![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/DESHER-SAMAY_20240806150717214-150x150.jpg)
হাবড়া : জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম বারের জন্য নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ায় পা রাখলেন প্রাক্তনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দীর্ঘ ১৫ মাস পর রবিবার প্রথম নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাড়াতে পা রাখলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এ দিন সকালে তিনি হাবড়াতে পৌঁছন। দীর্ঘদিন পর তাঁদের ‘বালুদা’কে সামনে পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত ছিলেন অনুগামীরা। বিস্তর আয়োজনও করা হয়েছিল।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/DESHER-SAMAY_20250209173342006.jpg)
কাউন্সিলারদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। এলাকাবাসীর খোঁজখবর নেন। এ দিকে তাঁর আসার খবর শুনে উৎসবের আমেজ ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। রবিবার হাবড়া পুরসভার ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি পৃথক পিকনিকে অংশ নেন জ্যোতিপ্রিয়। এ ছাড়াও কুমড়ো গ্রাম পঞ্চায়েত এবং মছলন্দপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যে পিকনিকের আয়োজন হয়েছিল তাতেও যোগদান করেছেন তিনি।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/IMG-20241227-WA0006-819x1024.jpg)
এ দিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, হাবড়ার উন্নয়নই এখন তাঁর কাছে পাখির চোখ। ‘বস্ত্রহাট’-ও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি। পানীয় জল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে এ দিন জোর দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। জামিনে মুক্তির পাওয়ার পর থেকেই তিনি কবে হাবড়ায় যাবেন, সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন এলাকাবাসী।
সূত্রের খবর, অসুস্থ থাকার কারণেই কিছুটা সময় নিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই এ দিন বিধায়ককে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু এই নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তা মেনে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেননি প্রবীণ এই বিধায়ক।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/IMG-20230415-WA0031.jpg)
দীর্ঘ অন্তরালের পর বিধায়কের আগমনের হাবড়ায় ছিল সাজ-সাজ রব। তবে ১৫ মাস আগের বালুর তুলনায় রবিবারের জ্যোতিপ্রিয়কে কিছুটা ‘ভিন্ন’ লেগেছে হাবড়াবাসীর। আগের তুলনায় অনেক সংযমী দেখিয়েছে বিধায়ককে। হাবড়া গিয়ে সর্বপ্রথম তিনি যান পুরসভার অফিসে। সেখানে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/IMG-20241018-WA0091.jpg)
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘খাদ্যরসিক’ হিসেবে পরিচিত বালু। চারটি পিকনিকের আসরে গেলেও খুব বেশি খাওয়াদাওয়া করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নিজের খাদ্যাভ্যাসে অনেক বদল এনেছেন বলেই জানিয়েছেন হাবড়ার এই প্রবীণ বিধায়ক। অনেকে বিধায়ককে রাজনৈতিক বক্তৃতা করার অনুরোধ জানালেও, তা থেকে বিরত থেকেছেন আদালতের নির্দেশের কারণেই।
প্রসঙ্গত, বর্ধমানের মন্তেশ্বরের আদিবাসী না হলেও জ্যোতিপ্রিয় ছাত্রজীবন ও যৌবনকাল কেটেছে কলকাতার রাজনীতিতে। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই হাল ধরেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতির। তারই ফলস্বরূপ ২০০১ সালে গাইঘাটা বিধানসভা থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। ২০০১ সাল তো বটেই, ২০০৬ সালেও গাইঘাটা থেকে তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে গাইঘাটা তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হলে নতুন বিধানসভা কেন্দ্রের সন্ধানে হাবড়া এসে পৌঁছন বালু।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের নির্বাচনে হাবড়া থেকেই বিধায়ক হয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় খাদ্য দফতরের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য হাবড়া থেকেই জয় পান তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই হাবড়াতেই অপ্রত্যাশিত ফলে বিমর্ষ হয়ে পড়েন বালু।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/DESHER-SAMAY_20241205112012063.jpg)
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার জয় পেলেও জ্যোতিপ্রিয়ের হাবড়া থেকে ১৯ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। অভিমানের কারণে সেই ফলাফলের পর আর হাবড়ায় দাঁড়াবেন না বলে ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দলীয় নির্দেশে ২০২১ সালে আবারও হাবড়া থেকে প্রার্থী হয়ে জেতেন। তবে ১০ বছর খাদ্য দফতরের দায়িত্বে থাকার পর এ বার তাঁকে পাঠানো হয় বন দফতরের দায়িত্বে। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার। এই আবহে এ বারের লোকসভা নির্বাচনেও হাবড়া থেকে লিড পেয়েছে বিজেপি। এ বার বিজেপির এগিয়ে ছিল ১৯ হাজার ৯৩৩ ভোটের।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/SONARTORI.jpg)
উল্লেখ্য, জ্যোতিপ্রিয়কে রেশন দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তিনি প্রায় ১৪ মাস জেল হেফাজতে ছিলেন। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশেষ ইডি আদালত ৫০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং ২৫ হাজার টাকার দু’টি জামিন বন্ডে শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। সেই দিন সন্ধ্যায় তিনি আলিপুরের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান এবং সল্টলেকের বাসভবনে ফিরে আসেন। জামিনের শর্ত ছিল, জ্যোতিপ্রিয়কে তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা করতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ায় নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে, সাক্ষীদের প্রভাবিত করা চলবে না, পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না।
গ্রেফতারের প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর, ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যপাল সংবিধানের ১৬৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জ্যোতিপ্রিয়কে বন দফতর এবং শিল্পোদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠনের দফতরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখনও হাবড়ার বিধায়ক পদে রয়েছেন তিনি। তাই দ্রুত নিজের বিধানসভা নিয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন বালু। রবিবার সেই কাজ শুরু করে দিলেন হাবড়ার তিন বারের বিধায়ক।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2025/02/DESHER-SAMAY_20241205112144830.jpg)