সোমবার নবান্নের বৈঠক থেকে দলের সেই শ্রমিক সংগঠনের উদ্দেশে সরাসরি কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সাফ কথা, “ট্রেড ইউনিয়ন গুলোকে বলবো অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না। দরকারি কিছু বিষয় হলে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা মেটানোর চেষ্টা করতে হবে”। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “কারও ব্যক্তিগত চাহিদার জন্য কিছু করা যাবে না। স্থানীয় কোনও নেতা যদি টাকা চান তাহলে প্রশাসনকে জানালেই হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ট্রেড ইউনিয়ন চালাতে টাকা চেয়ে জুলুমবাজি চলবে না। এটা ঠিক যে কোনও সংগঠন চালাতে অর্থের প্রয়োজন। তা চাঁদা বা অনুদান থেকেই আসে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “মানুষ যদি ভালোবেসে কোনও পার্টিকে কিছু দিতে চায় দিতেই পারে”।
এ কথা বলেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বেশ কয়েক জন নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটকের উদ্দেশে মমতা বলেন,“দুর্গাপুরের আইএনটিটিইউসির সভাপতি চেঞ্জ করতে বলেছি। হলদিয়াতেও আইএনটিটিইউসি চেঞ্জ করতে হবে। আরও কয়েকটা জায়গায় চেঞ্জ করব। যেখানে যেখানে দরকার আছে”।
মলয় ঘটক যেমন শ্রমমন্ত্রী, তেমনই বর্তমানে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি হলেন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিক সংগঠনের ব্যাপারে যে উদ্বেগ জানিয়েছেন তার দায় তাঁদের উপর বর্তায় বলেও মনে করা হচ্ছে।
কদিন আগে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, খুব শিগগির মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি শিল্প সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। সোমবার সেই কমিটির বৈঠক ছিল নবান্নে। ওই বৈঠক থেকেই শ্রমিক সংগঠনগুলিকে যেমন বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই বার্তা দিয়েছেন শিল্প সংস্থাগুলিকেও।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বাম জমানা থেকে বাংলায় শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গিপনা নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে রয়েছে তা রাজ্যে বিনিয়োগ আসার পথে বড় প্রতিবন্ধক। এদিন শ্রমিক সংগঠনকে বার্তা দিয়ে এবং এক নেতাকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সংস্থাগুলোকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে তাঁরা নিশ্চিন্তে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে তাঁদের বিনিয়োগ বিপন্ন হবে না।
শুধু শ্রমিক সংগঠনগুলিকেই নয়, প্রশাসনকেও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সচিব বিবেক কুমারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি তো জানেন টাকা না খেয়ে নিচ থেকে ফাইল ওপরে আসে না। ওটা বন্ধ করতে হবে। টাকা টাকে ফাঁকা করতে হবে”। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিশন তৈরি আছে কিন্তু আমরা অ্যাকশন নিই না। অ্যাকশন নিতে হবে। অনেক বলা হয়েছে। এবার আর বলা নয়, এবার অ্যাকশন হবে”।
বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক শিল্প বন্ধের জন্য আর যাই কারণ থাকুক না কেন, বড় ও মোটা দাগটা লেগে রয়েছে সিপিএমেরই উপর। কারণ, সাধারণ ধারণাই হল, কল কারখানা বন্ধের জন্য অন্যতম কারণ ছিল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর জঙ্গিপনা। সেই চলছে না চলবে না সংস্কৃতিই একদা শিল্প বিকশিত রাজ্য থেকে বাংলাকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে।