অর্পিতা বনিক :ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন হয়েছিল ১৯৪২ সালে। তার পাঁচ বছর পর ১৯৪৭ সালে ভারত পেয়েছিল স্বাধীনতা। ১৯৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সোনার ভরি অর্থাৎ দশ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৪৪ টাকা। পাঁচ বছর পর দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন সোনার দাম বেড়ে এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এখন তা কত গুণ হয়েছে, তা হিসেব করলে চমকে যাবেন! দেখুন ভিডিও
বর্তমানে ভারতীয় বাজার মূল্যে সোনার দাম ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২৪ ক্যারেট সোনার দাম অর্থাৎ পাকা সোনার দাম বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ২২ ক্যারেট সোনা অর্থাৎ হলমার্কযুক্ত গহনা সোনার দাম ৫৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ সোনার দাম স্বাধীনতার বছরে যা ছিল এই ৭৫ বছর পার করে তা বেড়েছে ৬০০ গুণ।
এখন আপনার ১০ গ্রাম সোনা কিনতে যে টাকা খরচ হবে, সেই টাকায় স্বাধীনতার সময় প্রায় ৬ কেজি সোনা কিনতে পারতেন। এখনকার সোনার ভরি যদি ৬০ হাজার টাকা হয়, তখন অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে সেই টাকায় আপনি ৬০০ ভরির বেশি সোনা কিনতে পারতেন। ৬০০ ভরি সোনা মানে ৬০০০ গ্রাম। অর্থাৎ প্রায় ৬ কেজি।
ভারতে সোনার গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পুজো-পার্বনে সোনার গয়নার একটা তাৎপর্য রয়েছে। আর ভারত হল সবথেকে বেশি সোনা আমদানি করা দেশ। মার্কিন ডলারের উত্থান-পতনের উপর নির্ভর করে সোনার দামের স্থিতিশীলতা। ভারতে যখন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে সোনার চাহিদা অন্যতম, তখন দাম যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
স্বাধীনতার সময়ে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সে অর্থে ঘটেনি। বেশিরভাগই দরিদ্রশ্রেণির মানুষ বাস করতেন ভারতে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভারত উন্নতশীল অর্থনীতির দেশ হতে শুরু করতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সোনার দাম। ১৯৭০ দশক থেকে ১৯৮০ দশকে সোনার ভরি বেড়ে হয় ১৮৪ টাকা থেকে ১৩৩০ টাকা। এর মাঝে মাঝে আবার সোনার দাম কমেছে। ১৯৯৬ সালে ৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সোনার দাম। আবার ১৯৯৮-এ তা কমে ৪ হাজারে নেমে গিয়েছিল।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দী শুরু হতেই উত্তরোত্তর বেড়েছে সোনার দাম। সোনার দাম বিগত ২০-২২ বছরের মধ্যে ৫ হাজার থেকে বেড়ে ৬০ হাজার হয়েছে। অর্থাৎ ২০ বছরে বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। সোনা আক্ষরিক অর্থেই সম্পদ হয়ে উঠেছে অলঙ্কারের তকমা ঝেড়ে ফেলে। স্বাধীনতার সময়ের দাম আর আজকের দামে তাই আকাশ- পাতাল তফাৎ স্পষ্ট হয়েছে।