দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চলছে ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচন-সহ রাজ্যের বাকি দুই কেন্দ্রের বিধানসভা নির্বাচন। নির্ধারিত সময় সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ।
বুধবারই ভোটারদের উদ্দেশে বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী তথা ভবানীপুরের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের উৎসবে নির্ভয়ে ও আনন্দে ভোট দিন। প্ররোচনা ছড়াবেন না, প্ররোচনায় জড়াবেন না।’
গোটা রাজ্যের নজর এখন ভবানীপুরের দিকে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হচ্ছে এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। মোট ৮টি ওয়ার্ডের ভবানীপুর কেন্দ্রে আজ টানটান লড়াই। তৃণূমূল প্রার্থী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি প্রার্থী প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল, বামেদের শ্রীজীব বিশ্বাস। আজ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরেও নির্বাচন।
এদিকে ভবানীপুরে মোট ৩৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মৌট ২৮৭টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে মোট ৭২ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ১২৬ নম্বর বুথে বুথ জ্যামের অভিযোগ তুলেছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথে ঘুরছেন তিনি। সব বুথে এজেন্ট দিতেও পারেননি বলে অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর।
- সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে এই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন।
- গোটা রাজ্যের নজর এখন ভবানীপুরের দিকে।
সকাল ৯টা পর্যন্ত ভবানীপুরে ভোট পড়েছে ৭.৫৭ শতাংশ
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটের লাইনে দেখা গিয়েছে ভবানীপুরবাসীকে। তবে রাজ্যের বাকি দুই কেন্দ্রের তুলনায় সকাল ৯টা পর্যন্ত ভবানীপুরে ভোটের হার কম। সেখানে ভোট পড়েছে ৭.৫৭ শতাংশ।
ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ প্রিয়ঙ্কার
ভবানীপুরে ১০৩, ১০৪ এবং ১০৫ নম্বর বুথে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ করলেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা। ১০৬ এবং ১০৭ নম্বর বুথের ৫০ মিটারের মধ্যে কলকাতা পুলিশ রয়েছে, অভিযোগ করল বিজেপি।
বিকালে ভোট দেবেন মুখ্যমন্ত্রী
বিকাল ৪টের পর মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় দুপুর ২টোর পর ভোট দিতে আসতে পারেন।
ভবানীপুরের ১০০ শতাংশ বুথেই ভোট শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। ওই কেন্দ্রের সব বুথে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মাইক্রো অবজারভার। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীও রয়েছে ভবানীপুরের বুথে বুথে। ভবানীপুরের ভোট নির্বিঘ্নে শেষ করতে তৎপর প্রশাসন।
মদন মিত্রের নেতৃত্বে বুথ জ্যামের অভিযোগ প্রিয়ঙ্কার।
মদন মিত্র কোথায়? এবার তা নিয়েই ভিন্নমত বিজেপি প্রার্থী ও তাঁর এজেন্টের। প্রার্থী প্রিয়ঙ্কার দাবি, মদন বুথ দখলের চেষ্টা করছেন আর তাঁর এজেন্ট সজল ঘোষের দাবি, মদনের এখনও ঘুমই ভাঙেনি। ঘুম ভাঙলে কী হবে বলা মুশকিল।
ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী অভিযোগ করেছিলেন, কলকাতা পুরসভার ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে মদন মিত্র বুথ দখলের চেষ্টা করছেন।
কিন্তু তাঁরই নির্বাচনী এজেন্ট সজল ঘোষ দাবি করলেন, এখনও পর্যন্ত ঠিকঠাক ভোট চলছে। তিনি বলেন,‘‘মদন মিত্রের ঘুম ভাঙলে কী হবে জানি না।’’
Madan Mitra (TMC MLA) has purposely shut the voting machine here as he wants to capture the booth: Priyanka Tibrewal, BJP candidate for Bhabanipur by-poll at polling booth of ward number 72 pic.twitter.com/lFB5hQytTY
— ANI (@ANI) September 30, 2021
ভবানীপুর উপনির্বাচনের সকাল থেকেই বুথে বুথে ঘুরছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা। এসএসকেএম হাসপাতাল এলাকায় ভিড় নিয়ে অভিযোগ জানান তিনি। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও কেন দোকান খোলা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
Madan Mitra (TMC MLA) has purposely shut the voting machine here as he wants to capture the booth: Priyanka Tibrewal, BJP candidate for Bhabanipur by-poll at polling booth of ward number 72 pic.twitter.com/lFB5hQytTY
— ANI (@ANI) September 30, 2021
রাজনৈতিক কেরিয়ারের শুরুতেই রাজীব গান্ধী তাঁকে এক অসম লড়াইয়ের ময়দানে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠিয়েছিলেন। কেউ ভাবেননি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ডাকসাইটে বামনেতার বিরুদ্ধে তিনি জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু তিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করেন, কঠিন পরিস্থিতি মানেই তিনি মাটি কামড়ে লড়বেন, ছিনিয়ে আনবেন জয়। ১৯৮৪ সালে যাদবপুর কেন্দ্রের সেই ঘটনার পর গঙ্গা দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে, শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে এক রকম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিন তিনবার, কিন্তু মমতার লড়াই আজও জারি। আজ তিনি প্রার্থী ভবানীপুর উপনির্বাচনের । লড়াই বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের সঙ্গে। প্রেস্টিজ ফাইটে নেমে মমতা চাইছেন, ভোট আসুক মিনি ইন্ডিয়ার সব স্তর থেকে। এখন দেখার ভবানীপুর তাঁর ডাকে কতটা সাড়া দেয়।
গত ২ মে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছিল। তৃণমূল ২১৩ টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে। রাজনৈতিক পরিভাষা অনুযায়ী দল ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রি পেলেও নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে খুব সামান্য ভোটে হেরে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্ব পেলেও নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রিত্ব রাখতেই তাঁকে উপনির্বাচনের পথে হাঁটতে হতো। রাজ্যে উপনির্বাচন হওয়া নিয়ে টালবাহানা কম হয়নি। বিজেপি প্রথম থেকে চেয়ে এসেছে এই উপনির্বাচন কমিশন এখনই না করুক।
অন্য দিকে তৃণমূল মরিয়া ছিল উপনির্বাচন সেরে ফেলতে। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে ২৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসন ছেড়ে দেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দিনের বিশ্বস্ত সৈনিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশন তারিখ দিয়ে জানিয়ে দেয় ভবানীপুরে উপনির্বাচন এবং সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে বকেয়া বিধানসভা ভোট হবে।
বস্তি থেকে বহুতল সর্বত্র সমান জোর দিয়ে প্রচার চালিয়েছে তৃণমূল। বরং প্রচারপর্বে কিছুটা হলেও তাল কেটেছে বিজেপির। ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের উত্থান যাঁর হাত ধরে সেই বাবুল সুপ্রিয়ই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ্অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা বাবুলকে রীতিমতো অনুরোধ করেন ভবানীপুরে প্রচারে না আসতে সম্পর্কের খাতিরে। বাবুল সে সময়ে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়কে লাগে না। তবে দল বললে তিনি নিশ্চয়ই যাবেন।
এমন বহু নাটকীয় ওঠাপড়ার পর অবশেষে ভাগ্যপরীক্ষা ঘরের মেয়ে মমতার। ভাগ্যপরীক্ষা প্রিয়াঙ্কারও। জয় হার যাই হোক না কেন, তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইটা যে প্রিয়াঙ্কাকে লাইমলাইটে নিয়ে এসছে তাতে সন্দেহ নেই।