অর্পিতা বনিক , শিলিন্দা: যত দিন যাচ্ছে বেড়ে চলেছে খুঁটি পুজোর চাকচিক্য। আগের পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধনে দেখা যেত তারকা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুঁটি পুজোর দিন থেকেই বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলগুলিতে বসে আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড়।
তেমনই রবিবার সকালে নদিয়ার শিলিন্দা বিবেকানন্দ সংঘ ও পাঠাগারের খুঁটি পুজো হয়ে গেল সাড়ম্বরে। সেই সঙ্গে সূচনার সুর বাধা হয়ে গেল বাঙালির আরও একটি বড় উৎসব আসন্ন কালীপুজোর। নিয়ম মেনে অন্যান্য বারের মতো এবছরও দূর্গা পুজোর অনেক আগেই কালী পুজোর জন্য খুঁটি পুজোর আয়োজন করেছেন ক্লাব সদস্যরা৷
এবার ৩৯তম বর্ষে পদার্পন করলো তাঁদের পুজো। ক্লাব সদস্যদের নৈপুণ্যে সাজানো হয়েছিল খুঁটি। সমস্ত আয়োজন করা হয়েছিলো কোভিড বিধি মেনেই।
গত দু বছরের মহামারীর ভয় ভুলে এলাকার বহু মানুষ সামিল হয়েছিলেন এই আনন্দযজ্ঞে। আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ক্লাব প্রাঙ্গণ৷ সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ভরে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণে সঙ্গে শঙ্খ ও ঘন্টার ধ্বনি তে মুখরিত হলো সিলিন্দা এলাকা। সকলের মনে বাজলো মায়ের আগমনের সুর। সকলের মুখে ফুটলো হাসি।
খুঁটি পুজো উপলক্ষ্যে এদিন উপস্থিত অতিথিদেরকে উত্তরীও এবং ম্মারক দিয়ে সংবর্ধিত করা হয় ক্লাবের পক্ষ থেকে৷ সেই সঙ্গে অনলাইন ডিজিটাল মাধ্যমে এবারের পুজোর থিম তুলে ধরা হয় সাধারণ দর্শকদের জন্য৷ দেখুন ভিডিও
খুঁটি পুজোর ধারণাটি আসলে এসেছে প্রায় শত বছর পুরনো এক রীতি থেকে। পূর্বে এত ক্লাব, থিম, প্রতিযোগিতার পিছনে ছোটাছুটি ছিল না। পুজো মানেই ছিল বনেদি বাড়ির সাবেকি একচালা প্রতিমা। আর সেই সময় মূলত বাড়ির ঠাকুর দালানে গড়া হত প্রতিমা। তখন থেকেই অনেকে রথযাত্রার শুভ দিনে, মাটির প্রতিমার কাঠের ফ্রেমকে পুজো করা হত। যেটি ‘কাঠামো পুজো’ বলেই পরিচিত। এরপর একটু একটু করে গড়ে উঠত দুর্গা ও কালী প্রতিমা।
বর্তমানে খুঁটি পুজো উপলক্ষে সূচনা হয় ঢাকে কাঠি পড়ার। উৎসব প্রিয় বাঙালি মন মায়ের আবাহনে উল্লসিত হয়ে ওঠে। অপরদিকে খুঁটি পুজোকে কেন্দ্র করে জনপ্রতিনিধি এবং নামজাদা সেলিব্রিটিরাও সুযোগ পান জনসংযোগ প্রচারের। খুঁটি পুজোর কথা সেভাবে শাস্ত্রে বা পুরাণে পাওয়া না গেলেও বর্তমানে এটি বাঙালির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক রূপে পরিগণিত হয়।
তবে এই খুঁটি পুজো উৎসব কবে থেকে শুরু বা এর সূচনা কাহিনী নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। পুরাণে সেভাবে এই পুজো নিয়ে কোন বর্ণনা নেই। বাঙালি কেন যে প্রতিবছর বাঁশের খুঁটি পুজো করেন তা অস্পষ্ট। কিন্তু খুঁটিপুজো বর্তমানে অন্যতম উৎসব রূপে বাঙালির মনে জায়গা করে নিয়েছে।