঞ্চেই তিনি বলেন, ‘নুরুলের শরীর ভাল নেই। ওর যে একজন লোক আছে, সে খুব বদমায়েশ। আমি সব খবর রাখি।’
দলের কেউ যাতে শৃঙ্খলা না ভাঙেন সেই জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ নিজেরা কেউকেটা হয়ে গেছেন। আমাকে এতটা খাটতে হচ্ছে তা মনে রাখছেন না। এটা মাথায় রাখতে হবে আমরা এমনি এমনি ক্ষমতায় আসিনি।’
অর্থাৎ কোনও রকম দলীয় কোন্দল যে বরদাস্ত করা হবে না, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি নবীন প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়েও উল্লেখযোগ্য বার্তা দিয়েছেন তিনি। দলের জন্য নবীন এবং প্রবীণ দুই গোষ্ঠীকেই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন দলনেত্রী। তৃণমূলের অন্দরে চলতে থাকা আদি-নব্য দ্বন্দ্বের মাঝেই তৃণমূল সুপ্রিমোর এই বার্তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।