পিয়ালী মুখার্জী: আজ সোমবার, শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এবং ধর্ম রক্ষার লক্ষ্যে মহাবতার ভগবান রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই উপলক্ষ্যে প্রতিবছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে পালন করা হয় জন্মাষ্টমী।
ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ও রোহিণী নক্ষত্রে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। প্রতি বছর আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী। এবার ৩০ অগাস্ট কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালিত হচ্ছে। এদিন কৃষ্ণের বালক রূপের বা নাড়ু গোপালের পুজো করা হয়।
ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হয়ে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নিয়েছিলেন মাতা দেবকীর গর্ভে। তাই, হিন্দু-ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এইদিন গোপাল পুজোর আয়োজন করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী জানা যায়, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্যই জন্ম হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের।
কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসেবে ধরা হয়। পুরাণ অনুসারে পাঁচ হাজার বছর আগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ছাড়াও এই দিনটি গোকুলাষ্টমী নামেও পরিচিত।
মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম হয় দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম গর্ভের সন্তান কৃষ্ণের। কংসের হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করতে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির রাতে যমুনা পেরিয়ে বৃন্দাবনে যশোদা ও নন্দের সংসারে কৃষ্ণকে রেখে আসেন বসুদেব। তারপর সবার মুখে শুধু ছোট্ট গোপাল আর গোপাল। ছোটোবেলায় তাঁকে সবাই আদর করে গোপাল বলে ডাকত। তিনি গোবর্ধন পর্বতকে এক আঙুলে তুলেছিলেন বলে তাঁর আর এক নাম গোবর্ধন।
এবছর জন্মাষ্টমীর তিথি
এবার ৩০ অগাস্ট সোমবার পালিত হচ্ছে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী। ৩০ তারিখেই পালন করতে হবে জন্মাষ্টমীর উপবাস। রাত ১২টায় ৩১ তারিখ শুরুর পরেই ভঙ্গ করতে হবে উপবাস। কারণ ঠিক মধ্যরাতেই জন্ম হয় শ্রীকৃষ্ণের। অষ্টমী তিথি শুরু হবে ২৯ অগাস্ট রাত ১১টা ২৬ মিনিটে। অষ্টমী তিথির অবসান হবে ৩০ অগাস্ট রাত ২টোয়। ৩০ অগাস্ট গোটা দিন এবং পুরো রাত ৩১ অগাস্ট সকালে ৯টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে রোহিনী নক্ষত্র।
রোহিণী নক্ষত্রে জন্মাষ্টমী পুজোর শুভক্ষণ
৩০ অগাস্ট, রাত ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত পুজোর শুভক্ষণ। ৩০ অগাস্ট রাত ১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্তই রোহিণী নক্ষত্র থাকবে। তাই ৩০ অগাস্টই জন্মাষ্টমী পালিত হচ্ছে। এই সময় অনুযায়ী ৪৫ মিনিটের মধ্যে পুজো সম্পন্ন করতে হবে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ জন্মাষ্টমী?
গোটা বিশ্বজুড়েই কৃষ্ণভক্তেরা এই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করেন। পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর মানব অবতারের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ছিলেন কৃ্ষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের জীবনকথা নিয়ে বহু কাহিনি, উপ-কাহিনি, লোককথা প্রচলিত আছে। জন্মের পর থেকেই কৃষ্ণকে ভগবান হিসেবে পুজো করা শুরু হয়ে যায়। শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পাঠ ও তাঁর দর্শন মানব ও বিশ্ব সমাজকে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করার শিক্ষা দেয়। তাঁর প্রেমের বাণী সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু দুষ্টের দমনই নয়, এক শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর জন্মাষ্টমী জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে নিয়ে আসে এক শুভ আনন্দময় বার্তা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই দিন উপোসী থাকলে জন্মকৃত পাপ বিনষ্ট হয়। আর তাই এ দিনটিতে উপবাস করে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন অনেকেই।
শুধু এক পদ দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ভক্তেরা জন্মাষ্টমীর দিন উপবাস রাখেন ও সংকল্প করেন। উপবাসের সময় কোনও খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই। সারা দিন ফলার খেয়ে অষ্টমী তিথি শেষ হওয়ার পর তাঁরা উপোস ভাঙেন।
হিন্দু-ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এইদিন গোপাল পুজোর আয়োজন করা হয়। গোপালের জন্য আয়োজন করা হয় তালের বড়া, তাল ক্ষীরের। জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে শশা নিবেদন করার প্রথা রয়েছে। মনে করা হয় শশা পেলে অত্যন্ত প্রীত হন নন্দলাল। যে ভক্ত তাঁকে শশা নিবেদন করেন তাঁর যাবতীয় দুঃখ কষ্ট তিনি মোচন করেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। জন্মাষ্টমীতে ঠিক রাত ১২টায় কৃষ্ণের জন্মক্ষণে শশা কাটতে হয়। এটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের থেকে নাড়ি গ্রন্থি কাটার রূপক বলে মনে করা হয়।
এই জন্মাষ্টমীতে আপনার নিকট বা প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা বার্তা প্রেরণ করতে পারেন, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিন এই দিনটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কিংবা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল বার্তাগুলি দিতে পারেন আপনি।
১. হাতি ঘোড়া পালকি,জয় কানহাইয়া লাল কি, জয় শ্রীকৃষ্ণ, শুভ জন্মাষ্টমী।
২. শুভ জন্মাষ্টমীর আন্তরিক শুভেচ্ছা।
৩. শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথির শুভেচ্ছা।
১. এই শুভ দিনে প্রার্থনা করি, আপনার সব স্বপ্ন পূরণ হোক। শুভ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা নেবেন।
২.জন্মাষ্টমীর এই শুভ মুহূর্তে সকলকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা… কামনা করি নন্দ গোপালের আশীর্বাদে সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। শুভ জন্মাষ্টমী।
৩.জন্মাষ্টমীর এই পবিত্র দিনে সুখে থাকুক সবাই, এসো সবাই মনের দরজা খুলে, আনন্দে, ভালোবাসায় আজকের দিনটি কাটাই… শুভ জন্মাষ্টমী।
১.শুভ জন্মাষ্টমী! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনার সমস্ত উদ্বেগ দূরে সরিয়ে এই পবিত্র দিনে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত আনন্দ ও সবরকম সুখ ও শান্তি দিয়ে ভরিয়ে তুলুন আপনার জীবন!! জয় শ্রী কৃষ্ণ !!!
২.ভগবান কৃষ্ণ এই জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আপনার বাড়িতে এসে আপনার জীবনকে আলোকিত করে তুলুন। শুভ জন্মাষ্টমী!
৩.শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মজয়ন্তী উদযাপন করুণ মহা সমারোহে; আনন্দে ভরা থাক প্রতিটি মুহূর্ত; শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদধন্য হোক আপনার পুরো পরিবার, এই কামনা করি মন থেকে বারংবার !!! শুভ জন্মাষ্টমী!
১.মাখন চোর; নন্দকিশোর , বেঁধে রেখেছে যে ভালোবাসার ডোর, সেই বন্ধন যেন থাকে অটুট , সেই আশীর্বাদ কোরো সবার ওপর!! জন্মাষ্টমীর হার্দিক শুভকামনা আর আন্তরিক অভিনন্দন !!!
২.জন্মাষ্টমীর এই শুভ দিনে প্রার্থনা করি আপনার জীবন শান্তি, ভালবাসা, সুখ এবং সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক!!!
৩.কানহা রে, নন্দ নন্দন, পরম নিরঞ্জন, হে দুঃখ ভঞ্জন ॥ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন॥
১.শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ নিয়ে আপনার জীবনে প্রেম, সুখ এবং হাসি থাকুক। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে জন্মাষ্টমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
২.এই জন্মাষ্টমী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে শান্তি এবং সুখের সাথে আশীর্বাদ করুন। শুভ কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী!
৩.হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ … কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে … আপনাকে শুভ ও আশীর্বাদপ্রাপ্ত কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা!
১.ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুণ্য জন্মতিথিতে আসুন সবাই আমরা তাঁর কাছে করজোড়ে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তির আশীর্বাদ প্রার্থনা করি!!! জয় শ্রী কৃষ্ণ !!!
২.এই বিশেষ দিনটিতে , আপনার সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণতা পাক এবং শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে ও আপনার প্রিয়জনদের প্রতি তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করুন! জন্মাষ্টমীর হার্দিক শুভকামনা!!!
৩.নন্দ গোপালের আশীর্বাদে তোমার জীবন সাফল্য আর আনন্দে ভরে উঠুক। শুভ জন্মাষ্টমী।
১. জন্মাষ্টমীর মতোই আনন্দময় হোক প্রতিটি দিন। সুন্দর হোক তোমার জীবন, পূরণ হোক মনের সব চাওয়া পাওয়া। শুভ জন্মাষ্টমী।
২.গোপাল ঠাকুরের আশীর্বাদে তোমার জীবনে চির সুখ ও শান্তি আসুক, এবং সাফল্যের সব রাস্তা তোমার জন্য খুলে যাক। শুভ জন্মাষ্টমী।
৩.শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে পৃথিবী থেকে দূরীভূত হোক সব দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, পাপ-অন্যায়, জন্মাষ্টমীর পূণ্য-পাবনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই…
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণের কিছু উপদেশ
১.“মন অস্থির এবং সংযত করা কঠিন, কিন্তু এটি অনুশীলনের দ্বারা বশীভূত হয়।” – শ্রীকৃষ্ণ
২.“আপনার যা করতে হবে তা করুন, কিন্তু লোভ দিয়ে নয়, অহং দিয়ে নয়, লালসা দিয়ে নয়, হিংসা দিয়ে নয় বরং ভালবাসা, সহানুভূতি, নম্রতা এবং নিষ্ঠা দিয়ে।” – শ্রীকৃষ্ণ
৩. “আপনার কাজ করার অধিকার আছে, কিন্তু কাজের ফল কখনই পাবেন না। পুরস্কারের স্বার্থে আপনার কখনই কর্মে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়, অথবা আপনার নিষ্ক্রিয়তার জন্য আকুল হওয়া উচিত নয়।” – শ্রীকৃষ্ণ