দেশের সময়: সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রবিবার সন্ধ্যা ছটায় তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। তার আগে আজ শুক্রবার এনডিএ’র শরিকদের নিয়ে আরো একবার বৈঠকে বসছেন মোদী। এদিকে মোদীর শপথগ্রহণের সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই বিজেপির উপর চাপ বাড়াচ্ছে এনডিএ এর অন্যতম দুই শরিক দলের নেতা নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু। দুজনেই ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশকে special status দিতে হবে।
আগামী বছর বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এনডিএ এর শরিক হয়ে কেন্দ্রে সরকারে যোগ দিতে চলেছেন নীতীশ কুমার। এই পরিস্থিতিতে নীতীশের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তেজস্বী যাদব। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন নীতীশ কুমার যখন এনডিএ শরিক হয়ে সরকারের অংশ নিচ্ছেন, তাহলে তাঁকে বিহারের জন্য স্পেশাল স্ট্যাটাস আনতেই হবে। পাশাপাশি বিহারে শুরু করতে হবে কষ্ট সেন্সাস।
এদিকে বিপুল সংখ্যায় আসন পেয়ে এক দেশ এক ভোট চালু করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এই মিলিঝুলি সরকারে পক্ষে তা আদৌ পাশ করানো যাবে কিনা তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় দেখা দিয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু অবশ্য পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন এর পক্ষে নন তিনি। একইসঙ্গে বিজেপির পরিকল্পনায় থাকা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বেঁকে বসেছে নীতিশ কুমারের দল।
জেডিইউর নেতা কেসি ত্যাগি বলেছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আমাদের নীতিগত সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কোন সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এই আইন করা হয় তাহলে আপত্তি আছে আমাদের। কখনোই ওই আইন পাশ করতে দেব না। লোক জনশক্তি পার্টির পক্ষ থেকে আবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অগ্নিবীর প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। সবমিলিয়ে তৃতীয় দফার ইনিংস শুরু করার আগেই এন ডি এর অন্দরেই প্রবল চাপে মোদী।
পাশাপাশি পরিকল্পনামত শুরু থেকেই মোদীর উপর প্রবল রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে চাইছে বিরোধীরা। ভুয়ো এক্সিট পোল তৈরি করে সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে বিপুল অংকের টাকা লগ্নি করিয়ে বড়সড় কেলেঙ্কারি করা হয়েছে বলে তোপ দেখেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এ নিয়ে তিনি যৌথ সংসদীয় কমিটির অধীনে তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য মোদী ভালোভাবেই জানতেন, তাঁর দল বিজেপি ২২০ আসন পার করবে না।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এমনই রিপোর্ট দিয়েছিল মোদীকে। তারপরও তিনি শেয়ার বাজার নিয়ে মধ্যবিত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়িয়েছেন। মোদী এবং অমিত শাহ মিলে বলেছেন শেয়ারবাজারে লগ্নি করে রাখুন। চার তারিখ ফলপ্রকাশের পর বাজার আকাশ ছোঁয়া হবে। সেই মতো সাধারণ মধ্যবিত্ত শেয়ার বাজারে লগ্নি করেছেন। কিন্তু চার জুন ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই বাজারে ধস নেমেছে। শেয়ার বাজারে ডুবেছে মধ্যবিত্তের প্রায় 30 লক্ষ কোটি টাকা।
এ ঘটনার পিছনে বড়সড় কেলেঙ্কারি আছে বলেই মনে করেন রাহুল গান্ধী। এদিকে কেন্দ্রের মন্ত্রক বিলিনিয়ে রীতিমতো চাপে মোদি। কারণ, মন্ত্রিসভায় যাদের বলা হয় বিগ ফোর, সেই স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও অর্থ এই চার মন্ত্রকেরই অন্যতম দাবিদার এনডিএর শরিকরা কিন্তু এই চার মন্ত্রক কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছে না।
বিজেপির বক্তব্য, এই চার মন্ত্রক চলে গেলে বিজেপিকে কার্যত ঠুটো জগন্নাথ হয়ে সরকার চালাতে হবে। আর এটাই যে বাস্তব পরিস্থিতি তা বুঝেই ওদের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে চলেছে এনডিএ শরিকরা। মোদ্দা কথা, মাথায় কাঁটার মুকুট নিয়েই রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে নরেন্দ্র মোদিকে শপথ নিতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।