দেশের সময়: বর্ষবরণে গোটা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেজে উঠেছিল ইছামতীর শহর বনগাঁ ৷ শনিবার সন্ধ্যে থেকে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। রাত এগোতে রাস্তায় যেন জন জোয়ার। আলো ঝলমল যশোর রোড যেন পার্ক স্ট্রিট, কেউ এসেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে, কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। কেউ এসেছে বন্ধুদের সঙ্গে। রেস্তঁরাগুলিতেও উপচে পড়ছে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দেখুন ভিডিও:
কারও মাথায় ঝলমলে লাল সিংয়ের হেয়ার ব্যান্ড, আবার কারও মাথায় ফুল দিয়ে লাইট লাগানো হেয়ার ব্যান্ড, কেউ আবার পরেছেন খরগোশের কান বা মিকি মাউসের হেয়ার ব্যান্ড। ত্রিকোণ পার্ক থেকে বাটা মোড় সর্বত্র আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে৷ ক্রিসমাস ট্রি, জিঙ্গল বেলের সুরে ও নানা রঙের আলোর খেলায় মেতে উঠেছে ইছামতীর দু’পাড়ের সড়ক। কেউ কেউ সেই মুহুর্ত সেলফিবন্দী করছেন। কেউ বা ক্যামেরায় পোজ দিচ্ছেন।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কথা মাথায় রেখে জেলা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নিখুঁত। শহরে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মোতায়েন ছিল বহু পুলিশ কর্মী। এছাড়া বর্ষবরণ উৎসবে ভিড়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ ভাবে নজরদারি চলছিল পুলিশের তরফে। মতিগঞ্জ ক্লক টাওয়ার থেকে আলোর রোশনাই আরও মায়াবী করে তুলেছিল ইছামতীর শহর বনগাঁকে৷
আরও একটা বছর পেরিয়ে এলাম আমরা। পৃথিবী কিছুটা বৃদ্ধ হল। সেই সঙ্গে বয়স বাড়ল আমাদেরও। নতুন বছরের প্রথম সূর্যকে সাক্ষী রেখে শুরু হল দিন চলা। একটাই প্রার্থনা, একদিন ঝড় থেমে যাবে। পৃথিবী আবার শান্ত হবে…। নচিকেতার গানের সঙ্গে গলা মিলিয়েই আমরা বলতে পারি, অনেক হয়েছে, এবার বন্ধ হোক রুশ আগ্রাসন। পথের ধুলোয় মিশে যাক আগ্রাসনের দাম্ভিকতা। অস্ত্র ফেলে দিক ইউক্রেনও। অনেক রক্ত ক্ষয় হয়েছে। খালি হয়েছে অনেক মায়ের কোল। মুছে গিয়েছে অনেক স্ত্রীর সিঁথির সিঁদুর। অনাথ হয়েছে অনেক শিশু। আমরা তাই আর যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। মার্কিন দুনিয়ার চোখ রাঙানি চাই না। শত্রুতা ভুলে প্রতিবেশী দেশের প্রতি বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিক চীন। বন্দুকের নল উঁচিয়ে দু’দেশের সীমান্তে তাক করে থাকা সেনা জওয়ানরা পরস্পরেরর হাতে বেঁধে দিক রাখি। একে অন্যকে বুকে টেনে নিয়ে বলে উঠুক, আমরা বৈরিতা চাই না, আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চাই। মুছে যাক পুরনো বছরের যত সব মলিনতা। নতুন বছর হয়ে উঠুক আমাদের আশা আকাঙ্খা আর স্বপ্নপূরণের বছর। নতুন করে চোখ রাঙানো করোনাকে পরাস্ত করে গোটা পৃথিবীর বুকে জয় হোক মানবের। মহামারী দানবকে পদতলে পিষে জিতে যাক বিজ্ঞান। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বহু জায়গাতেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে কুসংস্কার। পিশাচ ধারণার বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক আমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সবার পেটে ভাত আর সবার পরনে পোশাক, এই হোক আমাদের সংকল্প। থিতু হোক মূল্যবৃদ্ধি। বাজারে দামের আগুন থেকে রেহাই মিলুক মধ্যবিত্তের। পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে সদিচ্ছা দেখাক আমাদের দেশের সরকার। স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে কেউ যেন বাদ না পড়ে, এই দায় কিন্তু রাষ্ট্রের। পুরনো বছরে যে হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতী চাকরি না পেয়ে চোখের জল ফেলেছেন, আন্দোলনে শামিল হয়ে রাজপথে শুয়ে থেকে রাত কাটিয়েছেন, নতুন বছর যেন তাঁদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চাই না আমরা। চাই, যোগ্য যেন তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি পায়। টাকা দিলে চাকরি হয়, এই অপবাদ ঘুচে যাক রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলা থেকে। নতুন বছর যেন আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়। ভোটের রাজনীতির শিকার হয়ে নয়, আমরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে পারি, এটাই হোক নতুন বছরের শপথ। সেই সঙ্গে এই আশাটুকু থাক, ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাবে।
বাংলা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ
বাংলা শুধু ভারত সেরা নয়। বিশ্বসেরা। সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রেন চাইল্ড প্রকল্প। সম্প্রতি কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক বাংলার দুয়ারে সরকারকে সেরার পুরস্কারে ভূষিত করার জন্য মনোনীত করেছে। এই প্রকল্পটি কেন্দ্রের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে সেরা পাবলিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছে। ৭ জানুয়ারি দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বাংলার তৃণমূল সরকারকে পুরস্কৃত করবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ২০২২ সালেই বাংলার দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলার সংস্কৃতিকে জগৎসভায় সেরার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন মমতা। আর তারই স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।বাংলার সাফল্য থেমে নেই। রাষ্ট্রসঙ্ঘ পশ্চিমবঙ্গকে সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছ থেকে বাংলা পাচ্ছে বেস্ট ডেস্টিনেশন ফর কালচার অ্যাওয়ার্ড। আগামী ২৩ মার্চ এই উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জার্মানির বার্লিনে। সেখানে মমতার হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই বিশেষ সম্মান। স্বনির্ভরতাতেও স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বাংলায় এই মুহূর্তে ১০ লক্ষ চার হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অন্তর্ভুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নিরিখে সেরার সম্মান ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলা।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ইউক্রেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই সম্ভবত সবথেকে বড় আগ্রাসন। রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনের একের পর এক জনপদ। পাল্টা জবাব দেয় ইউক্রেন। মার্কিন সতর্কতা, আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে একের পর এক অবরোধেও হামলা থেকে সরে আসেনি রাশিয়া। এর জেরে দক্ষিণ এশিয়া থেকে ব্রিটেন পর্যন্ত প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। এ বছরটা যেন ওলোটপালোট করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। করোনা পরবর্তী সময় থেকেই দ্বীপরাষ্ট্রের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, দীর্ঘ লোডশেডিং, কাজ থেকে ছাঁটাইয়ের জেরে সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ ও প্রধানমন্ত্রী মহিন্দ্রা রাজাপক্ষের ইস্তফার দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান সাধারণ মানুষ। সেই ছবি দেখে শিউড়ে ওঠে গোটা বিশ্ব। এরপর রনিল বিক্রমসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে তা কতটা বাস্তবায়িত হল, নতুন বছরে অপেক্ষা থাকুক তারই। গত আগস্টে গাজাতে বোমাবাজি। ২০২১ সালের মে মাসের পর থেকে এত বড় বোমা বিস্ফোরণ দেখেনি গাজা। সবমিলিয়ে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। মারা যায় পনেরোটি শিশু। আহত হয় ৩৬০ জন। বন্ধ হোক এই হানাহানি। তবে আমাদের নজর থাকবে টেমসের পাড়ে। ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। লিজ ট্রুস ৪৪ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন। তারপরই ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন সুনাক। এবার ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের বহু প্রতীক্ষিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কী হয়, সেটাই দেখার। এ বছরই প্রয়াত হয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এটা অবশ্যই বড়ই মন খারাপের।
বিদায় ফুটবল সম্রাট
নতুনকে পেয়েছি আমরা। তা বলে পুরনোকে তো ভুলে যাওয়ার নয়। স্মৃতি হয়েই সে থেকে যাবে আমাদের মনের মণিকোঠায়। অনেক ভাললাগা আবার অনেক খারাপ লাগা নিয়েই একটি বছর শেষ করলাম আমরা। ২০২২ সালে আমরা হারালাম বহু নক্ষত্রকে। শেষ বেলায় আমাদের ছেড়ে চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। এই শোক কি এক জীবনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, উত্তর একটাই, না। তবে শুধু খারাপ লাগাকে আঁকড়ে ধরে রেখে তো জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় না। তাই কিছু ভাল মুহুর্তও মনকে ভরিয়ে দেয় খুশিতে।
ফেডেরার চোখে জল
রজার ফেডেরার শেষ ম্যাচে চোখে জল চলে আসা থেকে মেসির বিশ্বকাপ জয়, ২০২২ সাল একাধিক দিক থেকে মনে রাখার মতো ঘটনা উপহার দিয়েছে। বিশ্ব টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরা নক্ষত্র রজার ফেডেরার বিদায় জানিয়েছেন পেশাদার টেনিসকে। লেভার কাপে টিম ইউরোপের হয়ে কিংবদন্তি এবং নিজের কেরিয়ারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে সঙ্গী করে খেলতে নেমেছিলেন রজার। কিন্তু টিম ওয়ার্ল্ডের জ্যাক সোক এবং ফ্রান্সেস টিয়াফোর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় কিংবদন্তি জুটি। শেষ ম্যাচে হারের পর কান্না চেপে রাখতে পারেননি ফেডেরার। নাদালও সামলাতে পারেননি চোখের জল। পুরুষদের টেনিসে গ্ৰান্ডস্ল্যাম জয়ী নাদাল যেমন ছিলেন ফেডেরার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, তেমনই সব থেকে ভাল বন্ধু।
মেসির শয়নে স্বপনে বিশ্বকাপ
২০২২ সালটা ক্রীড়াক্ষেত্রে সবথেকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সম্ভবত লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের কারণে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে।বিশ্বকাপে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছিলেন মেসি। শেষ পর্যন্ত দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্স মেসিকে এনে দেয় বহু প্রতীক্ষিত বিশ্বকাপ। সেই কাপ এতটাই তাঁর শয়নে স্বপনে ছিল, তা বোঝা গিয়েছে যখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সেই কাপ নিয়ে ঘুমোতে দেখা গিয়েছে মেসিকে। বলতেই হয়, মেসির মরিয়া পারফরম্যান্স ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্বকাপ এনে দিল আর্জেন্তিনাকে।
যুদ্ধ থামানোর আর্জি
দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে পোল্যান্ডের হুবার্ট হুরকাজকে পরাজিত করার পর রাশিয়ার টেনিস তারকা আন্দ্রে রুবলেভ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধ থামানোর আর্জি রাখেন। টিভি ক্যামেরায় তিনি বলেন, দয়া করে যুদ্ধ নয়।
জার্মানির প্রতিবাদ
কাতারে সমকামিতা অপরাধ।বিশ্বকাপে ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ফিফা। আয়োজক দেশের নিয়ম নীতি প্রাধান্য পেয়েছিল অনেক ক্ষেত্রে। ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরার ক্ষেত্রে ফিফার নিষেধাজ্ঞা চূড়ান্ত হতাশার সৃষ্টি করেছিল।ফিফার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দোহায় জাপানের বিরুদ্ধে খালিফা স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার সময় টিম ফটো তোলার মুহুর্তে এক হাতে মুখ চাপা দিয়ে রাখেন জার্মানির ফুটবলাররা। এটি ছিল ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ডকে বিশ্বকাপে ফিফার নিষিদ্ধ করা নিয়ে তাদের প্রতিবাদ।
জকোভিচের খেলতে না পারা
২০২২ সাল শুরুর দিকে অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনে নোভাক জকোভিচের খেলা নিয়ে চূড়ান্ত নাটক চলে। টিকা না নেওয়া জকোভিচকে শেষ পর্যন্ত অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগে। অষ্ট্রেলিয়ার কোর্টে আইনি লড়াই হেরে যান তিনি।
অর্থনীতিতে ফিরুক স্থিতিশীলতা
গত দু’বছর করোনার কারণে অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ফলে ২০২২ সাল ছিল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। আশাপ্রদ হয়নি। দেখা দিয়েছে মন্দা। যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, উন্নত অনেক দেশের তুলনায় ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে। আমেরিকা বা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে সঙ্কোচন হয়েছে, সেখানে ভারতে জুন ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি বেড়েছে ১৩.৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি বেড়েছে ৬.৩ শতাংশ। অর্থনীতির অন্যতম দিক হল, ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি। কোভিড কাটিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ফিরে আসার পরে দেশে ব্যক্তিগত খরচের বৃদ্ধি জিডিপির ৭.৯ শতাংশের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ হবে বলে আশা। এছাড়া ২০২২ আর্থিক বছরে আমদানির পরিমাণ ৩৩.৫ শতাংশ থেকে ১৫.৪ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কমেছে মুদ্রাস্ফীতি। পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি হার নভেম্বরে ছিল গত ২১ মাসের সর্বনিম্ন। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভারত এ বছর আরও এক ধাপ উঠে এসেছে। ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অর্থনীতির আকার যেখানে ৮৫৪.৭ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ব্রিটেনের অর্থনীতি ৮১৪ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাত ভারত ক্রমেই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
এখনও মনে দগদগে রেল দুর্ঘটনার ক্ষত
২০২২ সালের শুরুতেই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী ছিল বাংলা। ১৩ জানুয়ারি বিকেলে জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার পথে ময়নাগুড়ির কাছে লাইনচ্যূত হয় বিকানের এক্সপ্রেস। ময়নাগুড়ির দোমোহনিতে বিকানের এক্সপ্রেসের চালক এমনভাবে ব্রেক কষেন যে, ট্রেনটির একটি বগির সঙ্গে অন্য বগির সংঘর্ষ হয়। লাইনচ্যূত হয়ে যায় মোট বারোটি বগি। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বগি কেটে উদ্ধার করা হয় যাত্রীদের। ছুটে আসেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। মারা যান ৯ জন যাত্রী। আহত হন শতাধিক। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির রিপোর্ট বলে, ট্রাকশন মোটরের দুরাবস্থার জেরেই করুণ পরিস্থিতি হয় ট্রেনটির। প্রতি সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার অন্তর ট্রিপ ইন্সপেকশন করার কথা থাকলেও বিকানের এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কিন্তু কেন এই গাফিলতি। এত মানুষের জীবন নিয়ে কেন এই ছেলেখেলা।
ডেঙ্গুর উদ্বেগ নিয়ে কেটে গেল অনেকটা সময়
কোভিডের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত আমজনতা। তার উপর ২০২২ সালের পুজোর আগে থেকে মাথাচাড়া দিতে থাকে নতুন বিপদ। তার নাম ডেঙ্গু। মশাবাহিত এই রোগের দাপটে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ানক হয়ে উঠতে থাকে। বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়াতে থাকে ডেঙ্গুর থাবা। এর ছোবলে মারাও যান অনেকে। শুরুতে ধরা পড়ে ডেং-৩। পরের দিকে দাপট দেখায় ডেং-২। এটি ডেঙ্গুর অন্যতম ভয়াবহ স্ট্রেইন। এবার বর্ষা কেটে গেলেও ডেঙ্গুর দাপট কমেনি। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, শীত পড়ে গেলে ডেঙ্গু কমে যাবে। কিন্তু আখেরে দেখা যায়, রাজ্যবাসীর গায়ে শীত পোশাক উঠলেও ডেঙ্গু তার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে সমানতালেই। এর জন্য দায়ী যেমন স্থানীয় প্রশাসন, তেমনই সাধারণ মানুষকেও সজাগ হতে হবে। নিজের এলাকাকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। নতুন বছরে আর একজনও যাতে ডেঙ্গুর বলি না হন, সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে আমাদের প্রত্যেকেরই।