দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দলের রাশ থাকবে তাঁরই হাতে। সেই সঙ্গে নবীনদের একটা অংশকেও দিয়েছিলেন বিশেষ বার্তা। এবং তা ছিল যথেষ্টই কড়া। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রবীণদের অগ্রাহ্য করলে চলবে না। এর আগেই সাংসদদের বৈঠকে তিনি এক রকম স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন।
এর অর্থ তিনি নবীনদের যে দূরে ঠেলছেন, তা কিন্তু নয়। এবার সেকথাই বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই প্রজন্মের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করলেন। সূত্রের খবর, এই নিয়ে নাকি কথা হয়েছে অভিষেকের সঙ্গেও।
সামনেই পুরনির্বাচন। তাকে পাখির চোখ করেই দলের নবীনদের কাছে টানতে চাইলেন মমতা। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অন্দরের খবর, আসন্ন পুরনির্বাচনে পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদেরও টিকিট দেওয়ার কথা বলেছেন খোদ নেত্রী।
প্রায় ১০ শতাংশ আসনে নতুনদের টিকিট দেওয়ার কথাও বলেছেন মমতা। ইতিমধ্যেই নেত্রীর নির্দেশ মেনে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সি। ১০৬টি পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে তাঁরা নেত্রীকে দেবেন বলে জানা গিয়েছে। তার পর সেই তালিকা ছেঁটেকেটে চূড়ান্ত করবেন মমতা। এই কাদ অনেকটাই এগিয়েছিল। কিন্তু শনিবার মমতা নবীনদের জায়গায় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর আরও একবার নতুন করে তালিকা খতিয়ে দেখছেন সুব্রত এবং পার্থ বাবু বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলকে ভোট বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাক। তারা প্রথম থেকেই নবীন প্রজন্মকে জায়গা করে দিতে চাইছে। সেইমতো পরামর্শ দিয়েছেন নেত্রী মমতাকে। কলকাতা পুরভোটে তাদের পরামর্শ মেনে অনেক আসনেই নবীনদের তুলে আনা হয়েছে। তবে সংস্থার সব প্রস্তাব মানেননি নেত্রী এবং দলের শীর্ষ নেতারা। সেসবে তাঁরা প্রবীণদের ওপরই আস্থা রেখেছেন এবং তাতে সাফল্যও পেয়েছে দল।
এর মধ্যেই নবীন এবং প্রবীণদের একটা সংঘাত তৈরি হয়েছিল। সেই কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূলই। তখনই দলের রাশ নিজের হাতে নেন মমতা। আরও একবার বুঝিয়ে দেন, দল তিনি গড়েছেন। তিনিই সর্বময় কর্ত্রী। তাই তিনিই চরম সিদ্ধান্ত নেবেন, কোনও নবীন নয়। তা বলে নবীনরাও যে দলে গুরুত্ব পাবেন না, এমনটাও নয়। এবার ফের সেই কথাই বুঝিয়ে দলে একটা ভারসাম্য আনতে চাইলেন নেত্রী। বুঝিয়ে দিলেন, সকলকে নিয়েই এগোবে দল। নবীন এবং প্রবীণ, কাউকে পিছনে রেখে নয়।
সূত্রের খবর , রাজ্যের ১০৬ টি পুরসভায় তৃণমূলের প্রার্থিতালিকার খসড়া পাঠানো হয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে ওই তালিকা তৈরি করেছেন। মমতা সিলমোহর দিলেই এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন রয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছে, এই সাংগঠনিক নির্বাচনের পরেই পুরসভার প্রার্থিতালিকা ঘোষিত হতে পারে।
রাজ্যের পুরসভায় মোট আসনের সংখ্যা ২,৮০০-র আশপাশে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি এই পুরসভাগুলিতে ভোট হওয়ার কথা। যদিও ভোটের সম্পূর্ণ নির্ঘণ্ট এখনও রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেনি, জারি হয়নি বিজ্ঞপ্তিও।
তবে সবার সঙ্গে কথা বলে তৃণমূলের খসড়া প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন সুব্রত-পার্থরা। তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘খসড়া প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করে সুব্রত বক্সি দলনেত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে তালিকায় রদবদল করবেন।’ বামেদের জেলা নেতৃত্ব ইতিমধ্যে দফায় দফায় পুরভোটের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করা শুরু করেছেন। বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রার্থিতালিকার ঘোষণা অবশ্য এখনও শুরু হয়নি।
রাজ্যে একাধিক পুরসভা রয়েছে, যেখানে বিদায়ী চেয়ারম্যান একই সঙ্গে তৃণমূলের বিধায়ক। অভিজ্ঞ এই নেতাদের নাম ফের প্রার্থিতালিকায় থাকার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। বয়সজনিত অথবা অসুস্থতার কারণে অবশ্য সিটিং কাউন্সিলারদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে প্রার্থী না-ও করা হতে পারে। তবে সিটিং কাউন্সিলারদের বড় অংশই ফের প্রার্থিতালিকায় ঠাঁই পেতে পারেন। তৃণমূলের অভিজ্ঞ এক সাংসদের কথায়, ‘পুরসভা চালানো সহজ কাজ নয়। কাউন্সিলার হিসেবে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকলে তবেই মসৃণ ভাবে পুরবোর্ড চালানো যায়। নাগরিকদের দৈনন্দিন অনেক অভাব-অভিযোগের সুরাহা পুরসভাকে করতে হয়।’
তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষিত না-হলেও অনেক পুরসভাতেই তৃণমূলের প্রতীক দিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রার্থির নাম ঘোষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা দেওয়ালে লেখা হবে। দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি এই পুরসভাগুলির অনেক জায়গাতেই গত কয়েক সপ্তাহে তৃণমূল নেতৃত্ব কর্মিসভাও সেরে রেখেছেন।