কলকাতা : আজ, বুধবার মহালয়া। তার আগে মঙ্গলবার এ বছরের শারদোৎসবের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোমণ্ডপে যান মুখ্যমন্ত্রী, সকলকে শাম্তিতে উৎসবে সামিল হতেও বললেন।
মহালয়ার আগে ‘উৎসব উৎসারিত’ করলেন তিনি। মঙ্গলবার লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে এ কথা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো বলে পরিচিত শ্রীভূমিতে শারদোৎসবের সূচনা করতে গিয়ে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন,পুজো উদ্বোধন নয়। ‘‘আজ উৎসব উৎসারিত হল। এর পরে অনেকেই বলতে পারেন, ‘পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন করে দিলেন’। কিন্তু আমি তেমন নই। ধর্ম সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। আমার বাবা নিয়মিত চণ্ডীপাঠ করতেন।’’
গত বছর অভিযোগ উঠেছিল, মহালয়ার আগে থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজো উদ্বোধন শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শাস্ত্রের নিয়ম দেখিয়ে কেউ কেউ দেবীপক্ষের আগেই পুজোর উদ্বোধন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মনে করা হচ্ছে সেই বিতর্ক এড়াতেই এ বার সুনির্দিষ্ট ভাবে পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন না করার প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শ্রীভূমির পুজোয় রাজ্যে সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, বুধবার হুগলির পাশাপাশি মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকাতেও ত্রাণ পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে আবার সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বলেন তিনি। আদিগঙ্গার পারের বাসিন্দা হওয়ার কারণে তিনি যে ভরা কটালের জোয়ারের সময় অনেক বার প্লাবনের মুখোমুখি হয়েছেন সে কথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বুধবার মহালয়ার (অমাবস্যা) জোয়ার আসবে। সকাল ৯টা ১৩ থেকে বিকেল ৩টে ১৭ পর্যন্ত সূর্যগ্রহণ। যাঁদের গঙ্গার তীরে বাড়ি তাঁরা বুঝতে পারবেন। আমার বাড়ি আদিগঙ্গার পারে। সেখানেও জল ঢুকে গিয়েছিল।’’
এই উৎসবের মরশুমে দুর্গতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোটি রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো হিসেবেই চিহ্নিত। এ দিন সেই পুজোর মণ্ডপ থেকে উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মমতা ভার্চুয়ালি আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া, বীরভূমের দুবরাজপুরের দু’টি দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
তার সঙ্গে ৫০টি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যুক্ত মোটরবাইকের উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, সৌগত রায়, বিধায়ক সুপ্তি পান্ডে, নির্মল ঘোষ, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, ‘এ বার উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গে বন্যা হয়েছে। আমি ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই করেছি। এমনকী, এ বার আমরা দলের নামও ব্যবহার করিনি। সবটাই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে করার চেষ্টা করেছি। আমার অনেক সহকর্মী সাহায্য করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটা জায়গায় কিচেন তৈরি করে খাবার দেওয়া যায়। আমরা চাল-ডাল-আলু-দুধের প্যাকেট সব দিয়ে ছেলেমেয়েদের দিয়ে প্যাকেট করিয়েছি। এটা কিন্তু ম্যানমেড বন্যা। তৈরি করে দেওয়া।’
সব শেষে ফের শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো ভিড়ের কথা উদ্যোক্তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানুষের অসুবিধা যাতে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখার কথা বলেন। এর আগেও শ্রীভূমির পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সতর্ক করেছেন সুজিত-সহ উদ্যোক্তাদের।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীভূমির পুজো ফেমাস। ফলে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন পুজো দেখতে। আমি বলব, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা যেন ঠিকঠাক থাকে। আগের বার আপনারা খুব কেয়ার করেছিলেন। এ বারও দয়া করে কেয়ার করবেন। কারণ, এয়ারপোর্ট যাওয়ার রাস্তা এটা। তাই যাত্রীরা যাতে কেউ বিমান মিস না করেন, তা দেখার কর্তব্য আমাদের।’