রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বন্যা কোনওভাবেই থামছে না। এবার বিস্ফোরক বিধান নগর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করলেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির দাবি জ্যোতিপ্রিয়র জন্য স্ত্রী নন্দিনী তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এই নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে করজোড়ে তিনি নিজের স্বেচ্ছা মৃত্যুও চেয়েছেন। বলেছেন, “আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না।” তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন। ঠিক কী বলেছেন ওই ব্যক্তি? কী বলছেন কাউন্সিলর? ঘটনা প্রসঙ্গে জেনে নিন বিস্তারিত
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিধাননগরের কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক? একটি ভিডিয়োতে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন কাউন্সিলরের স্বামী। ভিডিয়োটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় অনলাইন)। এদিকে এই যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর। তাঁর স্পষ্ট দাবি, এই সমস্ত মিথ্যে কথা।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এরপর একের পর এক তথ্য উঠে এসেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার বিস্ফোরক দাবি করলেন বিধাননগর পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী জয়ব্রত।
ঠিক কী বলেছেন জয়ব্রত?
সম্প্রতি কাউন্সিলরের স্বামীর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় অনলাইন। এই ভিডিয়োতে জয়ব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ২০১৭ সাল থেকে। এমনকী, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী দার্জিলিং ঘুরতে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন।
তার দাবি, বিধাননগর পুরভোটে টিকিট পাওয়ার পরেই বদলে যান নন্দিনী। স্বামীকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারণ করেছিলেন বিধাননগর পুরসভার এই কাউন্সিলর, দাবি করেছেন জয়ব্রত। ভিডিয়োতে তাঁর দাবি, ২০২২ সালে নির্বাচনে জেতার পর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্ল্যাট কিনে অন্যত্র চলে যান।
তবে সেই সময় তাঁর ফ্ল্যাট কেনার মতো টাকা ছিল না বলেই দাবি জয়ব্রতর। কে নন্দিনীকে ওই ফ্ল্যাট কেনার টাকা দিয়েছিলেন? তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন জয়ব্রত। গত সেপ্টেম্বর মাসে নন্দিনীর নতুন ফ্ল্যাটে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু, তিনি দেখা করেননি বলেই অভিযোগ। যদিও পরের দিনই জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে থানায় FIR দায়ের করেন নন্দিনী। তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও ওই ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেছেন জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে স্বামীর এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সময় অনলাইন-কে বলেন, ‘এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আদালতে মামলা চলছে। তবে যাবতীয় অভিযোগ ভুয়ো।’ এই ভিডিয়ো বার্তাটিতেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নন্দিনীর স্বামী। শুধু তাই নয়, এই গোটা ঘটনায় তাঁর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলেও দাবি করেছেন এই কাউন্সিলর।
জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ২০১৭ সালে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। তারপর থেকেই তিনি কল্যাণীতে থাকা শুরু করেন। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর অনুপস্থিতিতেই রাজ্যের মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁর স্ত্রীর।
একটি ভিডিয়োয় নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী বলেছেন, আমাদের ১৯৯৪ সালে বিয়ে হয়। ২০১৭ তে বাগুইআটি থাকাকালীন আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে চিকিৎসার কারণে আমি কল্যাণীতে থাকা শুরু করি। তবে এখানে স্ত্রী যেহেতু একা থাকতেন, তাই আমি মাঝে মধ্যে আসতাম।” জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছে, “২০১৭ সালে শুনলাম বালুদার সঙ্গে নন্দিনী তৃণমূল যোগদান করেছে। তারপর থেকে আসা যাওয়ার হিসাব নেই। রাত ১১টা সাড়ে এগারোটা কোনও সময় জ্ঞান নেই। সব সময় ফোনে ব্যস্ত।ওর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেতাম না”
তিনি বলেছেন, “লকডাউনের পরেও এসেছি। ২০২১ এ কাউন্সিলরের টিকিট পায়। এরপর থেকেই হাবভাব বদলে যায়। আমায় সোজা বলল এখানে না আসতে। এরমধ্যে আমি শুনতে পেলাম, বালুদার সঙ্গে দার্জিলিং ঘুরে এসেছিল। বালুদা বলতে অজ্ঞান। তার জন্য মুড়ি মেখে নিয়ে যচ্ছে, রান্না করে নিয়ে যাচ্ছে। ফল পাকড় নিয়ে যাচ্ছে।”
তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামীর অভিযোগ, “সেই সময় আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা হয়নি।” কীভাবে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে? এই উত্তর দিতে গিয়ে ওই ব্যক্তি বলেছেন, “মতিঝিলে থাকাকালীন ববি বলে একজন থাকত। সে পুরসভায় ব্লিচিং সাপ্লাই করত। উনি প্রথম বালুদার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। বারবার ববি বলত বালুদা ডাকছে। আমি পছন্দ করিনি।” তিনি বলেছেন, “বারবার আমার স্ত্রী বলেছে বালুদা জগিং করে, কত ইয়াং, খালি ওনার প্রশংসা।”
জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাউন্সিলর হওয়ার পর ও ফ্ল্যাট কেনে। আমি জানতাম ও না। আমি ভাবলাম এত টাকা কোথা থেকে পেল? নিশ্চয় বালুদা কিনে দিয়েছে। এমনকী ওর আত্মীয়রাও জানতেন না কোথায় ওর ফ্ল্যাট রয়েছে।” তাঁর দাবি, “গত সেপ্টেম্বর আমি অনেক খুঁজে যাই ওর ফ্ল্যাটে। তারপর আমার কোনও কথাই শুনল না। এরপর শুনি আমার নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়।”
এই বিষয়ে বিধান নগর পৌরনিগমের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়, জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করা আছে।
শুধু তাই নয়, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর দাবি জানিয়েছেন। এই ভিডিয়োটি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। উল্লেখ্য, এদিনই ইডি আধিকারিকরা অরণ্যভবনে গিয়েছিলেন। রেশন দুর্নীতির মাঝেই এই ভাইরাল ভিডিয়ো রাজ্য শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়াল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।