‘বিতর্কিত’ ওই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মোদী বলেন, “কোনওদিন কোনও দেশবাসী ভেবেছিল এমন হতে পারে? কিন্তু ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে তৃণমূল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশনের অপমান, আমাদের সাধু-সন্তদের এই অপমান বাংলা কোনওদিন সহ্য করবে না।”
দেশের সময় আবহাওয়ার কারণে তমলুকে সভা বাতিল করতে হয়েছে তাঁকে। তবে ঝাড়গ্রামের সভা থেকে ভার্চুয়ালি তমলুকেও বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদী।
সাধু-সন্তদের নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এদিন ঝাড়গ্রামে (Jhargram) লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে ওই ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের জন্য তৃণমূল শিবিরকে একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী। কড়া সমালোচনা করে মোদী বলেন, “কোনওদিন কোনও দেশবাসী ভেবেছিল এমন হতে পারে? কিন্তু ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে তৃণমূল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশনের অপমান, আমাদের সাধু-সন্তদের এই অপমান বাংলা কোনওদিন সহ্য করবে না।”
শুধু এইটুকু বলেই থামেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। একইসঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে তাঁর আত্মিক টানের কথাও আজ ঝাড়গ্রামের নির্বাচনী প্রচারসভা থেকে মনে করিয়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “গোটা দেশ জানে, আমার জীবন গঠনে রামকৃষ্ণ মিশনের কত বড় অবদান রয়েছে… রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি আমার কতটা টান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও যখনই সুযোগ পেয়েছি, রাত্রিবাস করার প্রয়োজনে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে গিয়ে থাকি।”
পাশাপাশি এদিন তাঁর বক্তৃতায় স্বাভাবিকভাবেই ফের একবার উঠে এসেছে দুর্নীতির প্রসঙ্গও । তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, বর্তমানে রাজ্যের সরকারের কাছে কোনও রিপোর্ট কার্ড নেই, আছে রেট কার্ড!
ঝাড়গ্রামের সভা থেকে নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে সরব হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ”কেন্দ্রে কাজ করা মোদী সরকার দেশের জনগণকে নিজেদের কাজের রিপোর্ট কার্ড দেখাচ্ছে। আর তৃণমূলের কাছে এখন আর রিপোর্ট কার্ড নেই, আছে রেট কার্ড! টাকা দাও, চাকরি নাও।” মোদীর খোঁচা, রাজ্যের সব চাকরিতেই এই রেট কার্ড লাগিয়ে রেখেছে তৃণমূল সরকার। শিক্ষার মন্দির স্কুল-কলেজকেও বাদ দেয়নি তারা।
শুধুমাত্র দুর্নীতির বিষয় নিয়ে নয়, অনুপ্রবেশ এবং সংরক্ষণ ইস্যুতেও তৃণমূলকে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর কথায়, ”বাংলার মানুষ আর তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছে না। এতে তারা ক্ষুব্ধ। তাই অশান্তির চেষ্টা করছে বারবার। গোটা দেশ বাংলাকে নিয়ে চিন্তিত। আর তৃণমূল চিন্তিত অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে।”
মোদী বলছেন, ভোটব্যাঙ্কের চাপে বারবার অনুপ্রবেশকারীদের রাজ্যে ঢোকাচ্ছে তারা। তৃণমূলের জন্যই বাংলায় হিংসা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, রাজ্যে অশান্তির ঘটনা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। পরপর বিজেপি কর্মী খুন হচ্ছেন, ঝাড়গ্রামেও একই ঘটনা ঘটছে।
তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেসকেও নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসকে ডুবন্ত জাহাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি তৃণমূলের জাহাজও ফুটো হয়ে গেছে বলে খোঁচা দিয়েছেন। নির্বাচনে তাঁদের ‘ইন্ডি’ জোটের হার যে হবেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তিনি।
একই সঙ্গে, মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয় নিয়ে কংগ্রেসকে তুলোধনা করেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন, পরিবারবাদ আর তোষণের রাজনীতি করে কংগ্রেস। আর এতদিন ধরে সংবাদমাধ্যমও তাদের বাঁচিয়েছে। মোদীর অভিযোগ, কংগ্রেস, ‘ইন্ডি’ জোটের সকলে ১০০ শতাংশ সাম্প্রদায়িক। এরা সকলেই ভারতের সংবিধানের ঘোর বিরোধী। বাকিদের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিয়ে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তারা। ‘তবে সেটা হতে দেব না’, এমনই বার্তা দেন মোদী।
বাংলার তৃণমূল সরকার জনজাতিদের উন্নতিতেও যে বাধা দিচ্ছে সেই অভিযোগও এদিন ঝাড়গ্রামের সভা থেকে করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেস-সিপিএম সকলেই জনজাতিদের প্রগতিতে বাধা দিয়ে এসেছে সবসময়। এমনকী জনজাতি মহিলাকে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি করেছে বিজেপি। সেই প্রক্রিয়াতেও তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন দল সাধারণ মানুষের কীভাবে উন্নয়ন করবে, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মোদী।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে গত শনিবার সাধু-সন্তদের প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি শিবির ওই মন্তব্যকে ইস্যু করে নাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের শাসক শিবিরকে। বিতর্কের আবহে এবার তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া সমালোচনায় বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। ঘাসফুল শিবিরকে কড়া আক্রমণ শানিয়ে মোদীর বক্তব্য, ‘ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে তৃণমূল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’