দেশের সময়, কলকাতা: রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়!
রবিবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। এদিন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে গিয়ে দেখা গেল ইডির দুই আধিকারিক তাঁকে ধরে আছেন। মন্ত্রী সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। কোনোরকমে ধীরে ধীরে বললেন, মনে হচ্ছে মারা যাব, শরীর খুব খারাপ। এদিন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে মন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে। সিজিও কমপ্লেক্সে দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করেন জ্যোতিপ্রিয়। আধিকারিকরা তাঁকে গাড়িতে তুলে দেন। ফিরে এলে ফের গাড়ি থেকে নামিয়ে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে যান। মন্ত্রী জানান, একটা দিক প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় এমনিতেই সুগারের রোগী। সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ইডি দপ্তরে রয়েছেন তিনি। রেশন দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সেই জ্যোতিপ্রিয়কে রবিবারই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে যখন সিজিও থেকে বের করা হয়, তখন মন্ত্রীকে ফের বলতে শোনা গেল, ‘আমার বাঁদিকটা পুরো গেছে…’।
রেশন কেলেঙ্কারি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয়কে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই তাঁকে আদালতে তোলে ইডি। কেন একদিন আগে আদালতে হাজির করানো হল সেই নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। শুনানি শেষে ৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে ইডি বারবার তিনটি কোম্পানির কথা বলছে। ইডির দাবি ছিল, গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেশন প্রাইভেট লিমিটেড ও শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট নামে এই তিনটে কোম্পানিতে ডিরেক্টর পদে রয়েছেন বালুর স্ত্রী ও মেয়ে। কিন্তু প্রথমে তা স্বীকার করেননি জ্যোতিপ্রিয়।
সূত্রের খবর, রবিবার ইডি আদালতে দাবি করে, মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করার সময় তিনি ওই তিন কোম্পানির সঙ্গে যোগের কথা স্বীকার করেছেন। ইডির আরও দাবি, জেরায় মন্ত্রী বলেছেন তাঁর নির্দেশেই ওই কোম্পানিগুলোতে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে ডিরেক্টর করা হয়।
এদিন জ্যোতিপ্রিয়র তরফে জামিনের আবেদন করা হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, ইডি হেফাজতে জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সাতদিন আগেও যখন তাঁকে আদালতে আনা হয়েছিল, সেই সময়ের থেকে এখন শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তারপরই জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী আবেদন করেন, সব বিষয় খতিয়ে দেখে তাঁর মক্কেলকে যেন কোনও সরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়।
তবে ইডির আইনজীবীর দাবি, কমান্ড হাসপাতালে নিয়মিত মন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মন্ত্রীর জেল হেফাজতের আবেদন জানায়। পাশাপাশি জেলে গিয়ে জেরা করার অনুমতিও চায় ইডি।
রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আগে বারবার বলতে শোনা গেছে, ‘আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ এর আগে যখন আদালত তাঁকে ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল, তখন মন্ত্রীকে এও বলতে শোনা যায়, ‘সাতদিন পর ফের ফিরে আসছি।’ প্রতিবারই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যে তেজের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়কে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল, আজ কিন্তু তেমন ছিল না। আজ বারবারই তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি অসুস্থ। নিজের মুখেও সেই একই কথা বলেন বালু।