দেশের সময় , কলকাতা : অবশেষে রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। ইডির মামলায় তাঁকে জামিন দিল কলকাতার বিচার ভবন। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছিলেন বালু। তার ১৪ মাস পরে জামিনে মুক্তি পেতে চলেছেন তিনি। গ্রেফতারির সময় বালু ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি খাদ্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। নির্বাচনের পর যে সরকার তৈরি হয়েছিল, সেই সরকারে বালু ছিলেন বনমন্ত্রী।
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ম্যারাথন জেরার পর রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আদালত সূত্রে খবর, ২৫ হাজার টাকার জোড়া বন্ড এবং ৫০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে জ্যোতিপ্রিয়কে। বুধবারই বালুর জেলমুক্তি ঘটবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সমস্ত নিয়ম মেনে আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি জেলে গেলে জেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। সবটা সময়ের মধ্যে হলে বুধবারই জেল থেকে ছাড়া পেতে পারেন প্রাক্তন মন্ত্রী ।
আদালত সূত্রের খবর, অন্য একটি মামলায় আগেই জামিন পেয়েছিলেন বালু। এদিন জামিন মঞ্জুর হওয়ায় তাঁর জেলমুক্তি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তবে ৫০ লক্ষ টাকার বন্ড দিলে তবেই মিলবে জেল মুক্তি।
বস্তুত, এক সময় ইডির আইনজীবীরা জ্যোতিপ্রিয়কে ‘দুর্নীতির গঙ্গাসাগর’ বলেছিল। এইবার সেই ‘কিংপিন’-ই পেয়ে গেলেন জামিন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রমাণ এখনও জোগাড় করতে না পারায় জেলমুক্তি তাঁর। বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “দীর্ঘদিন উনি জেলে, অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন।”
বস্তুত, রেশন দুর্নীতি মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শংকর আঢ্য ও ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস। তবে প্রভাবশালী তত্ত্বে বারবার বালুর জামিনের বিরোধিতা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিন বেশ কিছু শর্তে বালুর জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এগুলি হল – তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা, বিচারপ্রক্রিয়ায় নিয়মিত উপস্থিত থাকা, সাক্ষীদের প্রভাবিত না করা। পাসপোর্ট-ভিসা জমা রাখতে হবে। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না।
অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য আদালতে একাধিকবার জামিনের আবেদন জানান জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী। এমনকী এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশে হাতজোড় করে জ্যোতিপ্রিয়কেও একাধিকবার জামিনের আবেদন জানাতে দেখা গিয়েছে। কখনও বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে বাম দিকটা পক্ষাঘাত হয়ে যাবে।’ কখনও বা বলেছেন, ‘খুব অসুস্থ। মনে হচ্ছে মরে যাব।’ এও বলেছেন, “‘আমার শরীর ভাল নয়। চিকিৎসার জন্য যেকোনও শর্তে জামিন চাই।”
প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতারের পর বার বার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, বিজেপি ‘ষড়যন্ত্র’ করেই বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। অথচ ২০২২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থকে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ এখনও জামিন পাননি। সদ্যই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। কিন্তু জামিন পেলেন বালু।