দেশের সময়: প্রতিটি বাঙালির কাছেই অত্যন্ত পছন্দের, জলের রুপোলি শস্য। অতুলনীয় স্বাদ।

ইলিশ নিয়ে বাঙালির আবেগ, মিথ, ঐতিহ্য, গল্পগাথার শেষ নেই। বাঙালিদের জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সঙ্গে জড়িয়ে ইলিশ। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রত্যেকেই ইলিশের প্রতি সমানভাবে অনুরক্ত। সময়ের সঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও ইলিশ নিয়ে আবেগ, উচ্ছ্বাসের বদল ঘটে না। ইলিশের উন্মাদনা যেন এক করে দেয় দুই বাংলাকে। সেই কবে, সালটা ১৯৩৮। বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘ইলিশ’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি-রাশি ইলিশের শব, নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়। তার পর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে ইলিশ ভাজার গন্ধ, কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার সরস সর্ষের ঝাঁজে। এলো বর্ষা, ইলিশ উৎসব।’

বাংলা ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘ইলশে গুঁড়ি’ ছড়াটি মনে আছে!

‘ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি!

ইলিশ মাছের ডিম।

ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি

দিনের বেলায় হিম।…

হালকা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায়

ইলশে গুঁড়ির নাচ

ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে

নাচছে ইলিশ মাছ।’

বাংলার টীকাকার পণ্ডিত ‘জীমূতবাহন’ দ্বাদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ এখন থেকে ৯০০ বছর আগে বাংলায় ইলিশ মাছের নামকরণ করেন। সেসময় ইলিশ মাছ খাওয়ার চল ও ইলিশের তেলের ব্যবহার নিয়ে তিনি লিখে গিয়েছেন। সর্বানন্দের ‘টীকাসর্বস্ব’ গ্রন্থেও ‘ইলিষ’ মাছের নাম পাওয়া যায়। প্রাচীন শ্লোক অনুযায়ী, ইলিশ, খলশে, ভেটকি, মাগুর আর রুই, এই পাঁচটি নিরামিষ মাছ।

এজন্য একসময় এই মাছগুলি রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন ব্যবহার করা হতো না। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র তাঁর ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে একত্রিশটি মাছের যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে সর্বশেষ মাছটি হল ইলিশ। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসে বলছেন, মীরকাশিমের স্ত্রী দলনী বেগম ও তাঁর দাসী কুলসুমের কথোপকথনে দলনী যখন কুলসুমকে দুঃসাহসিক কাজ করার কথা বলেন, তার উত্তরে কুলসুম বলে, কী? ইলিশ মাছ খেতে হবে না ঠান্ডা জলে নাইতে হবে? প্রমথনাথ বিশীর লেখা গল্পের নাম রয়েছে ‘গঙ্গার ইলিশ’। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ তো ইলিশ যাঁরা ধরেন, সেই মানুষগুলিকে নিয়ে লেখা এক জীবন্ত দলিল।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কতোয় হল’ নামে ছোট গল্পে লেখকের লেক মার্কেট থেকে ইলিশ কিনে হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রামে, সাইকেল রিকশায় এবং সবশেষে বাড়িতে ঢোকামাত্রই সবার মুখে এক কথা, ‘কতোয় হল’। সবশেষে তাঁর প্রশ্ন, যদি ভদ্রলোক শোলমাছ ঝুলিয়ে আসতেন, তবে কি কেউ তাঁকে এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করত? প্রেমেন্দ্র মিত্রর অনবদ্য রচনা ‘ঘনাদা’-তে পাওয়া যায়, ‘এক পা বাড়ালেই ডায়মন্ডহারবার। যাওয়া-আসায় কোনও হাঙ্গামাই নেই। ওখানকার…ইলিশ…একবার মুখে দিলে আর ডায়মন্ডহারবার ছাড়তে ইচ্ছে করবে না।’ সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’য় রুপোলি জলজ শস্যের সন্ধানে ঘরছাড়া মানুষের নৌকায় জীবনযাপনের চিরন্তন সংগ্রামের ছবি ফুটে উঠেছে।

সৈয়দ মুজতবা আলির ইলিশ প্রীতি কার না জানা। একবার এক পাঞ্জাবি মুসলমান অধ্যাপকের সঙ্গে তাঁর তর্ক বাধে। মুজতবা আলির মতে, শ্রেষ্ঠ খাবার হল সরু চালের ভাত আর গঙ্গার ইলিশ। পাঞ্জাবি অধ্যাপকের পছন্দ ইলিশ মাছ নয়, বিরিয়ানি। রাগ করে আলি সাহেব সেই অধ্যাপকের সঙ্গে সাতদিন কথা বলা বন্ধ করে দেন। ১৮৯৭ সালে রামলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের রম্যনাটক ‘কষ্টিপাথর’-এ বাবু নবীন এক টাকায় জোড়া ইলিশ কিনে দর্শকদের দেখিয়ে বলছে, রাজপুত্তুর মশাই রাজপুত্তুর। কী যে গড়ন যেন ননীর চাপ থেকে কেটে তুলেছে।

দিব্বি দোহারা, একটু পাশ থেকে গোলাপীর আভা মাচ্চে। আবদুল জব্বার সাহেবের লেখা ‘ইলিশ মারির চর’-এ আকাশ ভাঙা বর্ষণমুখর গহিন রাতে ষাঁড়াষাঁড়ির বান-ডাকা ফেনা ওগরানো নদীতে ইলিশের জাল ফেলে উদ্দাম চিৎকারে গান জুড়েছে কলিমদ্দি মাঝি। তার সঙ্গী দু’জন দাঁড়ি কানাই আর ইয়ার আলি নাচ জুড়েছে হাত তুলে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে। ইলিশ নিয়ে বাঙাল-ঘটির চিরায়ত বিবাদের মাঝে লীলা মজুমদার সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ঘটিরা বাঙালদের মতো কাঁচা ইলিশের ঝোল রান্না করে দেখাক তো! স্বামী বিবেকানন্দের ইলিশ প্রীতি তো সবারই জানা। সালটা ১৯০১।

৬ জুলাই। বেলুর মঠে গঙ্গার দিকে চেয়ে বসেছিলেন তিনি। গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তিনি চিঠি লেখেন। তাঁর সেই চিঠিতে উঠে আসে ইলিশের প্রসঙ্গ। বিবেকানন্দ লেখেন, পৃথিবীতে এমন জিনিস হয় না। নদীতে ইলিশ উঠেছে। দেখছি আর লিখছি। ঘরের গায়ে ঢেউ ধাক্কা খেয়ে উছলে উঠছে। নীচে শত শত মাছ ধরার নৌকা, সবাই মাছ ধরায় ব্যস্ত। আমাদের ইলিশ তোমাদের আমেরিকান ইলিশের চেয়ে বহুগুন উৎকৃষ্ট। স্বামীজি একবার স্টিমারে পূর্ববঙ্গের গোয়ালন্দ যাচ্ছিলেন। স্টিমার থেকে পাশে একটা নৌকার দিকে তাঁর চোখ গেল।

সেখানে জাল জুড়ে রূপসী ইলিশের দাপাদাপি দেখে বলে উঠলেন, বেশ ভাজা ইলিশ খেতে ইচ্ছে করছে। স্বামীজির কথা বুঝে নিল সারেঙ, কেনা হল দু’টাকায় ষোলোটা ইলিশ। সঙ্গে দু-চারটে ফাউ। এবার স্বামীজির সাধ হল, পুঁইশাক হলে ভালো হতো। সঙ্গে গরম ভাত। স্টিমার তীরে দাঁড় করিয়ে জনৈক গ্রামবাসীর খেত থেকে জোগাড় করা হল পুঁইশাক। ইলিশের মাথা দিয়ে পুঁইশাক রান্না হল। তৃপ্তি ভরে খেলেন স্বামীজি। ফিরতি পথে পুঁইশাকের মালিককে দীক্ষাও দিয়ে গেলেন। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই।

স্বামীজির মহাপ্রয়ানের দিন। ওই দিন সকালে বেলুড় মঠে জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ মাছ কেনা হয়েছে। স্বামীজি তাঁর শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে ডেকে বললেন, তোরা নূতন ইলিশ পেলে নাকি পূজা করিস। কী দিয়ে পূজা করা হয় কর। স্বামী প্রেমানন্দ লিখেছেন, আহারের সময় অতি তৃপ্তির সহিত সেই ইলিশ মাছের ঝোল, অম্বল, ভাজা দিয়ে ভোজন করিলেন। দ্বিপ্রাহরিক এই তৃপ্ত ভোজনই স্বামীজির শেষ আহার। রাঢ়বঙ্গে ইলিশ মোটেই সহজলভ্য নয়। এই এলাকার মানুষজন পোস্ত সহযোগে রান্নার পদ পছন্দ করেন। সেই আক্ষেপ ফুটে উঠেছে টুসু গানে।
অ, টুসু ইলিশ ইলিশ করিস না,

ইলিশ নিয়ে তুর লালসা মানায় না,

গঙ্গা-পদ্মায় যেমন ইলিশ মেলে,

রাঢ়েরা খুশি পুস্তু পেলে…’

টুসু গানের মতোই ভাদু গানেও ইলিশের বর্ণনা রয়েছে। ভাদুর ইলিশ খাওয়ার বাসনা হয়েছে। কিন্তু রাঢ়বঙ্গের নদীতে তো ইলিশ পাওয়া যায় না। তা হলে ভাদুকে কল্পনায় পদ্মা বা গঙ্গায় নিয়ে যেতে হবে। গানের মাধ্যমেই ঘুচে যায় ভৌগোলিক সীমারেখা।

ভাদ্রমাসে ভাদু খাবে ইলিশ…

গেলে পদ্মায় গঙ্গায়…

নানা নামে ইলিশ

‘ইলিশ পুরাণ’ নামক বইয়ের লেখক দিগেন বর্মনের মতে, আজকের ইলিশ শব্দটি সংস্কৃত ‘ইলীশ’ শব্দ থেকে এসেছে। যা ইল+ঈশ এভাবে তৈরি হয়েছে। এখানে ইল শব্দের অর্থ, জলে নামা বা জলের মধ্যে থাকা আর ঈশ শব্দের অর্থ শাসক, কর্তা বা প্রভু। যা এককথায় বললে দাঁড়ায়, ইলিশ হল জলের রাজা। দেবতাদের মতোই জলের এই ‘প্রভু’র অনেক নাম। সুকল্যাণ ভট্টাচার্য লিখছেন, বিশ্বের ২৫টি ভাষায় ইলিশের ১১০টি স্থানীয় নাম রয়েছে। চীনে ম্যান্ডারিন চাইনিজ ভাষায় ইলিশকে বলা হয় ‘ইচাচা’। পাকিস্তানে সিন্ধি ভাষায় এর নাম ‘পাল্লা’। মায়ানমারে বার্মিজ ভাষায় ‘তেনুয়ালোসা’। আরব দুনিয়ায় ‘শোর’। ওমানে ইলিশকে ডাকা হয় ‘চা কোরি’ নামে। ভিয়েতনামে ইলিশ ‘ক্যা’ নামে পরিচিত। মালয়েশিয়াতে ‘তেরুবুক’। স্পেনে ‘সাবালো হিলসা’। সুইডেনে ‘হিনডিস্ক স্টাকসিল’। ডেনমার্কে ‘হিলসা স্টামস্লিড’। পর্তুগালে ‘পালা’। চেক-এ ‘প্লাককা ইলিশা’। পোল্যান্ডে ‘হিলসা ইনজ্জিস্কা’। আমেরিকায় ‘হিলসা হেরিং’। ইরানে ফারসি ভাষায় ‘বার্ক’। নামের এই বহর দেখেই ইলিশের জনপ্রিয়তা আন্দাজ করা যায়। শুধু বিদেশে কেন, আমাদের দেশেও ইলিশের নামের রকমফের রয়েছে। ওড়িশায় এই মাছকে বলা হয় ইলিশি। অসমে বলা হয় ইলিহি। মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষায় ইলিশের নাম পালভা। গুজরাতে বলা হয় চাকশি। তামিলনাড়ুতে তামিল ও তেলুগু ভাষায় ইলিশকে বলা হয় উল্লাম, ভেনগারাই পোলাসা মেভা। কর্ণাটকে কন্নড় ভাষায় ইলিশ মুল্লাসু, পালিয়া। কেরলে মালয়ালম ভাষায় বলা হয় পালিয়াহ, পালুভা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে হিন্দি ও উর্দুতে ইলিশকে বলা হয়ে থাকে হিলসা, পালা বা পাল্লো ও পুল্লা।

ক্লাপিউডা পরিবারের সদস্য ইলিশ। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গা ও তার মোহনা অঞ্চলে থাকা মাছের উপর গবেষণা করে ২৭২টি প্রজাতির মাছের খোঁজ পান হ্যামিলটন বুকানন সাহেব। জীমূতবাহন ইলিশ মাছের নামকরণ করলেও বুকানন সাহেবই ১৮২২ সালে ইলিশ মাছের বিজ্ঞানসম্মত নামকরণ করেন।

কী রয়েছে ইলিশে

একশো গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ২৭৩ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ২২ গ্রাম, ফ্যাট ১৯ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ১৮০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৮০ মিলিগ্রাম ও আয়রন ২ মিলিগ্রাম। এতে যথেষ্ট মাত্রায় রয়েছে ওমেগা থ্রি জাতীয় পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কিছু পরিমাণ মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হার্টকে হেলদি করে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ইলিশ মাছে থাকে জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই’র মতো গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রো এলিমেন্ট। মৎস্য বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ৭৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছে সবচেয়ে পুষ্টিমূল্য রয়েছে। খুব বড় ইলিশে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে খেতে সুস্বাদু হলেও স্বাস্থ্যের পক্ষে তা খুব একটা ভালো নয়। আবার খুব ছোট ইলিশের স্বাদ ও পুষ্টিমূল্য তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম থাকে।

সাগর থেকে ইলিশ নদীর উজান বেয়ে মিঠা জলে ঢুকে পড়ে, ডিম ছাড়ার পর বাচ্চা ইলিশ আবার সাগরে ফিরে যায়। নদীর মোহনায় আসার পর কয়েকদিন তারা সেখানেই থাকে। মোহনার জল সাগরের তুলনায় কম লবণাক্ত। মোহনার কম লবণাক্ত জলে কয়েকদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর পরবর্তী পরিবেশে থাকার জন্য উপযোগী করে তোলে নিজেদের। এই প্রক্রিয়াকে বলে ইলিশে মাছের ‘কন্ডিশনিং’। সমুদ্র থেকে নদীতে ঢোকার পর উজানের দিকে অর্থাৎ স্রোতের বিপরীত দিকে যখন এগিয়ে চলার চেষ্টা করে ইলিশ, সেসময় তাদের শরীরে ফ্যাট জমা হতে থাকে। এই ফ্যাটের জন্যই ইলিশের স্বাদ অতুলনীয় হয়।

ইলিশের উপকারিতা

ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া, অ্যারিথমিয়া, অ্যালঝাইমার্স, অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, ডিপ্রেশন, ডিমেনশিয়া ডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, হাই ব্লাড প্রেশার, অ্যাথেরোস্ক্লোরেসিস, সোরিয়াসিস, ক্যান্সার, এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রভৃতি রোগের মোক্ষম দাওয়াই সুস্বাদু ইলিশ মাছ। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ইলিশে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে এই মাছের দারুণ ভূমিকা রয়েছে।

ইলিশ মাছ নিয়মিত খেলে বয়সকালে ডিমেনশিয়া অসুখে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। ইলিশে প্রান্ত খনিজ জিঙ্ক আছে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। এই মাছে সেলেনিয়াম আছে, যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। মেনস্ট্রুয়েশনজনিত ব্যথা কমাতে ইলিশ খাওয়া উপকারি। আর্থাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইলিশ মাছ নিয়মিত খাওয়া দরকার। জয়েন্ট পেইন কমাতে পারে ইলিশ। শিশুদের সুগঠিত মস্তিস্ক তৈরি করতে ইলিশ খাওয়া উচিত। উচ্চ রক্তচাপ জনিত বিভিন্ন রোগ যেমন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ইলিশ মাছ।

ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। অন্যদিকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। ফলে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি হার্ট সুস্থ রাখে। প্রসঙ্গত, ইলিশ মাছের মাথার ৬০ শতাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দ্বারা পূর্ণ। ইলিশ মাছ খেলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে। থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতিদিনের ডায়েটে ইলিশ জাতীয় সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে যন্ত্রণার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। তেলযুক্ত মাছ চোখের স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ উপকারি।

বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগও ঠেকাতে পারে। ইলিশে রয়েছে আয়োডিন, সেলেয়িাম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। থাইরয়েড গ্লান্ডকে সুস্থ রাখে আয়োডিন, সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে, যা ক্যান্সার মোকাবিলা করতে পারে। এছাড়া ভিটামিন এ এবং ডি-র উৎকৃষ্ট উৎস ইলিশ। ওমেগা থ্রি অবসাদ মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নিয়মিত ইলিশ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ইলিশ খেলে একজিমা, সিরোসিসের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়। ইলিশে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। পেটের যত্নেও উপকারি ইলিশ। যেহেতু আলসার, কোলাইটিসের মতো অসুখ রুখতে পারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলে ইলিশ খেলে এগুলো থেকে দূরে থাকা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here