গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবার রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে পৌঁছন তিনি। হেলিকপ্টারে আধ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগর হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে পৌঁছে যান তিনি। সেখান থেকেই একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।
আজ প্রথমে পুজো দেন কপিলমুনির মন্দিরে। তারপর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জ্ঞানদাস মোহন্তের সঙ্গেও তাঁর দেখা করেন। এরপর একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি। ওখান থেকে যান ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্যালয়ে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ভবন ‘ঊর্মিমুখর’-এ থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী।
এক সময় যে ভারত সেবাশ্রমের ভূমিকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন, বছর ঘুরতেই সেই সংঘেরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ মুখ্যমন্ত্রী। বললেন ‘প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে ভাবে তাদের ভলান্টিয়াররা কাজ করে তার কোনও বিকল্প নেই। রামকৃষ্ণ মিশন যেমন শিক্ষায় এগিয়ে, ভারত সেবাশ্রম সংঘ তেমন সেবায় এগিয়ে। ঝড়, জল, সাইক্লোন, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর কাউকে না পেলে ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আপনারা পাবেনই।’
সোমবার গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সংঘে গিয়ে সংঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের ছবিতে আরতি করেন মমতা। এরপর মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করায় সংঘকে ধন্যবাদও জানান মমতা। বলেন, ‘ভারত সেবাশ্রম সংঘ শুধু গঙ্গাসাগর মেলা নয়, তাদের প্রচুর ভলান্টিয়ার এখানে কাজ করে। গঙ্গাসাগরে তারা যে ভাবে কাজ করে সে জন্য ভারত সেবাশ্রম সংঘকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
যদিও সংঘের আশ্রমে দাঁড়িয়ে তাদেরই একাংশকে বিঁধতে ছাড়লেন না। নিজস্ব ঢঙে মমতা বলেন, ‘একটা দুটো জায়গায় কয়েকজন লোক আছেন যাঁরা হয়তো কাজটা করেন না। ৯৯ শতাংশ লোক কাজটা করেন। আমি তাঁদের সবাইকে, স্বেচ্ছাসেবক, তীর্থযাত্রীকে আমার প্রাণ ভরা অভিনন্দন জানাই।’
যে সংঘের নামের সঙ্গেই ‘সেবা’ জড়িয়ে রয়েছে, তারই একাংশ নাকি সেবার কাজ করেন না। এমনই অভিযুক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখানেই প্রশ্ন উঠতে পারে, আকারে-ইঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী কাদের দিকে আঙুল তুললেন? অনেকের মতে, ভারত সেবাশ্রম সংঘের এমন অনেকেই আছেন যাঁরা মমতার চক্ষুশূল। কয়েকটা ঘটনা সামনে আনলে বোঝা যাবে। প্রথমত, কার্তিক মহারাজ। যাঁর উদ্দেশে মমতা বলেছিলেন, ‘ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম । কিন্তু যিনি তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেবেন না বলেন, তাঁকে সাধু বলে মনে করি না ৷ এর অর্থ উনি সরাসরি রাজনীতি করে দেশটার সর্বনাশ করছেন। আমি চিহ্নিত করেছি কে কে করেছেন।’ যার পরপরই সমালোচনা শুরু হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতিতে।
এরই রেশ ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজ। কটাক্ষ করে বলেন, ‘উনি একটা পাগলি। তাঁর কথার কোনও ঠিক নেই। মুখ্যমন্ত্রীর যেটা বলা উচিত, সেটা তিনি বলেন না। বরং, প্রধানমন্ত্রীকে উলটোপালটা কথা বলছেন। এটা মাথা খারাপ ছাড়া আর কী হবে!’
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির, সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিধায়কের সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন স্বামী প্রদীপ্তানন্দজি। যিনি ভারত সেবাশ্রম সংঘের বেলডাঙা শাখার প্রধান। ঘটনার পর থেকে তিনিও মমতার চক্ষুশূল।
আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও বিভাগীয় আধিকারিকরা পৌঁছে গিয়েছেন গঙ্গাসাগরে। মেলা নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। জানা গেছে, সাগরে পৌঁছনোর মূল প্রবেশদ্বার কাকদ্বীপের লট-৮, কচুবেড়িয়া বাস স্ট্যান্ড, বেণুবন লঞ্চ ঘাট, গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ ও মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজ়িংয়ের কাজ কেমন চলছে, তা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় মন্ত্রীরা। সমস্ত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন তাঁরা।
সাগরে হেলিপ্যাড ময়দানের পাশে পুণ্যার্থীদের জন্য ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে কিছু রাস্তা, কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ১০০ শয্যার হস্টেল, পাথরপ্রতিমায় জেটি-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।