দেশের সময়, কলকাতা: “আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ।” ইডির দফতর সিজিও কমপ্লক্স থেকে বেরিয়ে জ্যোতিপ্রিয় তিন বার এভাবেই বলে তিনি আরও এক বার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক ৷
সোমবার আদালতে পেশ করার আগে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে বার করা হয়। তার পরই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এরা যা করেছে, অন্যায়, অনৈতিক কাজ করেছে।” এর পাশাপাশি আদালতের উপর ভরসা রাখার ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “ আদালত নিশ্চয়ই বিচার করবে।” তবে কে বা কারা ‘অন্যায়’ কিংবা ‘অনৈতিক’ কাজ করেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের এ দিনের কথায় তা স্পষ্ট হয়নি। জ্যোতিপ্রিয় জানান, তিনি ‘অসুস্থ’।
আজ, সোমবার। গোটা বাংলাকে দেওয়া রেশন দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চার দিনের সময়সীমা শেষ হল এদিন। আগের দিন সংবাদমাধ্যমকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “দিন চারেক পরেই সবাই সব কিছু জানতে পারবেন।” তিনি বলেছিলেন, ” আমি মুক্ত হয়েই গিয়েছি। আর চার দিনের অপেক্ষা।” গোটা বাংলার কাছে বালুর এই বক্তব্য জটিল ধাঁধা তৈরি করেছিল। বালুর আজ আদালতে পেশ।
এদিন বালু আদালতে কী বোমা ফাটাবেন, সেটাই ছিল লাখ টাকার প্রশ্ন! কিন্তু এদিন আর বালুর মধ্যে সেই ‘তেজ’ দেখা গেল না। দৃশ্যত বালু বিধ্বস্ত। সাংবাদিকদের হাজারও প্রশ্নবাণের মুখে গাড়িতে ওঠার সময়ে বালু কেবল বললেন, ‘আমি ভাল নেই’-
বেলা বারোটার কিছু পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বার করা হয় মন্ত্রীকে। বাইরে ভিড় ছিল সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকদের। আগের দিন মন্ত্রী নিজে সাংবাদিকদের বুমের সামনে এসে নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে দু’দিন আগে কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রিয় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নাম করেছিলেন। কিন্তু এদিন তাঁর মাথা নীচু ছিল। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার বুম এগোলেও, মন্ত্রী কেবল জবাব দিয়েছেন তিনি ভাল নেই। গাড়িতে উঠে যান তিনি। তদন্তকারীদের গাড়ি রওনা দেয় আদালতের উদ্দেশে।
গত চার দিনে মন্ত্রী একাধিকবার তদন্তকারীদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তাঁকে রাত কাটাতে হয়েছে ইডি হেফাজতে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ভাল নেই বালু? তবে কি তিনি বিপদের গন্ধ শুঁকেছেন? নাকি তাঁর আত্মবিশ্বাসে কোথাও কোনও ঘাটতি পড়ল?
এই চার দিনের মধ্যে ইডিও আরও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক নথি। গত শনিবারও ২৭ ঘণ্টা টানা তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথি। এমনকি সূত্রের খবর, ইডির হাতে এমন কিছু তথ্য এসেছে, যেখানে বিহারের পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিরও লিঙ্ক মিলছে।
সূত্রের খবর, সেই সমস্ত কিছু আদালতে পেশ করতে চলেছে ইডি। এগুলোর ওপর হাতিয়ার করেই আগামী সাত দিন বালুকে নিজেদের হেফাজতে রাখার আবেদন জানাতে চলেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, এদিকে, আবার মন্ত্রীর আইনজীবীও জামিনের আবেদন জানাতে চলেছেন।