Kolkata Police নবান্ন অভিযানে অশান্তি রুখতে বজ্র আঁটুনি, মোতায়েন থাকবে ৬০০০ পুলিশ

0
101

দেশের সময়, কলকাতা: ‘নবান্ন অভিযান’কে কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে প্রশাসন। কলকাতা ও হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি মর্যাদার একাধিক পুলিশ আধিকারিক, কমব্যাট ফোর্স, র‍্যাফ, জল কামান-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত থাকছে। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কোমর বেঁধে নামছে পুলিশ প্রশাসন।

‘ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানের অনুমতি দেয়নি রাজ্য পুলিশ। তার পরেও প্রস্তুতিতে খামতি রাখছে না কলকাতা পুলিশ। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় মঙ্গলবার মোতায়েন থাকবেন ৬,০০০ পুলিশকর্মী। ২৬ জন ডিসি (ডেপুটি কমিশনার) পদমর্যাদার আধিকারিকও থাকবেন পথে। এ ছাড়া পুলিশ ৮টি বিভিন্ন পয়েন্ট তৈরি করেছে, যেখানে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

জানা গিয়েছে, শহরের ১৯টি জায়গায় ব্যারিকেড করা হয়েছে। নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করা হবে। ড্রোনের সাহায্যে মহানগরে নজরদারি রাখবে পুলিশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সমাবেশের অনুমতি কোনও সংগঠন পাইনি। পুলিশের তরফে মেইল করে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সমাবেশে কত লোক জমায়েত হবে? মিছিলটি কোন পথে যাবে? কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে ওই সংগঠনের কোনো সাড়া না পাওয়ায় পুলিশ তাদের মতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।

পুলিশের আশঙ্কা ছিল, নবান্ন অভিযানে অশান্তি হতে পারে। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, দু’টি সংগঠনকে নবান্ন অভিযানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার পরেও সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

সোমবার সকালে রাজ্য পুলিশ জানায়, ওই মিছিলের জন্য কোনও অনুমতি তাদের থেকে নেওয়া হয়নি। রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানিয়েছিলেন। এই মর্মে মঙ্গলবারের মিছিলকে ‘অবৈধ’ বা ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করে তাঁরা জানিয়েছিলেন, নবান্নের কাছে ওই মিছিলের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে নতুন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা আইনের ১৬৩ ধারা (পুরনো ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা) জারি থাকে। অর্থাৎ সেখানে পাঁচ বা তাঁর বেশি জনের জমায়েত বেআইনি। সোমবার সকালের সেই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই তাঁদের কাছে দু’টি ইমেল এসে পৌঁছয় বলে জানিয়েছেন সুপ্রতিম। এর মধ্যে একটি ইমেল পাঠিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। কিন্তু তারা কোনও অনুমতি চায়নি। তারা শুধু পুলিশকে জানিয়েছে যে, মঙ্গলবার একটি অরাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চলেছে তারা। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নবান্নে অভিযান যাবে ছাত্রসমাজ।

পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্র সমাজের ওই ইমেলে অনুমতি চাওয়া হয়নি। পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্টের নিয়ম মেনে কর্মসূচি সংক্রান্ত যে সমস্ত জরুরি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন তাঁরা কোন পথে এগোবেন, কী কর্মসূচি , কোথায় অবস্থান করবেন, সেই সব তথ্যও জানানো হয়নি। আর সে জন্যই ওই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় ইমেলটি এসেছিল সংগ্রামী যৌথমঞ্চের তরফে। সেই ইমেলে নিয়ম মেনে অনুমতি চাওয়া হলেও তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ নবান্নের কাছে ওই ধরনের কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। এই আবহে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা প্রস্তুত থাকছে। প্রয়োজন বুঝে বদলানো হবে সিদ্ধান্ত।

কলকাতা ও হাওড়া থেকে মূলত যে তিনটে পথ দিয়ে নবান্নের দিকে আন্দোলনকারীরা আসবেন, সেই হাওড়া ময়দান,যশোর রোড ও কোনা এক্সপ্রেসওয়েকে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। হাওড়া ব্রিজে ডিসি পদমর্যাদার ৩ জন, ফারলং গেট এলাকায় ডিসি পদমর্যাদার ৩ জন, হেস্টিংস ও এজেসি বোস রোড এলাকায় পদমর্যাদার ২ জন করে পুলিশ আধিকারিক থাকবেন। এঁদের সঙ্গে প্রতিটি জায়গায়তেই পর্যাপ্ত পুলিশ, টিয়ার গ্যাস পার্টি, র‌্যাফ উপস্থিত থাকবে। হাওড়া থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে নবান্ন পর্যন্ত, এদিকে কলেজ স্কোয়ার, ইডেন গার্ডেন, হেস্টিংসের দিক থেকে মিছিল যাবে নবান্নের দিকে।

প্রসঙ্গত,সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে কোনওভাবেই আটকানো যাবে না বা প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আদালত মনে করিয়ে দেয়, প্রয়োজনে রাজ্য সরকার অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ করতে পারবে। তবে যতক্ষণ তার প্রয়োজন না পড়ছে, যতক্ষণ প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ, ততক্ষণ কোনও বাধা দেওয়া যাবে না। সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এই কথাই নবান্নকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। 

রাজ্যপাল বোসের বক্তব্য, ”বাংলার ছাত্রদের তরফে যে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা ঠেকাতে সরকার বেশকিছু নির্দেশ দিয়েছে বলে আমি খবর পেয়েছি। আমি রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কী ছিল তা মনে করিয়ে দিতে চাই। কোনও রকম শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়া যাবে না।”

প্রসঙ্গত, ১৪ তারিখ রাতের কথা এখনও ভোলেনি কেউ। শহর জুড়ে প্রতিটি এলাকাতেই রাস্তার মোড়ে বড় বড় জমায়েত হয়েছিল। পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও বলেছিলেন, এই সব জমায়েত নেতৃত্ববিহীন ছিল। ফলে কোথায় কত লোকের জমায়েত হতে পারে তা আন্দাজ করা মুশকিল ছিল। ২৭ তারিখের মিছিল নিয়েও তেমনই উদ্বেগে রয়েছে সরকার।

এর আগে ডার্বি বাতিল হওয়ার পর মোহনবাগান- ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ দাবি তুলে একসঙ্গে সল্টলেকে প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। সেই মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তারপরই কার্যত সুপ্রিম কোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নিয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছে। এখন মঙ্গলবার কী হয়, সেটাই দেখার। 

Previous articleSri Krishna Janmashtami2024: রাতের সন্ধিক্ষণে মহাভিষেক , জন্মাষ্টমীতে সেজে উঠেছে মায়াপুরের ইসকন মন্দির: দেখুন ভিডিও
Next articleNabanna Abhijan:‘মধ্যরাত থেকে হঠাৎই খোঁজ মিলছে না চার  ছাত্রনেতার’,দাবি শুভেন্দুর, নবান্ন অভিযান রুখতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি পুলিশের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here