দেশের সময়, কলকাতা:প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মঙ্গলবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। মন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে হাসপাতালে। ওই মেডিক্যাল দল জ্যোতিপ্রিয়কে পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সেই এসএসকেএম- হাসপাতালেই ভর্তি হলেন বালু! বিরোধীরা বলছেন, পুরনো ট্রেন্ডই ফলো করছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুরুটা করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া ভুবনেশ্বরে এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ফিট সার্টিফিকেট দিতেই নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে ইডি।
এরপর আবার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের ‘কাকু’। বেসরকারি হাসপাতালে বাইপাস সার্জারির পর শেষমেশ ভর্তি হয়েছিলেন এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগে। এই মুহূর্তে কার্ডিওলজি বিভাগের পাঁচ নম্বর কেবিনে ভর্তি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
সূত্রের খবর, কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হলেও হার্টের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হননি তিনি। নিউরোলজি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন। আর তাঁকে চিকিৎসার জন্য যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হল, তাতে নেই কার্ডিওলজি বিভাগেরই কোনও চিকিৎসক। প্রশ্ন উঠছে, হার্টের সমস্যা না থাকলেও কার্ডিওলজি বিভাগে কেন ভর্তি?
এক্ষেত্রে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অসুস্থতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কারণ তিনি অসুস্থতা বোধ করে চিকিৎসা করাতে এলেন কার্ডিওলজি বিভাগে। সেখানে এমার্জেন্সিতে আড়াই ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকলেন, বেডও পেলেন সেখানে। অথচ তাঁর চিকিৎসায় যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হল, সেখানে কার্ডিওলজি বিভাগের কোনও চিকিৎসকই নেই। কার্ডিওলজির তত্ত্বাবধানে তিনি নেই।
কেন নিউরো মেডিসিনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হলেন বালু?
জানা যাচ্ছে, এমার্জেন্সিতে আড়াই ঘণ্টা যখন পর্যবেক্ষণে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁর একাধিক পরীক্ষা করানো হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদের ডাক পড়ে। তাঁরা বলেন, বুকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সেরকম কোনও সমস্যা নেই। এরপর ডাক পড়ে নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের। কারণ তার আগে বালু একবার বলেছিলেন, তাঁর বাঁ দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাঁরা পরীক্ষা করেন। এরপর ঠিক হয় নিউরোলজি মেডিসিনের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হবেন তিনি।
কিন্তু কার্ডিওলজি ব্লকের পাঁচ নম্বর কেবিনে ভর্তি হন জ্যোতিপ্রিয়। হাসপাতালের বক্তব্য, আর কোথাও বেড ছিল না। কার্ডিওলজি বিভাগেই বেড ফাঁকা ছিল।
প্রশ্ন সেখানেও। রাজ্যের মন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতায় সরকারি হাসপাতালে কি সংশ্লিষ্ট বিভাগে বেডের ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না? প্রশ্ন থাকছেই। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে কেনই বা এত তাড়াহুড়ো? এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালের MSVP পীযূষ রায়কে। তিনি সবটা শুনে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,গত ২৬ অক্টোবর মাঝরাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয়। তার পর অসুস্থতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। সে বার বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মন্ত্রী। গত ১৬ নভেম্বর নিম্ন আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের। অসুস্থতার কারণে তাঁকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির করানো হয়েছিল। সে দিন তিনি বিচারককে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বাঁচতে দিন।’’ তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর ৩৫০-এর বেশি সুগার। হাত-পা কাজ করছে না।
বালুর কথা শোনার পর বিচারক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘আপনার অসুবিধা হলে সেলে চলে যেতে পারেন।’’ এই শুনানির পরের দিনই প্রেসিডেন্সি জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়। কাশি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর আগে এক দিন ইডি হেফাজত থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যাওয়ার সময়েও জ্যোতিপ্রিয় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীরের বাঁ দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সে দিন তাঁর বাঁ হাত নড়াচড়া করতেও দেখা যায়নি। মঙ্গলবার আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন ধৃত মন্ত্রী।