দেশেরসময় , উত্তর ২৪ পরগনা : ফুটবল খেলতে গিয়ে মাঠে পড়ে কোমর থেকে দু’পায়ের শক্তি হারায় গোবরডাঙার বেরগুম পঞ্চায়েতের পেয়ারাতলার বাসিন্দা কুশল মণ্ডল।

তার পর ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে পেরিয়ে যায় প্রায় ৮ বছর। এখন ট্রাই সাইকেলে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন তিনি। কুশলের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে।
পরিবার সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করে গোবরডাঙার কুশল মণ্ডল। কুশলের বাবা ওষুধের দোকানের কাজ করেন। পরিবারে রয়েছে বাবা, মা ও ভাই। অভাবের সংসারে সকলের প্রত্যাশা ছিল পড়াশোনা শেষ করে বড় ছেলে সংসারের হাল ধরবে।
কিন্তু ভাগ্য বদলে গেল ফুটবল খেলতে গিয়ে। পড়ে গিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত শক্তি হারায় তিনি। প্রথমে এনআরএসে অস্ত্রোপচার হয় কুশলের। তবে তা সফল হয় নি। মেডিক্যাল রিপোর্টে টিবি না থাকলেও যক্ষার ওষুধ খাওয়ানো হয় তাঁকে। ভুল চিকিৎসায় কারণে ক্রমশ শরীর খারাপ হতে থাকে কুশলের। শেষে এক প্রকার শয্যাশায়ী হয়ে যান কুশল। ছয় মাস পর ঠাকুরনগরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এ ভাবেই পেরিয়ে যায় ২০১৮ সাল। তারপর এসএসকেএমে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় এনকাইলোসিস স্পন্ডালাইসিস আক্রান্ত। কখনও আরজি কর কখনও এসএসকেএমে চলে চিকিৎসা। অবশেষে ঠিক হয় আরজি করে তাঁর কোমর ও হাটুর প্রতিস্থাপন হবে। তবে অস্ত্রোপচারে নির্ধারিত দিনের আগেই শুরু হয় লকডাউন। ফলে অপারেশন না হয়ে হাসপাতালেই কাটে গোটা তাঁর করোনার সময়।
হাঁটুর অস্ত্রোপচার হলেও সফল হয়নি। তারপর দ্বিতীয়বারও অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ভাবেই হাসপাতালে কাটে প্রায় দেড় বছর। শেষে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে কলকাতার একটি নামি সরকারি হাসপাতালে কুশলের ডান পায়ের হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়। এই কঠিন লড়াইয়ের মাঝেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
এখন তিনি ট্রাই সাইকেলে চড়ে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা হাবরা-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এই তিন চাকার গাড়িতে চেপে নিজের লক্ষ্যে অবিচল কুশল। কুশলের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পাড়া প্রতিবেশী সকলেই।