কলকাতা : হুজুগে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর শীত আসা মানেই বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমের শুভ সূচনা। বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছর ঘিরে মানুষের উত্তেজনা যেমন থাকে তুঙ্গে তেমনি হিড়িক পড়ে চড়ুইভাতি বা বেড়াতে যাওয়ার। থাকে, নানা রকমের উৎসব ও মেলার সমাহার। বই মেলা, আর্ট ফেস্টিভ্যাল, পৌষ মেলা, খাদ্য উৎসব, আরও কত কী…
তার মধ্যেই মানুষ উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করে তাদের চির পরিচিত হস্তশিল্প মেলা বা প্রদর্শনীর যা কিনা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে অনুষ্ঠিত হয়। দেখুন ভিডিও
বলা বাহুল্য, হস্তশিল্পের প্রতি আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ সবসময়ই বিশেষ আকর্ষণীয়। এ জাতীয় একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো এক মনোমুগ্ধকর হস্তশিল্প প্রদর্শনী এবং সঙ্গীত সন্ধ্যা । তার সাক্ষী হয়ে থাকতে দেশের সময় -এর টিম উপস্থিত হয়েছিল গল্ফগ্রীন সেন্ট্রাল পার্কে অনুষ্ঠিত হওয়া কারিগরি হাটে।
এই প্রদর্শনীতে স্থানীয় এবং জাতীয় শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেছেন এবং একইসঙ্গে দর্শকদের জন্য সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে এক সৃজনশীল সন্ধ্যা উপহার দিয়েছেন।
প্রদর্শনীতে ছিল মাটির পাত্র, বোনা কাপড়, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেতের সামগ্রী, কাঠের নকশা, ধাতব অলংকার, এবং আরও অনেক ধরনের হস্তশিল্পের সমাহার। প্রত্যেকটি সামগ্রী যেন তাদের সৃষ্টির গল্প বলে। মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত দর্শনার্থীরা শিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি তাদের কাজের প্রক্রিয়া এবং ঐতিহ্যের গল্প শুনে মুগ্ধ হয়েছেন।
বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল গ্রামীণ নারীদের তৈরি হস্তশিল্প, যা এই শিল্পে তাদের দক্ষতা ও শ্রমের প্রতীক। এ প্রদর্শনী শুধুমাত্র সৃজনশীলতার প্রদর্শনী নয়, বরং স্থানীয় শিল্পীদের জন্য আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং তাদের কাজকে আরও বেশি পরিচিত করে তুলেছে।
প্রদর্শনীর মধ্যেই চলছে সঙ্গীত সন্ধ্যা। প্রতিদিন এখানে থাকছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। স্বনামধন্য গায়িকা দীপান্বিতা আচার্য ও দুনিয়া ব্যান্ডের শিল্পীদের এক অনবদ্য পরিবেশনা মুগ্ধ করেছে উপস্তিত দর্শকদেরকে। ঐতিহ্যবাহী লোকগান থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা গান—সবকিছুরই এক অপূর্ব সমন্বয় ছিল। একদিকে প্রদর্শনীতে যেখানে চোখ জুড়ানোর মতো শিল্পকর্ম ছিল, অন্যদিকে সঙ্গীত পরিবেশনায় ছিল মন জুড়ানো সুরের মাধুর্য। সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন প্রান্তের লোক সঙ্গীত। লোকগানের সুরে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে এক অপূর্ব আবেগ সৃষ্টি হয়।
এই ধরনের ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় ও আঞ্চলিক হস্তশিল্প এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করা। এছাড়া এই উদ্যোগ শিল্পীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে এই শিল্পকলার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
এই হস্তশিল্প প্রদর্শনী এবং সঙ্গীত সন্ধ্যা এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে যেখানে শিল্প এবং সংস্কৃতি একসাথে মিলে সৃষ্টি করেছে এক মেলবন্ধন। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে সৃজনশীলতার গুরুত্ব বাড়ায় এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নতুন নতুন এমন প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রত্যাশায় থাকবে সবাই। ছবি ~ শ্রীশ কর ।