দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ম্যাচটা ভারতের মাটিতে হচ্ছে না সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে! তার একমাত্র কারণ ম্যাথিউ ওয়েড। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলেছিলেন উইকেটকিপার ব্যাটার।
মোহালিতেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটল। ১৪৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামেন ওয়েড। বাকি ছ’ওভার। এই জায়গা থেকে ভারতের ম্যাচ হারা কঠিন। কিন্তু ২১ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন ওয়েড। রোহিতদের ৪ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ তে এগিয়ে গেল ফিঞ্চরা। নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান তোলে ভারত। ৪ বল বাকি থাকতেই জয়সূচক রানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৮তম ওভারে হর্ষল প্যাটেলের বলে ২২ রানই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
একমাত্র অক্ষর প্যাটেল (৩) ছাড়া বাকি বোলাররা ব্যর্থ। রানের পাহাড় গড়েও বোলারদের ব্যর্থতায় হার। চোট সারিয়ে দলে প্রত্যাবর্তন সুখকর হল না হর্ষলের। শামিকে বাদ দিয়ে তাঁকে টি-২০ বিশ্বকাপের দলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এদিন তাঁর বোলিং নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়বে ভারতীয় থিঙ্কট্যাংকের।
ভারতের ইনিংস শেষে মনে হয়েছিল সহজেই জয় আসবে। কিন্তু উল্টো দিকের দলটার নাম যে অস্ট্রেলিয়া, সেটা বোধহয় অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন। দুর্ধর্ষ হার্দিক পাণ্ডিয়া। মাত্র ৩০ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন। ঝকঝকে ইমিংসে সাজানো ৭টি চার এবং ৫টি ছয়। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আবার স্বমহিমায়। কেরিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন পাণ্ডিয়া ব্রাদার। তাঁর কাঁধে ভর করেই দুশোর গণ্ডি পেরোয় ভারত। ২৫ বলে অর্ধশতরান সম্পূর্ণ করেন। বাকি পাঁচ বলে করেন ২০ রান। তারমধ্যে শেষ তিন বলে চক্কর হ্যাটট্রিক। অর্ধশতরান পান কেএল রাহুলও। ওপেনিংয়ে নেমে ৩৫ বলে ৫৫ রান করেন। টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান অ্যারন ফিঞ্চ। অজিদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ রোহিত, বিরাট।
৩৫ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। ১১ রানে আউট হন ভারতের নেতা। শেষ ম্যাচে শতরান করা কোহলি মাত্র ২ রানে ফিরে যান। এরপর হাল ধরেন কেএল রাহুল এবং সূর্যকুমার। তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রান যোগ করে এই জুটি। একটুর জন্য অর্ধশতরান হাতছাড়া হয় সূর্যর (৪৬)। ইনিংসের বাকি সময়টা হার্দিকের।
ভারতকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান তিনিই। স্টার্ক, স্টোইনিস, মার্শদের অনুপস্থিতিতে ম্যাড়ম্যাড়ে দেখায় অজিদের বোলিং আক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব ছিল প্যাট কামিন্স এবং জস হেজেলউডের ওপর। দ্বিতীয়জন জোড়া উইকেট নিলেও প্রথমজন ব্যর্থ। ৩ উইকেট নেন নাথান এলিস। প্রত্যাশা মতোই ছয় ব্যাটার এবং পাঁচ বোলার খেলায় ভারত। বাদ পড়েন ঋষভ পন্থ। তাঁর জায়গায় সুযোগ পান কার্তিক। কিন্তু চোট সারিয়ে দু’মাস পর দলে ফেরা যশপ্রীত বুমরাকে কেন খেলানো হয়নি সেটা বোধগম্য হল না। টি-২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত কম্বিনেশন সেট করতে হলে বুমরাকে খেলানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে খেলানো হয় বিশ্বকাপের দলে না থাকা উমেশ যাদবকে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করে অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চ ২২ রানে আউট হলেও ম্যাচে আধিপত্য ছিল অজিদেরই। দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ রান যোগ করে ক্যামেরন গ্রীন এবং স্টিভ স্মিথ জুটি। বিধ্বংসী মেজাজে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার ওপেনারকে। ৩০ বলে ৬১ রান করেন গ্রীন। তিনি এবং স্মিথ ব্যাট করার সময়, মনে হচ্ছিল অনায়াসেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু ড্রিংকস ব্রেকের পর প্রথম বলে গ্রীন আউট হতেই মাত্র ১৪ রানে পরপর তিন উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নিজের প্রথম ওভারে ১৬ রান দিলেও দ্বিতীয় ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে আবার ভারতকে ম্যাচে ফেরান উমেশ যাদব। ১২৩ রানে ৪ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। মনে হয়েছিল এই জায়গা থেকে জিতে যাবে ভারত। কিন্তু ম্যাচের স্ক্রিপ্ট বদলে দিলেন ম্যাথিউ ওয়েড। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। টিম ডেভিডকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তম উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ৬২ রান যোগ করেন। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।