দেশের সময় , কলকাতা : বাকিবুর রহমানের সঙ্গে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘পারিবারিক’ সম্পর্কের হদিশ পেল ইডি। রেশন বন্টন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমে যে সমস্ত তথ্য ইডির হাতে এসেছে, তা থেকেই এই যোগাযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন দুই পরিবারের সদস্যরা এক যোগে একাধিক সংস্থা চালাত। সেই সব সংস্থা আবার ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগও করত!
ইডি সূত্রে খবর, আপাতত এমন তিনটি সংস্থার খোঁজ তারা পেয়েছে। এই তিনটি সংস্থার নাম শ্রী হনুমান রিয়েল কন প্রাইভেট লিমিটেড, গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড। ইডির দাবি, এই তিন সংস্থা মারফত ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে অন্তত ১২ কোটি টাকা। আর অদ্ভূত ভাবে প্রত্যেকটি সংস্থাতেই কোনও না কোনও ভাবে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় এবং রেশন বন্টন দুর্নীতিতে গ্রেফতার ব্যবসায়ী বাকিবুরের পরিবারের যোগ রয়েছে।
ইডির দাবি, একটি সংস্থায় ডিরেক্টর পদে ছিলেন স্বয়ং মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের স্ত্রী। ওই সংস্থাতেই যুক্ত রয়েছেন বাকিবুরের পরিবারের অন্য সদস্যরা। এ ছাড়াও বাকি দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন মন্ত্রী বালু (জ্যোতিপ্রিয়র ডাকনাম)-র পরিবারের সদস্যরা। অথচ দেখা যাচ্ছে সেই সব সংস্থা চালাতেন বাকিবুর বা তাঁর পরিবারের লোকজন।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সংস্থাগুলিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের পরিবারের সদস্যরা ডিরেক্টর পদে ছিলেন ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত। তবে এখন আর তাঁরা ওই পদে নেই। একই সঙ্গে উল্লেখ্য, যখন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তখন জ্যোতিপ্রিয় রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী পদেই ছিলেন।
প্রসঙ্গত, রেশন বন্টন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমে ব্যবসায়ী বাকিবুরের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরেই প্রকাশ্যে আসে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের নাম। এরপরেই বৃহস্পতিবার সাত সকালে আচমকা মন্ত্রীর বাড়িতে এসে হাজির হন ইডির আধিকারিকেরা। প্রায় ২০ ঘণ্টার তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার রাত ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে।
শুক্রবার দুপুরে হেফাজতে চেয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তুলেছে ইডি।
এর মধ্যেই জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে বাকিবুরের পারিবারিক যোগাযোগের তথ্য মিলল ইডি সূত্রে। ইডির দাবি, রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার বাকিবুর একজোট হয়ে কাজ করতেন সেই সময়ে।
ইডির দাবি, সংস্থায় ডিরেক্টর পদে ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের (ডাকনাম বালু) পরিবারের সদস্যরা। আবার ওই সব সংস্থাতেই যুক্ত ছিলেন বাকিবুরের পরিবারের অন্য সদস্যরাও।রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি গ্রেফতার করার পরই তিনি সুর চড়িয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে। আজ যখন কোর্ট লকআপ থেকে তাঁকে এজলাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও চক্রান্তের ইস্য়ুতে সরব হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। এরপর তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারকের সামনে কী বললেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক?
রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডি গ্রেফতার করার পরই তিনি সুর চড়িয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে। আজ যখন কোর্ট লকআপ থেকে তাঁকে এজলাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও চক্রান্তের ইস্যুতে সরব হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। এরপর তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারকের সামনে কী বললেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক?
মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, “আপনাকে কপি দেওয়া হয়েছিল?” জবাবে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “হ্যাঁ একটা দিয়েছিল। লেখা আছে আমি কোথাও যুক্ত নই। আমার পরিবার যুক্ত। এক জায়গায় লেখা, আমেরিকা যাওয়ার টিকিট কাটা হয়েছিল, আবার বাতিল করা হয়।” মন্ত্রীকে বিচারক প্রশ্ন করেন তাঁকে তদন্তকারী অফিসাররা কোনওভাবে হেনস্থা করেছেন কি না। জবাবে মন্ত্রী বলেন, “এরা কিছু করেনি। আমার হাই সুগার আছে। পা ফুলছে। আমি স্মার্টওয়াচ পাচ্ছি না। ওটা জমা রাখা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একেবারের দীর্ঘদিনের সঙ্গী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দীর্ঘদিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা রাজনীতি সামলে এসেছেন তিনি। বলা ভাল, এ জেলার রাজনীতি তাঁর নখদর্পণে। ঠিক যেমন বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন সর্বেসর্বা। তবে এক বছর ধরে অনুব্রত তিহাড় জেলে বন্দি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বীরভূমের রাজনীতি থেকে ক্রমেই ফিকে হচ্ছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই নেতা। জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারিও উস্কে দিচ্ছে, সে প্রশ্নই। তবে কি এবার বালুও আবছা হতে শুরু করবেন উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতি থেকে?
ছাত্র রাজনীতি দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই সূত্র ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয়। তৃণমূলের একেবারে জন্মলগ্ন থেকে তিনি শীর্ষ সক্রিয় নেতা। ২০০১ সালে গাইঘাটা থেকে তৃণমূলের টিকিটে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। এরপর ২০০৬ থেকে টানা ১৫ বছর জেলার রাজনীতিতে শেষ কথা ছিলেন এই জ্যোতিপ্রিয়।
২০২১ সালের পর তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতিতেও যে পালাবদল হয়েছে, তেমনটাই মনে করেন রাজনীতির কারবারিরা। অনেকে বলেন, সেই পালাবদলে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। খাদ্যমন্ত্রী থেকে বনমন্ত্রী হন বালু। অন্যদিকে সাংগঠনিক ক্ষমতাও কমতে শুরু করে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে লোকসভা ভিত্তিক ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কোনও ভাগেই সভাপতির ভার দেওয়া হয়নি। এমনকী খাদ্য দফতর থেকে বালুর বরাতে জোটে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বনদফতর।
তবে পদাধিকারে বালু কিছুটা কোণঠাসা হলেও উত্তর ২৪ পরগনার সংগঠনে এখনও যথেষ্ট প্রভাবশালী বলেই মত দলের একাংশের। এ জেলায় মতুয়া সম্প্রদায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সেই মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্ককে একত্রিত করার ক্ষেত্রে বালুর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সে কারণেই, একটা সময়ে মুকুল রায়ের এ জেলায় আধিপত্য থাকলেও বালুর দাপটে কেউ হাত দিতে পারেনি। যদিও ইদানিং সে ছবিতেও বদল আসে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বরাহনগরের বিধায়ক তথা ব্যারাকপুর জেলার সভাপতি তাপস রায় বলেন, “প্রতিবাদে আরও সংঘবদ্ধ হবে কর্মী, সমর্থকরা। পিছু হঠা বা ধাক্কার কোনও প্রশ্নই নেই।” জেলায় সংগঠনও দুর্বল হওয়ার জায়গা নেই, দাবি তাঁর।