দেশের সময়: কারও আপত্তি জেলা ভাগে। কারও আবার আপত্তি নাম নিয়ে। 

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ভাঙছে। তিন টুকরো হচ্ছে। বনগাঁ মহকুমা অর্থাৎ বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটাকে নিয়ে নতুন জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রস্তাব রাখা হয়েছে, নতুন এই জেলার নাম হবে ‘ইছামতী’। এই ঘোষণার পর থেকেই গোল বেঁধেছে।

প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। জেলাভাগের গুণে যোগ-বিয়োগের অঙ্কে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন জেলা ইছামতীর নামকরণ যদি স্থানীয় মানুষের আবেগের স্বীকৃতি হয়ে থাকে, তা হলে একইসঙ্গে বনগাঁ নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের অপমৃত্যু ঘটতে চলেছে না তো? কিছু মানুষ আবার অবিচ্ছেদ্য উত্তর ২৪ পরগনার পক্ষেই। এভাবে জেলাকে ভেঙে টুকরো করা মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। তিলোত্তমা কলকাতার কোলের শহর বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনা। এমনকী বৃহত্তর কলকাতার অনেকাংশই এখন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত। সেখানে ইছামতী জেলা করে বনগাঁ মহকুমার বাসিন্দাদের একটি প্রান্তিক জেলায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা বলেও মনে করছেন অনেকে। দেখুনভিডিও

আবার এ প্রশ্নও উঠছে, প্রশাসনিক কাজকর্মের সুবিধার্থে জেলা ভাঙার কথা বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই জেলার ভবিষ্যৎ কী। বনগাঁ মহকুমাকে নিয়ে তৈরি হতে চলা নতুন জেলায় আদৌও কি এমন কোনও শিল্প, কলকারখানা কিংবা নিজস্ব অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত করতে পারে, এমন কোনও কিছু রয়েছে কী? তা হলে এই জেলা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে কোথা থেকে? আর একটি জেলা থেকে যদি কোনও রাজস্ব না আসে সরকারের ঘরে, সেক্ষেত্রে সেই জেলার উন্নয়নে কি রাজ্যের আদৌও নজর থাকবে। সেক্ষেত্রে নামে জেলা হলেও আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েই থেকে যেতে হবে না তো বর্তমান বনগাঁ মহকুমার বাসিন্দাদের!

সুতরাং নতুন জেলা করার সিদ্ধান্তে যখন সরকারি সিলমোহর পড়েই গিয়েছে, তখন নামকরণ নিয়ে যেমন হইচই চলছে, সঙ্গে এই দাবিও জোরালো হোক, নতুন জেলায় বিনিয়োগ আনতে বিশেষ গুরুত্ব দিক রাজ্য। গড়ে তোলা হোক কৃষি ভিত্তিক শিল্প। নতুন জেলা হলে বনগাঁ, বাগদা কিংবা গাইঘাটার মানুষকে যেমন যে কোনও প্রশাসনিক কাজের জন্য অনেকটা পথ উজিয়ে আর বারাসতে যেতে হবে না, তেমনই এই অঞ্চলের মানুষের পেটের ভাত জোগাড়ের জন্যও যেন ভোরের আলো ফোটার আগে ট্রেন ধরে কলকাতামুখী হতে না হয়। নিজের জেলাতেই যেন তাঁরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পান, সেই চেষ্টার দিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিক সরকার। শুধুমাত্র পেট্রাপোল সীমান্তের উপর ভর করে নতুন জেলার অর্থনৈতিক বুনিয়াদ কখনও দৃঢ় হতে পারে না, এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে, বলছেন অর্থনীতিবিদরা। 

বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ অবশ্য রাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, জেলার নাম ইছামতী হলে তো আর বনগাঁর নাম মুছে যাচ্ছে না। তাহলে আপত্তি কোথায়। ইছামতীকে ঘিরে দুই বাংলার মেলবন্ধন গড়ে উঠেছে। কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইছামতীকে ঘিরে কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। নীলবিদ্রোহের ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে এই নদী। ইছামতী একটি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এসব নিয়ে ভাবতে হবে এলাকার বিদ্বজনদের। নদীয়া বা মুর্শিদাবাদে কী হচ্ছে তা দেখলে হবে না। এখানকার প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, ইছামতী আমাদের প্রাণ। ফলে  জেলার নাম ইছামতী হলে খুবই ভালো। আর ইছামতীর সঙ্গেই তো বনগাঁ যুক্ত। এই নদীর সংস্কার নিয়ে আমি আগেও বিধানসভায় বলেছি। নিশ্চয় এই নদীর জীবন ফেরাতে কাজ হবে।

বনগাঁর ভূমিপুত্র বিশিষ্ট কবি বিভাস রায়চৌধুরী বলছেন, আপাতভাবে নতুন জেলা হিসেবে ‘ইছামতী’ নামটা ভালোই লাগছে। কিন্তু প্রশাসনিক কারণে যখন একটা জায়গার নাম বদলে যায়, তখন তো পুরনো নামটার জন্য একটা মন কেমন থাকেই। যদি বনগাঁ শহরের নাম বনগাঁ থাকে, আর জেলার নাম ইছামতী হয়, তা হলে সমস্যা কোথায়। আর বিষয়টা পুরোপুরি প্রশাসনিক। যদি জেলা ভাগ করা উচিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সেক্ষেত্রে আলাদা বিষয়। এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন, বাগদা কিংবা গাইঘাটা অঞ্চলকেও তো নতুন জেলার মধ্যে ধরা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যদি জেলার নাম বনগাঁ হয়, তা হলে ওইসব অঞ্চলের মানুষ সেই নাম মানবেন কেন। যাঁরা বলছেন, ইতিহাসের অপমৃত্যু হবে, তাঁরা কি বনগাঁর ইতিহাস নিয়ে খুব চিন্তিত?

সমাজের জন্য তাঁদের কী বিরাট অবদান রয়েছে, সেটাও ভেবে দেখার। আসলে কিছু মানুষ শুধুমাত্র প্রশ্ন তুলে দিয়েই হাতগুটিয়ে নিতে ব্যস্ত। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন। নদীর নামে জেলা হলে অসুবিধা কী। তবে তার সঙ্গে অবশ্যই সেই নদীকে বাঁচিয়ে তোলার আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। এখন বিষয়টি হল, শুধুমাত্র কাগজে কলমে লেখার জন্য একটি জেলার নামকরণ করা হচ্ছে। এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক কারণ। ইছামতী নদীর দু’পাড়ের মানুষরাও তো নদীর আজকের এই বেহাল অবস্থার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী। যখন জলপথ ছিল, তখন গোটা পৃথিবীতেই নদীগুলি যত্ন পেত। কিন্তু যখনই স্থলপথ হয়ে গেল, তখন থেকেই নদীর প্রতি প্রকট হতে থাকে উদাসীনতা। এটা মানুষের স্বার্থপরতার নিদর্শন। এই সমাজ যাঁরা চালান উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত, তাঁরা ইছামতীকে বাঁচিয়ে তুলতে কতটা এগিয়ে এসেছেন, সেই প্রশ্ন উঠছে না কেন। যখন চাকদহ রোডে গাছ কাটা হল, তখন বলা হল বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ। অর্থাৎ সবসময়ই ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে চলেছে মানুষ। গাছ কাটার বিরুদ্ধে যাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন, তাঁরাই জেলার নাম ইছামতী নিয়ে তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছেন, এটা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কী। 

বনগাঁ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা বিভূতিভূষণ বিএড কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ অবশ্য নতুন জেলার নাম বনগাঁ করার পক্ষে। তাঁর কথায়, আমার জন্ম বনগাঁয়। দু’টি নামের সঙ্গেই আমরা দারুণভাবে সম্পৃক্ত। একটি ইছামতী, অন্যটি বনগাঁ। ইছামতী যে শুধু উত্তর ২৪ পরগনার নদী তা নয়, এই নদী একাধিক জেলা এমনকী বাংলাদেশও ছুঁয়ে গিয়েছে। তবু ইছামতী আমাদের আবেগ, ভালোবাসা। ইছামতীকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন। নানা সময় আমরা ইছামতী সংস্কারের কথা বলেছি। আবার বনগাঁ শব্দটাও একেবারে আমাদের প্রাণের শব্দ। এই শব্দের মধ্যে দিয়েই আমাদের জন্মভূমির কথা মনে পড়ে। এই শব্দটা শুনতে শুনতেই আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। এখন প্রশাসনিক কারণে বিভিন্ন জেলার বিভাজন হচ্ছে। ১৮৬৩ সালে বনগাঁ মহকুমার জন্ম। এই মহকুমা একটা সময় ছিল নদীয়া জেলায়, তার পর যশোর জেলায়, পরে ২৪ পরগনা জেলায়, শেষে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। আজ যখন জেলা হিসেবে একটি ছোট অংশকে আমরা পাচ্ছি, তখন আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ইছামতী আমাদের ভালোবাসার নাম হয়ে থাক, আর আমাদের জেলার নাম হোক বনগাঁ।

প্রসঙ্গত, বনগাঁ নামের সঙ্গে দেশভাগের ইতিহাস ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি ও আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। দেশভাগের সময় ওপার বাংলা থেকে অনেক মানুষ বনগাঁ শহরে চলে আসেন। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের বাঘেরহাটে দাঙ্গার সময় কিছু মানুষ এপারে চলে আসেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপার বাংলা থেকে সবথেকে বেশি মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নেন। বঙ্গদেশে নীল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ১৮৬২ সালের শেষের দিকে নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হার্সেল ও বারাসত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসলে ইডেন বনগ্রামে আসেন। তাঁরা দুর্দশাগ্রস্ত নীলচাষিদের শান্ত করার জন্য বনগ্রামকে মহকুমা ঘোষণা করেন। ১৮৬৩ সালে নদীয়া জেলার একটি মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বনগাঁ। এখানে প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন সি কুইনি। প্রবীণরা জানিয়েছেন, ’৭১ সালে যুদ্ধের সময় বনগাঁয় ভারতীয় সেনারা ক্যাম্প করেছিলেন। বনগাঁ স্টেডিয়ামে কামান এনে রাখা হয়েছিল। সাঁজোয়া গাড়ি যাতায়াত করত। উড়ত যুদ্ধবিমান। ইতিহাসের গভীরে জড়িয়ে রয়েছে এই আবেগও। ১৮৮২ সালে বনগাঁ মহকুমা নদীয়া থেকে আলাদা হয়ে যুক্ত হয় যশোরের সঙ্গে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট বনগাঁ মহকুমা ছিল পাকিস্তানেই। মুসলিম লিগ এ নিয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করে। যদিও ১৮ আগস্ট ফের ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় বনগাঁ ও গাইঘাটা। এই বনগাঁ মহকুমার মাটিতেই জন্মেছেন বিশ্ববরেণ্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্রের মতো মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, বনগাঁ নামে ইতিমধ্যেই পুলিস জেলা হয়েছে। বনগাঁ নামে হয়েছে লোকসভা কেন্দ্র। রাজনৈতিক দলগুলিও বনগাঁকে সাংগঠনিক জেলা হিসেবেই ভাগ করেছে। তা হলে প্রশাসনিকভাবে এই জেলার নাম বনগাঁ হতে সমস্যা কোথায়? 

কবি স্বপন চক্রবর্তী বলছেন, বনগাঁকে জেলা করে প্রশাসনিক কাজে বিশেষ সুবিধা হবে, এমন বিশ্বাস আমার নেই। প্রশাসন যদি মনে করে, কাজ করবে, তা হলে পুরনো নামেই করতে পারে। আর যদি নতুন জেলা করে নাম পরিবর্তন করতেই হয়, তা হলে কেন বনগাঁ নয়, ইছামতী কেন? ক্রমশ মরে যাওয়া একটা নদীকে সামনে রেখে যদি জেলার নাম হয়, তা হলে বুঝতে হবে এই জেলাটাও একদিন এভাবেই মরে যাবে। কারণ, এই নদীকে বাঁচানোর কারও ইচ্ছা নেই। ফলে এই জেলাকেও বাঁচানোর কারও ইচ্ছা থাকবে না। ফলে প্রশাসনের যদি এমন কোনও ইচ্ছা থেকে থাকে, তা হলে তাকে কখনওই আমি সমর্থন করি না। আমার মনে হয়, যদি ব্যাপক আকারে যদি নামকরণ করতে হয়, তা হলে বনগাঁ নাম রাখাই ভালো।

বনগাঁর বর্ষীয়ান আইনজীবী স্বপন মুখার্জী বলছেন, জেলা সম্পর্কে কোনও আপত্তি নেই, সে যে নামেই হোক না কেন। তবে বনগাঁ হলেই ভালো হতো। বনগাঁ পুরনো শহর। বনগাঁ পুরনো নাম। যশোর জেলা থেকে বনগাঁ। তবে নতুন জেলা ঘোষণার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নতুন জেলা হলে এখানকার মানুষ তার সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। বিচার ব্যবস্থা থেকে নানা বিষয়ে সেই সুবিধা মিলবে। একটা নতুন জেলা হলে উন্নয়নের জোয়ার আসে, নিশ্চিতভাবে ইছামতী জেলাতেও সেই উন্নয়ন হবে। এবং তাতে বনগাঁবাসীর উপরকারই হবে বলে মনে করি। 

বনগাঁর আরএক বর্ষীয়ান আইনজীবী সমীর দাসের কথায়, আমি চাই আবেগ আর ইতিহাসের মেলবন্ধনে নতুন জেলার নামকরণ হোক। বনগাঁ পুরনো শহর। বনগাঁ আদালত দেড়শো বছরের পুরনো। বারাসতেও তখন আদালত ছিল না। আলিপুরে আদালত ছিল, আর ছিল বনগাঁয়। এই জায়গার সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। দেশ স্বাধীনতার হওয়ার তিনদিন পর বনগাঁ স্বাধীন হয়েছিল। ফলে এই ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। জেলা হলে অবশ্যই ভালো হবে। তবে নতুন জেলার নামকরণে যেন এলাকার ইতিহাস হারিয়ে না যায়। 

মানবাধিকার কর্মী দেবাশিস রায়চৌধুরী বলছেন, জেলার নাম ইছামতী হচ্ছে এটা আমার কাছে ভালো লাগছে না। অন্য কোনও নাম হলেই ভালো হতো। জেলা হলে প্রশাসনিক কাজে হয়তো সুবিধা হয়। কিন্তু নদীর নামে জেলার নাম, এটা মেনে নিতে পারছি না। নতুন জেলার নাম ইছামতী বলা হচ্ছে। কিন্তু এই নদী তো শুধু বনগাঁ মহকুমার নয়। উৎসমুখ থেকে বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। বরং আমরা যে অঞ্চলে বাস করছি, সেখানে এই নদী মৃতপ্রায়। একটা নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ আগে ভালোভাবে নেওয়া উচিত। দশকের পর দশক চলে যাচ্ছে, একটা নদী ক্রমশ মরে যাচ্ছে, আর সেই নদীর নামে জেলা হচ্ছে, এটা আমার মোটেই পছন্দের নয়। 

পেট্রাপোল এক্সপোর্টার ইমপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে’র মতে, মরে যাওয়া ইছামতীর নামে কোনও জেলার পথ চলা শুরু হলে তা কখনওই নতুন উদ্যমে ছুটতে পারে না। মুমূর্ষু এই নদীর মতোই ওই জেলারও অবস্থা হবে বলে মনের কোণে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। কোনও কিছু শুরুর সময় অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। না হলে সেই চলার পথে বারবার গতি হারাতে হয়। থমকে দাঁড়াতে হয়। হোঁচট খেতে হয়। ইছামতীর কাছে এসে দাঁড়ালে কার্যত বদ্ধ জলাশয়ের চেহারা নেওয়া এই নদীকে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি নদী তার পথচলা বন্ধ করে দেবে। এই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, জেলার নাম বনগাঁ হতে পারে। কিংবা অন্য কিছুও হতে পারে। তবে ইছামতী না হওয়াই ভালো। রফতানিকারক কার্তিক চক্রবর্তী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী নাম ঘোষণা করেছেন, ফলে তাকে সমর্থন করছি। তবে বনগাঁ নাম রাখা হলেও খারাপ হতো না। আমার বক্তব্য, যার নামে নতুন জেলার নামকরণ করা হচ্ছে, তার ঐতিহ্যকে যেন ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। ইছামতী জেলা হল, আর সেই নদী হারিয়ে গেল, এমনটা হলে তা হবে খুবই বেদনাদায়ক। ইতিমধ্যেই ইছামতীর অনেকটা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। নাব্যতা হারিয়েছে। ক্রমেই নদী বুজে আসছে। এই নদীকে আর মরতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত এ ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগ জরুরি। .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here