দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সুখবর আগেই এসেছিল। ওপার বাংলা থেকে। দুর্গাপুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গকে ইলিশ উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার।

পেট্রাপোল সীমান্তে ছবি তুলেছেন সোমনাথ দাস।

বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে আসছে দু’হাজার আশি মেট্রিক টন ইলিশ। ধাপে ধাপে ওই ইলিশ এ রাজ্যে এসে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। এ নিয়ে গত সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকার সচিবালয়। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ রফতানি করা যাবে বলেও জানিয়েদেয় হাসিনা সরকার।

সেই মত বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ১৮ টি ট্রাকে প্রবেশ করল ৯০ টনের বেশি পদ্মার ইলিশ।জানাগিয়েছে পেট্রাপোল শুল্ক দফতর সূত্রে। এদিন ট্রাক বদলে এই ইলিশ রওনা দিয়েছে কলকাতার পাইকারি মাছ বাজারের উদ্দেশ্যে।

এদিন থেকে আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দিনই এই ইলিশ মাছ ভারতে আমদানি হতে থাকবে। বাংলাদেশের এই ইলিশ আমদানির খবরে খুশির হাওয়া ইলিশপ্রিয় বাঙালীদের মনে। খুশি মাছ ব্যবসায়ীরাও।

ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের কাছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। একসময় বর্ষার শুরু থেকে প্রতিদিন টন টন ইলিশ আমদানি হতো ভারতে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হতো। গত কয়েক বছর ধরে । বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞায় সেদেশ থেকে ইলিশ মাছ আসা বন্ধ রয়েছে।

অনেক আবেদনের পর গত বছর পুজোর আগে দু’ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানী করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। এবছরও যাতে ইলিশ রপ্তানীতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেয়, তারজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এদেশের ইলিশ আমদানিকারীরা। অবশেষে সেই আবেদনে সাড়া দেয় বাংলাদেশ সরকার।

২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব তানিয়া ইসলাম এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, বাংলাদেশ সরকার পুজো উপলক্ষে এবছর ভারতে ২০৮০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানীর অনুমতি দিল। ৫২ টি সংস্থার মাধ্যমে (‌প্রত্যেকের জন্য ৪০ মেট্রিক টন বরাদ্দ)‌ এই মাছ ভারতে রপ্তানী হবে। ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এই মাছ রপ্তানী করা যাবে।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং স্টাফ এন্ড ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন বাংলাদেশের হাসিনা সরকার পশ্চিমবঙ্গের ভোজন প্রিয় বাঙালীর জন্য পুজোর উপহার স্বরুপ পদ্মার ইলিশ ভারতে রপ্তানী করার অনুমতি দেওয়ায় দু’দেশের বানিজ্যে এর ভাল প্রভাব পড়বে , কারণ দু’দেশের সু-সম্পর্ক যে যথেষ্ঠ দৃঢ় তা কখনও হাঁড়িভাঙা আম বা ইলিশের আদান প্রদানে সুস্পষ্ট এবং দু’দেশের সীমান্ত ব্যাবসায়ী মহলে সেই বন্ধুত্বে বার্তাই বহন করছে৷

ভারতের ইলিশ আমদানিকারী সংস্থার পক্ষে ক্লিয়ারিং এজেন্ট ফিরোজ মন্ডল জানান, ‘বাংলাদেশ সরকারের জারি করা নির্দেশিকার ভিত্তিতে আজ প্রথম পর্যায়ে ১৭ টি ৮০ টন ইলিশ ভারতে এলো। এদিন সকালেই ইলিশ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছায়। এরপর সমস্ত সরকারি নিয়ম সম্পন্ন করে এদিন সন্ধেয় পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে মাছের ট্রাক ভারতীয় সীমান্তে এসে পৌঁছায়।’

পশ্চিমবঙ্গের ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ জানান, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানীতে অনুমতি দেওযায় আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করবো, প্রতি বছর এইভাবে তারা অনুমতি দেবেন।’‌

২০১২ সালে বাংলাদেশ এ দেশে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে মাঝে মাঝে পুজোর আগে ইলিশ এসেছে। গত বছর প্রায় ৫০০ টন ইলিশ এসেছিল। তবে এত বিপুল পরিমাণ ইলিশ শেষ কবে এ দেশে এসেছে, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। বিক্রেতাদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে বাজারে ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তা অনেকে নিমরাজি হয়েই কিনছেন। বিক্রেতাদের আশা, বাংলাদেশ থেকে বড় ইলিশ এলে তাঁদের বিক্রি বাড়বে।

সংস্থার সভাপতি অতুল দাস বলেন, ‘এবছর যে ইলিশ আমদানি হচ্ছে, তার ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কিলোগ্রাম। পাইকারি বাজারে এত দাম কিলোপ্রতি ৯০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।’‌ 

উল্লেখ্য, এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ হাঁড়িভাঙা আম উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা পেয়ে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী হাসিনাকে বাংলায় চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সেবারও হাঁড়িভাঙা আমের স্বাদ পেয়ে আহ্লাদিত রাজ্যের মানুষজন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি ইলিশ পাঠানোর আবদারও জানিয়েছিলেন।

সেই আবদারই রাখলেন বন্ধু রাষ্ট্রের প্রধান। আর বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আগেই আসছে সেই অনির্বচনীয় উপহার, পদ্মার ইলিশ। এমনিতেই এখন বাংলার বাজারে রুপোলি শস্যের আকাল। চড়া দাম দিয়েও মিলছে না ইলিশের সেই স্বাদ। তবে ওপার বাংলা ইলিশ বাজারে পৌঁছানোয় সেই খরা মিটবে বলেই আশাবাদী মৎস্যপ্রিয় বাঙালি।

বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ওই বিপুল পরিমাণ ইলিশ এ রাজ্যে আসার খবরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বাঙালি। তবে ওই ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here