Indian idol Singer Deboshmita Roy: বিশ্বমঞ্চে দেবস্মিতাকে দেখতে চায় বনগাঁবাসী, উচ্ছ্বাসে ভাসছে ইছামতীর শহর : দেখুন ভিডিও

0
1356

দেশের সময় : অরুণিতা কাঞ্জিলালের পর দেবস্মিতা রায়। সীমান্ত শহর বনগাঁর মুকুটে যোগ হল আরও একটি পালক। বনগাঁ থেকে মুম্বই, টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ যিনি মাতালেন তাঁর সুরের জাদুতে।

সম্প্রতি শেষ হয়েছে দেবস্মিতার এই সুরেলা সফর। কোড়ারবাগানের বাড়িতে ফিরেছেন বনগাঁর এই কৃতী সন্তান। তাঁকে ঘিরে এখন উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পরিজন থেকে বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশিরা। শহরের গর্বকে বরণ করে নিতে মোটেই দেরি করেনি বনগাঁ পুরসভাও। শনিবার রীতিমতো শোভাযাত্রা করে বনগাঁ উৎসব 2023-এর সংবর্ধনার মঞ্চে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে। সবমিলিয়ে নিজের প্রাণের শহরের মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত সরোজিনী নাইডু কলেজের কলাবিভাগের স্নাতক এই ছাত্রী। তাঁর কথায়, এতদিন আমাকে সবাই অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। আমার হয়ে ভোট করেছেন। প্রত্যেকের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আগামী দিনেও চলার পথে এভাবে সবাইকে পাশে পাব, এটাই আশা করি।

সাফল্যের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দেবস্মিতা। কিন্তু শেষপর্যন্ত ট্রফিটা তাঁর হাতে ওঠেনি। প্রথম রানার্সআপ হয়েছেন। এনিয়ে মনের কোণে একটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে। কিন্তু তিনি মনে করেন, তাঁর গান মন ছুঁয়ে গিয়েছে মানুষের। ‘রোজ রোজ আঁখো তলে…’ কিংবা ‘জানে কেয়া বাত হে…’ দেবস্মিতার গলায় শুনে আবেগে কেঁদে ফেলেছেন টিভির পর্দার দর্শক-শ্রোতারা। ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে উদিত নারায়ণ, হিমেশ বা রানি মুখার্জীর মতো বিচারকরা চেয়ার ছেড়ে উঠে তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন, বলেছেন, তুমি প্লে ব্যাকের জন্য একেবারে তৈরি, এটাই জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন দেবস্মিতা। দেখুন ভিডিও

তবে ইন্ডিয়ান আইডলে রানার্সআপ হয়েই স্বপ্নের দৌড়কে থামিয়ে দিতে চান না দেবস্মিতা। তাঁর কথায়, জীবনে এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি। আমি শিখতে চাই। ছোট ছোট ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। গানই আমার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা। এই ভালোবাসাকে নিজের মনের করে অনেক যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।

এই স্বপ্ন নিয়েই এবার ওয়ার্ল্ড ট্যুর শুরু করতে চলেছেন দেবস্মিতা। সুরের জাদুতে বিশ্বমঞ্চ মাতানোর লক্ষ্য নিয়েই তাই নতুন করে প্রস্তুতি শুরু। বাবা দেবপ্রসাদ রায় বললেন, আমেরিকা ও লন্ডনে প্রোগ্রাম করার কথা। দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ওই সফরের জন্য রওনা হতে হবে মনে হচ্ছে। 

সাফল্যের আলো দেবস্মিতার উপর এখন ঠিকরে পড়লেও জার্নিটা মোটেই এত সহজ ছিল না। বললেন, টিভিতে গানের অনুষ্ঠান বরাবর দেখি। বাবা গানের শিক্ষক হওয়ায় আমাদের বাড়ির পরিবেশটাই গানময়। সারাক্ষণই গুনগুন করে গান গাইছে সবাই। টিভি দেখেই ইন্ডিয়ান আইডলের অডিশনের কথা জানতে পারি। উল্টোডাঙায় অডিশন ছিল। কলকাতা থেকে আমরা ৭৭ কিমি দূরে থাকি। এতদূর থেকে সময়ে পৌঁছনোটা সত্যিই সমস্যার। তাই রাত জেগে স্টেশনে গিয়ে বসেছিলাম।

তারপর রাত ২টো ৪৫মিনিটের ফার্স্ট ট্রেন ধরে পৌঁছয়। দীর্ঘ লাইনে গিয়ে যখন অডিশনের লাইনে দাঁড়াই। তখন গোটা শরীর ক্লান্ত। কিন্তু মনে অসম্ভব জোর ছিল। জানতাম, সুযোগ বারবার আসে না। ফলে এই লড়াইয়ে জিততেই হবে। ফলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে গেয়েছিলাম। একের পর এক রাউন্ড টপকে এগিয়েছি। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে মনে। তারপর একসময় মুম্বই থেকে ফোন এল। জানানো হল, কলকাতার অডিশনে পাশ করেছি। ফলে এবার আরব সাগরের তীরের শহরে অডিশন দিতে হবে। খবরটা পাওয়ার পর আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। স্বপ্নেরা যেন মুহূর্তে ডানা মেলেছিল। প্লেনে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তাই ট্রেনেই আমরা পৌঁছেছিলাম মুম্বই। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। 

কেমন ছিল ইন্ডিয়ান আইডলের দিনগুলো?

দেবস্মিতার কথায়, পুরোটাই স্বপ্নের মতো। তবে প্রতি মুহূর্তে বাধা টপকাতে হয়েছে। মুম্বই যাওয়ার দিন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, যাওয়াটাই একপ্রকার বাতিল হতে বসেছিল। আমাদের ট্রেন ছিল শালিমার থেকে। বাবা-মা ও আমি স্টেশনে পৌঁছেছিলাম। মা টিফিন বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমনটা হয়। কিন্তু তখনও জানতাম না, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। তবে স্টেশনে অপেক্ষা করা যাত্রীদের চোখেমুখে কেমন যেন একটা বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করছিলাম।

জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারি, আমরা যে ট্রেনে মুম্বই যাব, সেটা বাতিল হয়েছে। কথাটা শুনেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মায়ের মুখটা মুহূর্তে চুপসে যায়। বাবা সাহস জোগায়। কিন্তু বারবার বলতে থাকে, শুরুতেই বাধা পড়ল এভাবে! আমি অবশ্য মনের জোর ধরে রেখেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বনগাঁয় এক দাদাকে ফোন করে বলি, যেভাবেই হোক, মুম্বইয়ে পৌঁছনোর একটা ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিতে। পরদিন সকালে ট্রেনের টিকিট মেলে। স্টেশন থেকে একটা ছোট পলিথিন কিনে সেটা বিছিয়ে পালা করে আমি, বাবা ও মা ঘুমিয়েছিলাম প্ল্যাটফর্মে। সারারাত এভাবে কাটে।

তারপর ট্রেন ধরে মুম্বই পৌঁছয়। অডিশনের মঞ্চে পা রাখতেই অবশ্য আমার দীর্ঘ পথের ক্লান্তি ঘুচে গিয়েছিল। একটা করে দিন গিয়েছে, আবার পরের ধাপ পেরনোর জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। গোল্ডেন মাইক যেদিন হাতে উঠেছিল, সেদিনও ভাবতে পারিনি সাফল্যের শিখরের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। দেবস্মিতার কথায়, ইন্ডিয়ান আইডলের সিজন ১৩-তে প্রথম রানার্সআপ হয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের প্রতিযোগীদের মধ্যে কেউ কাউকে নিয়ে কোনওদিন হিংসা করিনি। বন্ধুর মতো মিশেছি। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সেরাটা উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কয়েকমাসে আমরা একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। 

বাবা দেবপ্রসাদ রায় পেশাদার গানের শিক্ষক। মা মিতাদেবী গৃহবধূ। বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী দেবস্মিতার কথায়, খুব ছোট থেকেই আমি গান গাই। যখন সাড়ে তিন বছর বয়স, পাড়ায় প্রথম স্টেজে গান গেয়েছিলাম। বাবা খুশি হয়ে আমাকে হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিল। বাবাই আমার প্রথম গানের শিক্ষক।

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান দেবস্মিতা বলছিলেন, আমাদের তখন একটাই ঘর ছিল। সেখানেই রান্না-খাওয়া, শোওয়া। আবার ওই ঘরেই বাবা গান শেখাতে বসতেন। ফলে গানের ক্লাস শেষ না হলে আমাদের রান্না খাওয়া হত না। এভাবেই দিন কেটেছে। কিন্তু এটুকু বুঝতাম, প্রতিকূলতাকে জয় করতে না পারলে জীবনে সাফল্য আসে না। আজ আমি খুব খুশি। তবে আজ যেটুকু পেরেছি, তা শুধুমাত্র আমার বাবা-মায়ের জন্য। 

এরআগে ইন্ডিয়ান আইডলের সিজন ১২-তে প্রথম রানার্সআপ হয়েছিলেন বনগাঁর পশ্চিমপাড়ার মেয়ে অরুণিতা। আর এবার দেবস্মিতা। ফলে বনগাঁবাসীর গর্বের যেন অন্ত নেই। পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠের কথায়, অরুণিতা যেমন আমাদের গর্ব, দেবস্মিতাও আমাদের গর্ব। তাঁর গানের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছে আসমুদ্র হিমাচল।

দেবস্মিতা ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে ‘রোজ রোজ আঁখো তলে’ যে গান গেয়েছেন, তা শুনে টিভির পর্দায় আবেগে ভেসেছেন কোটি কোটি মানুষ। উজাড় করে তাঁরা দেবস্মিতাকে ভোট দিয়েছেন। তাঁকে বনগাঁ পুরসভার তরফে সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা চাই, আগামী দিনে এই শহর থেকে নানা ক্ষেত্রে এমন আরও কৃতী সন্তান নিজেদের দেশ ও বিশ্বমঞ্চে মেলে ধরুন। বিকশিত করুন তাঁদের প্রতিভার। বনগাঁ পুরসভা সবসময় ওই কৃতীদের পাশে থাকবে। এবার বিশ্বমঞ্চে দেবস্মিতাকে দেখতে চায় বনগাঁবাসী ৷

অরুণিতার মতোই দেবস্মিতার স্বপ্নের দৌড় ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে প্রথম রানার্স আপেই থেমে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, তা হলে সঙ্গীতেও বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে? অরুণিতা বা দেবস্মিতা বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন বলেই কি তাঁদের হাতে উঠছে না চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা? দেবস্মিতা অবশ্য নিজেকে এই বিতর্কের মধ্যে জড়াতে চান না। তাঁর কথায়, আমার গান সবার ভালো লেগেছে। বহু মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। গানের মধ্যে দিয়েই আমি সবার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিতে চাই।

Previous articleDesher Samay epaper দেশের সময় ই পেপার
Next articleKKR-GT: পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা! অবিশ্বাস্য জয় নাইটদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here