দেশের সময় কলকাতা : একাধিকবার চিঠি চালাচালি। একধিকবার বৈঠকের ডাক দিয়েছেন দু’পক্ষ। তবে ফলপ্রসু হয়নি। অবশেষে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রায় দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে বৈঠক। সেই বৈঠকের পরই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়ে তাঁদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা প্লিজ় কাজে ফিরুন। আমরা আপনাদের তিনটে দাবি মেনে নিয়েছি। দায়বদ্ধতা দুই পক্ষেরই থাকে। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষের কাছে ডাক্তার ভগবান। তাই আপনারা কাজে ফিরুন।’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। মঙ্গলবার বিকেলে নতুন সিপি-কে নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসক দেবাশিস হালদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা চিকিৎসক কৌস্তভ নায়েককে বদল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করিনি। কিন্তু ওঁদের বিরুদ্ধে যেহেতু চিকিৎসকদের ক্ষোভ আছে, বলেছে ওঁদের উপর আস্থা নেই, তাই আমরা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি এও জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টের পর কলকাতা পুলিশের কমিশনার বদল করা হবে। যতক্ষণ না আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছে, ততক্ষণ এই রদবদল হবে না। এছাড়াও পুলিশে আরও কিছু রদবদল হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যভবনে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা জানান, কলকাতা পুলিশের সিপি, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে সরানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সে আশ্বাস মৌখিক। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদারের কথায়, “যতক্ষণ না অবধি এর বাস্তবায়ন ঘটছে, ততক্ষণ অবধি আমরা আমাদের আন্দোলন, অবস্থান, কর্মবিরতি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। আগে বাস্তবায়ন হবে, সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার শুনানি হবে, তারপর আমরা প্রত্যেকটা কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা সকলে বসে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেব। তার আগে নয়।”
দেখুন ভিডিও
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বৈঠক শেষে বেরনোর পর জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন জানিয়েছিলেন, বৈঠক সদর্থক হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দুই পক্ষ সহমত না হলেও কয়েকটি দাবি মানা হয়েছে। পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমে জানান, সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সহ ডিসি নর্থকেও সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভস্থলে ফিরে গিয়েছে ডাক্তাররা স্পষ্ট করেন, এরপরও তাঁরা অবস্থান বা কর্মবিরতি তুলছেন না।
জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট কথা, যতক্ষণ না সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হচ্ছে, অপসারণ করা হচ্ছে পুলিশ কমিশনারকে ততক্ষণ কর্মবিরতি যেমন চলছে, চলবে। পাশাপাশি তাঁরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর তাঁরা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। মঙ্গলবারই রয়েছে শীর্ষ আদালতে আরজি কর মামলার শুনানি।
কিন্তু ঠিক কোন বিষয়ে বৈঠকের পরও সন্তুষ্ট নন ডাক্তাররা? তাঁরা বলছেন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য শুধু মাত্র টাস্ক ফোর্স গঠন করে এই সমস্যার সমাধানের কথা বলেছে সরকার। যেটা সম্ভব নয়। তবে এখনই সব রাস্তা বন্ধ নয়। তাঁরা আবার আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। এছাড়া দুই স্বাস্থ্যকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রিন্সিপাল স্বাস্থ্য সচিবকে সরানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে নিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট জুনিয়র ডাক্তাররা।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ওই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার ফের সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে শীর্ষ আদালতে। স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা সিবিআই-এর। কী হবে এই মামলার শুনানিতে, সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য এবং দেশের মানুষ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা শীর্ষ আদালতে কী রিপোর্ট জমা দেয় তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সকলের। কারণ এই শুনানির আগে আরজি করের খুন-ধর্ষণ মামলাতেও গ্রেফতার হয়েছেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁর সঙ্গে সিবিআই গ্রেফতার করেছে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।